E-Paper

আধার না থাকায় রেশন অমিল, মৃত্যুতে প্রশ্ন

শুক্রবার বাঁকুড়া ১ ব্লকের আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের কুমিদ্যা গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ দাসমোদকের (৬৫) মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী কল্পনার দাবি, তাঁদের স্বামী-স্ত্রী ও ছেলের আধার কার্ড না থাকায়, বছরখানেক ধরে রেশনের সামগ্রী পাচ্ছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৬
মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী, ছেলে, নাতি এবং পুত্রবধূ।

মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী, ছেলে, নাতি এবং পুত্রবধূ। —নিজস্ব চিত্র।

সরকারি পরিষেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকায় এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে, এই সব কর্মসূচির উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। পরিবারের দাবি, দীর্ঘক্ষণ খেতে না পেয়েই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের। আধার কার্ড না থাকায় পরিবারটি রেশন পাচ্ছিল না বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

শুক্রবার বাঁকুড়া ১ ব্লকের আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের কুমিদ্যা গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ দাসমোদকের (৬৫) মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী কল্পনার দাবি, তাঁদের স্বামী-স্ত্রী ও ছেলের আধার কার্ড না থাকায়, বছরখানেক ধরে রেশনের সামগ্রী পাচ্ছেন না। সরকারি ভাতাও পান না। স্বামী আগে মিষ্টির দোকানে কাজ করলেও, অসুস্থতার কারণে এক বছর ঘরে বসেছিলেন। তখন থেকেই চরম অনটন। কল্পনার কথায়, ‘‘ছেলে কোনও কোনও দিন খাবার দেয়। না হলে গ্রামের লোকের কাছে চাই। সব দিন তা-ও জোটে না। মৃত্যুর আগের দিন দুপুরে স্বামী কেবল মুড়ি খেয়েছিল। রাতে খালি পেটে জল খেয়ে ঘুমিয়েছিল।” তাঁর ছেলে সোমনাথ দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘‘সব দিন কাজ জোটে না। তাই সব দিন বাবা-মাকে খেতে দিতে পারি না।”

সোমনাথের দুই সন্তান। তাঁর স্ত্রী পিঙ্কির রেশন কার্ড, আধার কার্ড রয়েছে বাপের বাড়ির ঠিকানায়। তিনি বলেন, ‘‘বাপের বাড়ি থেকে আমাকে রেশনের চাল দিয়ে যায়। সেটাই সম্বল।’’ আধার কার্ড করাননি কেন? সোমনাথের দাবি, ‘‘আধার কার্ড করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তার মধ্যেই বাবা চলে গেলেন।’’

বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার অভিযোগ, “তৃণমূলের সরকার যে মানুষের দুয়ারে পরিষেবা পৌঁছে দিতে ব্যর্থ, এই ঘটনা তার প্রমাণ।’’ যদিও কুমিদ্যা গ্রাম সুরক্ষা কমিটির তরফে রাধানাথ চট্টোপাধ্যায়, মুন্না চক্রবর্তীদের দাবি, “ওঁরা যাতে সরকারি সুবিধা পান, সে জন্য বহু বার আমরা তাঁদের আধার কার্ড তৈরিতে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা গরজ দেখাননি।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের তাপসী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আমি টোটো ভাড়া করে ওঁদের আধার কার্ড তৈরি করাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তাঁরা যেতে চাননি।’’ ওই গ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “ওঁদের অনেক বুঝিয়েও আধার কার্ড করাতে নিয়ে যেতে পারিনি।’’ ওই পরিবারের রেশন না পাওয়ার পিছনে কেন্দ্রের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ করানোর নীতিই দায়ী, দাবি করেন তিনি।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আধার কার্ড সংক্রান্ত সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানালে সহায়তা করা হয়। তবে কেউ যদি আধার কার্ড তৈরি করতে না চান, তা হলে প্রশাসন কী করবে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

bankura aadhaar card Ration

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy