Advertisement
E-Paper

মানুষের কাজ করতে চান সিউড়ির সন্দীপ

শুক্রবার প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল। এ বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে সফল চার জনের অন্যতম সন্দীপ। ২০১৬ সালে ‘ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস’ পরীক্ষায় সফল হয়ে এই মুহূর্তে তিনি হায়দরাবাদে রেলের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২১
গর্বিত: বারুইপাড়ার বাড়িতে সন্দীপের পরিবার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

গর্বিত: বারুইপাড়ার বাড়িতে সন্দীপের পরিবার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

চাই একাগ্রতা, ইচ্ছাশক্তি। সঙ্গে অধ্যবসায়। গঞ্জ এলাকা, বাংলা মাধ্যম স্কুল, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা— এ সবের কোনওটাই যে স্বপ্নের পথে অন্তরায় নয়, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হয়ে তাই প্রমাণ করলেন সিউড়ির যুবক সন্দীপ গড়াই। তাঁর র‌্যাঙ্ক ৭৬১।

শুক্রবার প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল। এ বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে সফল চার জনের অন্যতম সন্দীপ। ২০১৬ সালে ‘ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস’ পরীক্ষায় সফল হয়ে এই মুহূর্তে তিনি হায়দরাবাদে রেলের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।

ইচ্ছা ছিল আইএএস অফিসার হওয়ার। সেই স্বপ্ন সফল হওয়ায় খুশি সন্দীপ। তাঁর পরিবারও। রবিবার সিউড়ির বাড়িতে বসে তাঁর বাবা সন্তোষ গড়াই, মা দীপালিদেবী বলেন, ‘‘ছেলে এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মা-বাবার কাছে এর থেকে বেশি আনন্দের কী হতে পারে!’’

তবে এগোনোর পথটা মসৃণ ছিল না সিউড়ির ওই তরুণের। লাভপুরের দ্বারকা থেকে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্যই সিউড়ির বারুইপাড়ায় চলে আসেন সন্তোষবাবু। জামাকাপড় তৈরির ব্যবসা করে ছেলে সন্দীপ ও মেয়ে অম্বিকাকে সিউড়ির দুই বাংলা মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করান। নিম্নবিত্ত পরিবারে তেমন করে টিউশনও পড়াতে পারেননি ছেলেকে। সিউড়ি বিদ্যাপীঠ স্কুল থেকে ২০০৬ সালের মাধ্যমিকে ৯১ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে উচ্চমাধ্যমিকে জেলার সেরা হয়ে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন সন্দীপ। সন্তোষবাবু জানান, জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়ে বেসু (এখন শিবপুর আইআইএসটি) থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন তাঁর ছেলে। তার পর দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন। কিন্তু সেখানেই থামতে চাননি সন্দীপ। ২০১৫ সালেই তিনি বসেন আইইএস পরীক্ষায়। ওই পরীক্ষায় সফল হওয়া আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল তাঁকে।

সে কথা বলছেন সন্দীপ নিজেও। হায়দরাবাদ থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘কলেজে পড়ার সময়ই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার কথা বিশদে জানতে পারি। টান অনুভব করতে থাকি। মফঃস্বলের ছেলে হিসেবে কিছুটা হীনমন্যতা ছিল। কিন্তু আইইএস পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরই ঠিক করি, এটাও সম্ভব।’’

ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে প্রশাসনিক পদে? সন্দীপ বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজের সুযোগ এখানে বেশি অনেক বেশি। অভিজ্ঞতা হবে প্রচুর। এটাই তো চেয়েছিলাম।’’

কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি? সন্দীপ জানান, রেলের গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হত বলে নিয়ম করে পড়াশোনা করা যায়নি। তবে অফিসে, ট্রেনে, বাসে, বাড়িতে যখনই সময় হয়েছে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। কোনও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কী? সন্দীপের কথায়, ‘‘স্বচ্ছ ধারনা থাকলে তার খুব প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি না। তবে কয়েকটি মক টেস্ট দিয়েছি।’’

দাদার সাফল্যে সব চেয়ে খুশি বোন অম্বিকা। তিনিও যথেষ্ট কৃতী। ইতিমধ্যেই দু’টি চাকরি পাওয়া হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের কর্মী তিনি। অম্বিকা বলেন, ‘‘নিম্নবিত্ত পরিবারে আমরা ভাইবোনের লক্ষ্য ছিল চাকরি করার এবং পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। দাদা সেই পথে এগিয়েছে। সফল হয়েছে। শুক্রবার সন্ধেয় মাকে যখন ফোন করে জানাল, আনন্দে মন ভরে যায়।’’

Civil Services Examination Sandeep Garai Suri সন্দীপ গড়াই
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy