আবাসিকের মৃত্যু এই নেশামুক্তি কেন্দ্রেই। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
যে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানোর পরে যুবকের অপমৃত্যু ঘটে, সিউড়ির কড়িধ্যার সেই কেন্দ্রের বৈধ অনুমতিই নেই বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। রবিবার ওই ঘটনার পরে রাজ্যের সমাজ কল্যাণ দফতরের ডিরেক্টরের নির্দেশে সোমবার বিকেলে ওই কেন্দ্রে পরিদর্শনে যান জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অশোক পোদ্দার। তিনি বলেন, ‘‘ট্রাস্ট তৈরি করে সাব রেজিস্ট্রারের কাছে একটি রেজিস্ট্রেশন করানো ছাড়া, নেশামুক্তি কেন্দ্র তৈরির উপযুক্ত কোনও নথিই দেখাতে পারেননি কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ।’’
রবিবার জেলা সদর সিউড়ি ঘেঁষা কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের ছোড়া গ্রামের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিৎ ধীবরের (২৪) মৃত্যুর পরই তাঁর পরিবারের তরফে তাঁকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ তোলা হয়। সোমবার পর্যন্ত যদিও ওই ঘটনায় সিউড়ি থানায় পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে যুবকের মৃত্যুর পরই আদৌ ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্র বৈধ কি না, সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো আছে কি না, প্রশাসনের নজরদারি ছিল কি না এমন নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে।
সিউড়ির ওই কেন্দ্রের মালিক গালিব আলি খান সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর ভাগ্নে আপাতত কেন্দ্রটি দেখাশোনা করেন। ঘটনার পরে তিনি দাবি করেন, ওখানকার পরিকাঠামো ভাল ছিল। কড়িধ্যার উপপ্রধানও দাবি করেছিলেন কেন্দ্রটির অনুমোদন ছিল। পরিকাঠামোও ভাল ছিল। কিন্তু আধিকারিকদের পরিদর্শনের পর সেই দাবির সত্যতা মেলেনি। রবিবারের ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের বাকি ৪০জন আবাসিকও সেখান থেকে পালিয়ে যান।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইন্টিগ্রেটেড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর অ্যাডিক্ট’ বা উপযুক্ত নেশামুক্তি কেন্দ্র করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি অফ সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টের থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে হয়। মদ, ড্রাগ-সহ কোনও নেশার কবলে পড়লে যাতে কোনও আসক্ত ও তাঁর পরিবারের ক্ষতি না হয়, এবং সমাজে কুপ্রভাব যাতে না পড়ে, সেজন্য এই লক্ষ্যে উদ্যোগী হয় ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। প্রশাসন সূত্রে খবর, কোনও সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তেমন নেশামুক্তি কেন্দ্র গড়তে চাইলে, তাদের নানাবিধ শর্ত পুরণ করতে হয়। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পর অনুমোদন ও সরকারি সহায়তাও মেলে। যেমন
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, কাউন্সিলররা সেই কেন্দ্রে আছেন কি না, নেশার কবলে পড়া অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া উপযুক্ত কি না এমন নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়। সেগুলি যথাযথভাবে আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখার পর জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সে ব্যাপারে সুপারিশ করে। পরে সেগুলিতে নজরদারি করে।
জেলা সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, সিউড়ির ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র এমন কোনও অনুমোদন নেয়নি। শুধু সিউড়ি কেন, জেলায় এমন একটিও নেশা মুক্তি কেন্দ্র নেই যেটি মিনিস্ট্রি অফ সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টে অনুমোদিত ইন্টিগ্রেটেড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর এডিক্ট (আইআরসিএ) নেশা মুক্তি কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বৈধ ভাবে না হলেও জেলা জুড়ে
একগুচ্ছ নেশামুক্তি কেন্দ্র চলছে অবৈধ ভাবেই। সিউড়ির ওই ঘটনার পর অবৈধ কেন্দ্রগুলিকে চিহ্নিত করে নোটিস করে ডেকে পাঠানোর কথা ভাবছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy