Advertisement
E-Paper

বিক্রিবাটা বন্ধ, ভাবাচ্ছে ভাত-কাপড় আর লোন

বাড়ির উঠোনে ভাত বসিয়ে দিয়ে উদাস চোখে স্বামীর দিকে চেয়েছিলেন আঙ্গুরা বিবি। অদূরে মানুষটা তখনও টিনের জোড়ায় রিপিট লাগাতে ব্যস্ত। সেই সকাল থেকে টানা কাজ করে এই শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে আব্দুল খালেকের কপালে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২৬
কিনবে কে? টিনের টোকা বানাতে ব্যস্ত আব্দুলেরা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

কিনবে কে? টিনের টোকা বানাতে ব্যস্ত আব্দুলেরা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

বাড়ির উঠোনে ভাত বসিয়ে দিয়ে উদাস চোখে স্বামীর দিকে চেয়েছিলেন আঙ্গুরা বিবি। অদূরে মানুষটা তখনও টিনের জোড়ায় রিপিট লাগাতে ব্যস্ত। সেই সকাল থেকে টানা কাজ করে এই শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে আব্দুল খালেকের কপালে। একটু আগেই হাতুড়ি আর ছেনি নিয়ে ৭২ বছরের বৃদ্ধ স্বামীর কাজে সাহায্য করছিলেন আঙ্গুরা। এখন একটু জিরিয়ে নেওয়া। সেই অবসরে ভাতটুকু ফুটিয়ে নেওয়া। যাই হোক, দুটো খেতে তো হবে!

কী এত ভাবছেন?

প্রশ্নটা শেষ হল না। তার আগেই ঝরে পড়ল একরাশ অভাব, অভিযোগ। সরকারের প্রতি ক্ষোভ। বললেন, ‘‘কী ভাবে সংসার চলছে আল্লাই জানে! রোজ হাড়ি চড়বে কী ভাবে সেই নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। রোজ জিনিস তৈরি করছি, বিক্রি করব কোথায় জানি না।’’ চোখের কোণ চিক চিক করে আঙ্গুরার।

নোট হয়রানিতে আঙ্গুরা-আব্দুলের মতোই রাজ্যের গাঁ-ঘরে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পীদের এখন নাজেহাল অবস্থা। আতান্তরে পড়েছেন নলহাটি থানার মহেশপুর গ্রামের টিনের তৈরি টোকা, ড্রাম, বাক্স তৈরির কারিগররা। নোট হয়রানিতে গোটা গ্রামে ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে। কেবল এই গ্রাম নয়, জেলায় নানা প্রান্তে একই ছবি। তা শুধু জেলা কেন, দেশের ছবিটাই তো কমবেশি এক।

নলহাটি থানার মহেশপুর গ্রামের এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, টিনের টোকা তৈরির পূর্বপুরুষের ব্যবসা। সেই কাজ করেই আব্দুলেরা দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আড়াই কাঠা জমিও কিনেছেন। এখন দুই ছেলে আলাদা সংসার পেতেছে। কিন্তু, জাত ব্যবসা ছেড়ে বেরোয়নি। রাজ্যের বাইরে টিনের টোকা, ড্রাম, বাক্স তৈরি করেন। এত দিন চলছিল ভালই। দুম করে একটা সিদ্ধান্তে সব কিছু ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে। আব্দুলের কথায়, ‘‘ফেরি করে বিক্রি করি। কিন্তু কোথায় বিক্রি করব? কে কিনবে? মানুষে‌র হাতে তো টাকাই নেই!’’

পরিস্থিতি এমনই যে, ভিন্ রাজ্যে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন যাঁরা, এখন বাড়ি ফিরেছেন তাঁরাও। মহেশপুর গ্রামের অধিকাংশ যুবক সম্প্রতি নিজেদের গ্রামে ফিরেছেন। নিপু শেখ নামে মহেশপুর গ্রামের এক যুবক জানালেন, নেপাল সীমান্ত লাগোয়া বিহারের সীতামারি জেলার সোদপুরে ঘর ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টিনের তৈরি টোকা, বাক্স, ড্রাম তৈরি করছেন। গ্রামের দশ জন যুবক সেই কাজ করছিল। নোট বাতিলের জেরে সেই ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি চলে আসতে হয়েছে।

নিপুর মতো আহমেদ শেখও বিহারের সীতামারি জেলা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন। কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে ইব্রাহিম শেখ, বিহারের বক্সা থেকে সেলিম শেখ, উড়িশা থেকে আমির হোসেনও। ভিন্ রাজ্য ছাড়াও উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট থেকে বাড়ি ফিরেছেন কাদির শেখ। সকলেরই এক রা। নোটের ধাক্কায় বিক্রি বাটা এক ধাক্কায় কমেছে। মহাজন কাঁচামাল দিতে চাইছে না। ব্যবসাও চলছে না। ঘরভাড়া মেটানোর পয়সাটুকুও নেই।

এঁদের কেউ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। বেকায়দায় তাঁরাও। মহেশপুর গ্রামের যুবক আবু শেখ যেমন। বললেন, ‘‘নলহাটির এক ব্যাঙ্ক থেকে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন শোধ করব কী করে?’’

এর উত্তর দেবে কে?

Demonetisation Cottage industry Small industry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy