Advertisement
E-Paper

ছাত্রের মারণরোগ, পথে বন্ধুরা

বোলপুর লায়েকবাজারের ছেলে দেবরাজ সেন। ২০১৫ সালে বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিলেন। যে ছেলেটির আর পাঁচটা বন্ধুর মতোই কলেজে পড়ার কথা, ঠিক সেই সময়েই ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫০
সংকল্প: অর্থসংগ্রহে পথে পড়ুয়ারা। সোমবার বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

সংকল্প: অর্থসংগ্রহে পথে পড়ুয়ারা। সোমবার বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

শহরের ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দিল্লিতে চিকিৎসাধীন। ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। তা রুখতে অস্থিমজ্জা স্থানান্তরের (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট) জন্য লাগবে ৩০ লক্ষ টাকা। সেই টাকা জোগাড় করতে মাথায় হাত পড়েছে পরিবারের। এই অবস্থায় সহায় হল বোলপুরের জনা ষাটেক তরুণ-তরুণী। পদযাত্রা, পথসভা, দেওয়ালে পোস্টার থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের আর্জি— সবই করছেন তাঁরা। এগিয়ে আসছেন এলাকার মানুষও।

বোলপুর লায়েকবাজারের ছেলে দেবরাজ সেন। ২০১৫ সালে বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিলেন। যে ছেলেটির আর পাঁচটা বন্ধুর মতোই কলেজে পড়ার কথা, ঠিক সেই সময়েই ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়ালে ওই মারণরোগের কথা জানায়। শুরু হয় চিকিৎসা। টানা ১১ মাস চিকিৎসার পরে কিছুটা সুস্থ হলে ছন্দে ফেরে জীবন। বোলপুর কলেজে ভর্তি হন দেবরাজ। কিন্তু, দ্বিতীয় সেমেস্টারের মূল পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাত, পা, মুখ বেঁকে যেতে থাকে। আবার মুম্বই নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, এর থেকে রেহাই পেতে অস্থিমজ্জার স্থানান্তর ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু, নির্দিষ্ট বেড সেখানে না মেলায় শেষ পর্যন্ত দিল্লির রাজীব গাঁধী ক্যানসার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে দেবরাজকে নিয়ে যান পরিবারের লোক। শুরু হয় কেমো থেরাপি। তিন সপ্তাহ আগেই কেমো শেষ হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হলে অস্থিমজ্জা স্থানান্তর করতে চান চিকিৎসকেরা। কিন্তু, তার আনুমানিক খরচ ৩০ লক্ষ টাকা।

দেবরাজের বাবা দেবব্রত সেন জানান, গত দু’তিন মাসে শুধু কেমো থেরাপিতেই খরচ হয়েছে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। চারটি সাধারণ কেমো দিতে হয়েছে দেবরাজকে। যার প্রত্যেকটির দাম প্রায় দু’লক্ষ টাকা। সংক্রমণ কমানোর জন্য ‘মিথোটেক্স’ নামের একটি বিশেষ কেমো তাঁকে দেওয়া হয়েছে। যার প্রত্যেকটির দাম প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এর পর বেড ভাড়া, চিকিৎসক, ওষুধ, নার্সের আলাদা খরচ তো রয়েইছে। দেবব্রতবাবু বললেন, ‘‘এত দিনে সমস্ত পুঁজি শেষ। এর পরও ৩০ লক্ষ টাকা লাগবে শুনে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’’

তা জেনেই পাশে দাঁড়িয়েছেন বোলপুরের একদল তরুণ-তরুণী। স্কুল, কলেজ, পাড়া, দোকান, ফ্ল্যাট, রাজনৈতিক মহল সব জায়গায় সাহায্যের জন্য আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। ব্যবহার করছেন সোশ্যাল মিডিয়াকেও। তাঁদেরই এক জন জানালেন, রবিবার যখন তাঁরা পদযাত্রা করছিলেন, সেই সময় এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর পুরো মাসের বেতন দেবরাজকে সাহায্যের জন্য তুলে দেন। এ ভাবেই এগিয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ। সোমবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এক লক্ষ টাকা তুলে দেন।

এত কিছু তাঁকে ঘিরেই—প্রথমে বিশ্বাস হয়নি দেবরাজের। সোমবার দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘যাঁরা আমার জন্য প্রাণপাত করছেন তাঁদের সবাইকে তো চিনিও না! তবু আমার জন্য এত কিছু করছে জেনে বাঁচার ইচ্ছেটা বেড়ে গেল। আমি বাঁচতে চাই। সুস্থভাবে বোলপুর ফিরে যেতে চাই।’’ সেই জন্যই তো লড়াই, জানাচ্ছে বোলপুরের তরুণ, তরুণীরাও।

Cancer Student Money Treatment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy