Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
রাজবাড়ির রথের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন বাসিন্দারা

প্রসাদ খেয়ে রশিতে টান

আধ শতকের এই ছবি এখনও অমলিন মানবাজার থানার পাথরমহড়া রাজবাড়িতে। বদলেছেন শুধু কুশীলবেরা। এখন রাজবাড়ির প্রতিনিধি দেবাশিস নারায়ণ দেব রথের সঙ্গে হাঁটেন। ভিয়েনের দিকে কড়া নজর থাকে আশি পেরনো রঞ্জিত নারায়ণ দেবের। কোথাও কোনও ত্রুটি হওয়ার জো নেই।

পথে: পাথরমহড়া রাজবাড়ির রথ। নিজস্ব চিত্র

পথে: পাথরমহড়া রাজবাড়ির রথ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

রাজবাড়ির মন্দির চত্বরে বিশাল লাইন। কেউ গাছ তলায়, কেউ খোলা আকাশের নীচেই বসে পড়েছেন। পাতে পড়ছে খিচুড়ি, সব্জি, পায়েস, চাটনি। তদারকি করছেন খোদ রাজামশাই। কারও পাত খালি দেখলেই তাঁর ইশারায় চলে আসছে খিচুড়ির বালতি। তাঁর কড়া নজর, কেউ যেন আধপেটা খেয়ে না ওঠেন। তাতে জগন্নাথ কুপিত হবেন। তা ছাড়া রথ টানতে হবে তো! খালি পেটে কী আর রথ টানা যায়!

আধ শতকের এই ছবি এখনও অমলিন মানবাজার থানার পাথরমহড়া রাজবাড়িতে। বদলেছেন শুধু কুশীলবেরা। এখন রাজবাড়ির প্রতিনিধি দেবাশিস নারায়ণ দেব রথের সঙ্গে হাঁটেন। ভিয়েনের দিকে কড়া নজর থাকে আশি পেরনো রঞ্জিত নারায়ণ দেবের। কোথাও কোনও ত্রুটি হওয়ার জো নেই। তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শরীর আর তেমন সায় দেয় না। তবু হেঁশেলে গিয়ে বসি। মশলা-টসলা সব ঠিক ঠাক পড়ছে কি না দেখতে হবে তো।’’

জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরে সেই জাঁকজমক আর নেই। তবে ঐতিহ্যটা আছে। রথযাত্রার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এলাকার মানুষজনই। তাঁদের মধ্যে থেকে গড়া হয়েছে কমিটি। তাঁরাই খরচের দায়িত্ব সামলান।

এখনও রথের দিন তিনশোরও বেশি মৌজার লোকজনের নেমন্তন্ন থাকে রাজবাড়িতে। রেওয়াজটা ছিল, প্রজারা প্রসাদ খেয়ে রথের দড়িতে টান দেবেন। রাজবাড়ি থেকে জগন্নাথ রথে চড়ে বেরোবেন। এখনও বেরোন। মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তা পার হয়ে পোস্ট অফিস মোড়, পোদ্দার পাড়া চৌমাথা পেরিয়ে টাউন লাইব্রেরির পাশের মাঠে মাসির বাড়ি
যান জগন্নাথ। এখন রথের আগে পরে পাইক বরকন্দাজ নয়, পুলিশ থাকে। তবে তাদের করার কিছু থাকে না। পাথরমহড়া রথ উৎসব কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরাই সব দায়িত্ব সামলান।

কমিটির অন্যতম সদস্য বৈদ্যনাথ দত্ত বলেন, ‘‘শনিবার দুপুর থেকে রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রবিবার ভোর থেকে আরতি, কীর্তন। বেলা দুটো পর্যন্ত প্রায় ছ’হাজার মানুষ পাত পেড়ে খেয়েছেন। বিকেলেও রান্না চলছে। প্রসাদ না পেয়ে কেউ যেন ফিরে না যান সেটাই আমরা শুধু নজর রাখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ratha Yatra Festival রথ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE