দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রতিবাদে গ্রামবাসীদের পথ অবরোধে আটকে পড়েছিলেন বিএ পরীক্ষার্থীরা। শেষে অবরোধ সরাতে আসা পুলিশই নিজেদের গাড়িতে তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিল।
শনিবার পুরুলিয়ার হুড়ায় ঘটনাটি ঘটে। সকাল ৭টা নাগাদ পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কে হুড়ার জামবাদ মোড়ের কাছে চাল বোঝাই ট্রাক বেসামাল হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জনকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় স্থানীয় শ্যামনগর গ্রামের পানু রায়ের (৬০)। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান জামবাদের আরও এক জন। নাম শেখ হাকিম (৬০)। আহত হয় নবম শ্রেণির এক ছাত্র।
এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ শুরু করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ব্যস্ত রাস্তার দু’পাশে সার-সার গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। আটকে পড়েন বিভিন্ন বাসে থাকা হুড়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজের বিএ (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থীরা। পুরুলিয়া শহরের জে কে কলেজে এ দিন তাঁদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল। বাস থেকে নেমে অবরোধকারীদের সরতে অনুরোধ করেন তাঁরা। কিন্তু বারবার অনুরোধেও কাজ হয়নি।
পরীক্ষার্থী তাপস পরামানিক, পূজা মুদি, ময়না দত্তেরা বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা। সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫ জন ছিলাম। কখন অবরোধ উঠবে, আদৌ সময়ের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারব কি না, তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।’’ ঘটনাস্থল থেকে পুরুলিয়া শহরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। পরীক্ষার্থীদের ছাড় দিতে হুড়া থানার পুলিশকর্মীরা অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাতে লাভ হয়নি। এক পুলিশকর্মীর দাবি, ‘‘কয়েক জন অবরোধকারী উল্টে সটান বলে দেন, ওঁদের পরীক্ষা দিতে হবে না। বরং অবরোধে যোগ দিক।’’
খবর পেয়ে জেলা পুলিশ লাইন থেকে বাস নিয়ে কিছু পুলিশকর্মী চলে আসেন। উল্টো দিক থেকে এসে সেটি অবরোধের পিছনে, পুরুলিয়া শহরের দিকে দাঁড়ায়। হুড়া থানার ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় পরীক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে ওই বাসে তুলে দেন। পরীক্ষার্থীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। সাড়ে ৮টা নাগাদ বাসটি পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে রওনা হয়। এর কিছু ক্ষণ পরেই অবরোধ উঠে যায়।
লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজের অধ্যক্ষ কিঙ্করচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ সময়ে ছাত্রছাত্রীদের পৌঁছে দিয়েছে বলে রক্ষা। তা না হলে যে কী হতো, কে জানে! পুলিশকে ধন্যবাদ।’’ নানা ঘটনায় নিছক দর্শকের ভূমিকায় থাকার অভিযোগ পুলিশের ক্ষেত্রে নতুন নয়। সে ক্ষেত্রে এই তৎপরতা কি বিরল নয়? পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বিষয়টিকে তত বড় করে দেখতে রাজি নন। তিনি শুধু বলেন, ‘‘এটা আমাদের দায়িত্ব। পুলিশ তার কাজ করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy