Advertisement
E-Paper

কিছু রাজ্য নেতা অপদার্থ, ফের তোপ দুধকুমারের

তাঁর পদত্যাগপত্র আদৌ গৃহীত হবে কিনা, হলেও কবে, সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু, তাঁর ইস্তফা যেন দলে বিদ্রোহের আগল খুলে দিয়েছে। লাইন দিয়ে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন দলের আরও নেতা-কর্মী। আর তিনি, দুধকুমার মণ্ডল কিন্তু কোনও টেনশনে নেই! অন্তত চোখমুখ দেখে তা মনে হচ্ছে না। বরং দলে জেলার কর্মী-সমর্থকেরা এসে তাঁর প্রতি যে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা তিনি বেশ উপভোগই করছেন। কাগজেকলমে তিনি এখনও বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি (অন্তত ইস্তফাপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৭
দুধকুমারের ইস্তফার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কোটাসুরে। সোমবার ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

দুধকুমারের ইস্তফার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কোটাসুরে। সোমবার ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র আদৌ গৃহীত হবে কিনা, হলেও কবে, সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু, তাঁর ইস্তফা যেন দলে বিদ্রোহের আগল খুলে দিয়েছে। লাইন দিয়ে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন দলের আরও নেতা-কর্মী।

আর তিনি, দুধকুমার মণ্ডল কিন্তু কোনও টেনশনে নেই! অন্তত চোখমুখ দেখে তা মনে হচ্ছে না। বরং দলে জেলার কর্মী-সমর্থকেরা এসে তাঁর প্রতি যে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা তিনি বেশ উপভোগই করছেন। কাগজেকলমে তিনি এখনও বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি (অন্তত ইস্তফাপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত)। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব সোমবার জানান, তাঁরা দুধকুমার মণ্ডলের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। কিন্তু তা গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।

এই অবস্থায় তাঁর অনুগামীরা দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে দাবি করছেন, গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে সিউড়ি, সাঁইথিয়া, বোলপুর-সহ জেলার পুরসভায় ভাল ফল করার পর আসন্ন পুর-নিবার্চনে বিজেপি-কে ঘিরে যে প্রত্যাশার পারদ চড়ছিল, তা দুধকুমারের ইস্তফায় জোর ধাক্কা খেল। জেলার নেতা-কর্মীদের বড় অংশের এ-ও বক্তব্য, দলের উত্থান পর্বের শুরুতেই যদি এমন বেনজির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসে এবং দলের সভাপতিকেই যদি পদত্যাগপত্র পাঠাতে হয়, তাতে আর যাই হোক, মানুষের আস্থা অর্জন করা যায় না।

ঘটনা হল, রবিবার বিকালে দুধকুমারের পদত্যাগের পদক্ষেপ জেলা জুড়ে কর্মীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। জেলা সভাপতিকে স্বপদে বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই নিজেদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সোমবার দুধকুমারকে পদে বহাল রাখার দাবিতে পদত্যাগ করতে চেয়ে এবং গণ ইস্তফার হুমকি দিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব ও জেলার পর্যবেক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মযূরেশ্বর ২ ব্লক এলাকার নেতা-কর্মীরা। এ দিন ওই ব্লকের কোটাসুরে বিজেপি-র দু’নম্বর মণ্ডল কমিটির কার্যালয়ে সকাল থেকে ছিলেন দুুধকুমার। দিনভর সেখানে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর অনুগামীরা। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভও দেখান কিছু কর্মী। স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের জেলা কমিটির সদস্য তমাল মণ্ডল, সংশ্লিষ্ট মণ্ডল কমিটির সভাপতি প্রবীর মণ্ডল, ব্লক সভাপতি বাবলু মণ্ডল, মহিলা মোর্চার তৃপ্তি দাস এবং ময়ূরেশ্বর, ঢেকা, কুণ্ডলা, দশপলসা ,ষাটপলশা, কলেশ্বর ও উলকুণ্ডা অঞ্চল কমিটির সভাপতি-সহ বেশ কিছু নেতা-কর্মী পদত্যাগের চিঠিতে সই করেছেন।

বিজেপি-র তরফে বীরভূমের পর্যবেক্ষক রামকৃষ্ণ পাল অবশ্য বলেছেন, “ওই চিঠির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই মন্তব্য করতে পারছি না।” অন্য দিকে, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তমালবাবুর হুঁশিয়ারি,“ দলের দুর্দিনে দুধকুমার মণ্ডল কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। দলকে এই জেলায় টিকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁকে কী কারণে দল থেকে সরে আসতে হল, তা খতিয়ে দেখার পরে প্রদেশ নেতৃত্ব যদি তাঁকে দলে না ফেরায়, তাহলে আমরা পদ থেকে ইস্তফা দেব। দলও ছাড়ব!”

নিজের ইস্তফাপত্রে রবিবার দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের প্রতি গুরুতর কিছু অভিযোগ তুলেছিলেন দুধকুমার। এ দিনও নিজের অবস্থান থেকে তিনি সরে আসেননি। কোটাসুরের দলীয় অফিসে বসে তাঁর তোপ, “কিছু রাজ্য নেতা জেলা নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দলকে দু’ভাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলে আমাকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিচ্ছিল। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছিল। আমি সেই ক্ষতি রোধ করতেই পদত্যাগ করেছি।” রাহুল সিংহের প্রতি তাঁর ক্ষোভ, যাঁরা দল করতে গিয়ে মার খেয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তিন-তিন বার রাজ্য সভাপতি থেকেও তাঁদের জন্য ভাল কিছু বা উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি। দুধকুমারের আরও অভিযোগ, “রাজ্যের কিছু অযোগ্য অপদার্থ নেতা এ বার পুরভোটে টিকিট বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভরেছেন।”

দুধকুমার যে অভিযোগই করুন না কেন, এটাও ঘটনা যে, রাজ্য নেতৃত্ব এবং জেলা কমিটির বেশ কিছু নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে সম্প্রতি তিক্ততা ক্রমেই বাড়ছিল। জেলা থেকে তাঁর নামে বহু অভিযোগও গিয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। দু’তরফে সংঘাত চরমে পৌঁছনোয় পদত্যাগ করার জন্য দুধকুমারের উপরে চাপ বাড়ছিল। পাশাপাশি দুধকুমারের বিভিন্ন সময়ে করা মন্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলেই মত রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশের। বিভিন্ন বিষয়ে কোণঠাসা হয়ে শেষ অবধি তিনি-ই পদত্যাগের চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

২০১৩ সালেও একবার পদত্যাদের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন দুধকুমার। কিন্তু সেটা গৃহীত হয়নি। এ বার কী পদক্ষেপ করে দল, জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায়।

bjp dudhkumar mandal Birbhum Trinamol Rahul Sinha Anubrata Mondal Ram Krishna Paul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy