প্রচারে বেরিয়ে হেঁসেলে ঢুকে পড়লেন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল । জয়পুরের কুসুমদিঘী গ্রামের রীতা রানার বাড়িতে । ছ্বিঃ অভিজিৎ অধিকারী ।
মাঝে চারটে বছর। স্বামীর জন্য ভোট প্রচারে গ্রামের পর গ্রাম চষে ফেলা সুজাতা মণ্ডল এ বার ছুটছেন নিজেকে জেতাতে। বদলে গিয়েছে শিবিরও। পদ্ম ছেড়ে তিনি এখন ঘাসফুলের প্রার্থী।
মামলার জেরে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞায় ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে পারেননি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। তখন স্বামীর দুর্দশার কথা তুলে ধরে সমবেদনার ভোট ইভিএমে টেনে আনতে একটানা প্রচার করেছিলেন সুজাতা খাঁ। সৌমিত্র দ্বিতীয় বারের জন্য সাংসদও হয়েছেন। তবে তারপর বদলে গিয়েছে সব কিছুই। সুজাতা গিয়েছেন তৃণমূলে। ছেড়ে এসেছেন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কও। এখন তিনি সুজাতা মণ্ডল।
গত বিধানসভা ভোটে আরামবাগ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুজাতা। তবে জিততে পারেননি। এ বার অবশ্য লড়াই ঘরের মাঠে। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রেরই জয়পুরের জেলা পরিষদের একটি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন সুজাতা। তাঁর লড়াই যেমন নিজের জন্য, তেমনই নিজের বিরুদ্ধেও বটে। আগে বিজেপির হয়ে ভোট চাওয়া সুজাতা এখন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় জনতার প্রশ্নের মুখে পড়ছেন আকছার। সম্প্রতি ময়নাপুর পঞ্চায়েতের ঝোড়দিঘি ডাঙাপাড়া গ্রামের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ভোট চাইতে আসা সুজাতাকে প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘আপনার স্বামী বিজেপির সাংসদ, আর আপনি তৃণমূল প্রার্থী! এতো ভালই দেখছি।” গোড়ায় অপ্রস্তুত সুজাতা কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসি টেনে বলেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোদ্ধা। অন্য কারও সঙ্গে আমার আর সম্পর্ক নেই।” রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী উত্তরাকে জড়িয়ে ধরে ভোটও চান। পরে উত্তরা বলেন, “লোকসভা ভোটে মেয়েটাকে স্বামীর জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রচারে দেখেছি। এখনও উদ্যমে খামতি নেই।’’
লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো মহিলাদের স্বনির্ভরতায় রাজ্য সরকার কী কী প্রকল্প এনেছে, তা বলতে বাড়ির হেঁশেলেও ঢুকে পড়ছেন সুজাতা। কখনও কড়াইয়ে হাতা-খুন্তি নেড়ে দিচ্ছেন, কখনও কলতলায় জল ভরতে আসা মেয়েদের কাছে সংসারের খোঁজ করছেন। সে বার আর এ বার, সুজাতার পোশাক-আশাক, সাজসজ্জায় কতটা তফাৎ, তা নিয়ে চর্চা চলছে মহিলা মহলেও।
কুসুমদিঘির বধূ রীতা রানা সুজাতার কাছে রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ জানান। সুজাতা বলেন, “আপনারা আগে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। ওরা জিতেছে বলেই রান্নার গ্যাস ও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমাদের ভোট দিয়ে দেখুন, সব ঠিক করে দেব।” কিন্তু বিজেপিকে তো আপনিই ভোট দিতে বলেছিলেন! সুজাতার দাবি, ‘‘আমি বললেও, বিজেপি সাংসদ কথা রাখেনি। ধাপ্পাবাজ।’’ যা শুনে সৌমিত্রের মন্তব্য, ‘‘উনি রাজনীতিতে এখনও অনেক অপরিণত। আগে ভোটে জিতে মানুষের কাজ করুন। তারপরে না হয় আমার বিরুদ্ধে বলবেন।’’
জয়পুরে কি পারবেন সুজাতা? তৃণমূলের কুসুমদিঘির বুথ সভাপতি বরেন ঘোষের দাবি, ‘‘গত লোকসভা ভোটেই তাঁর সহজে মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা আমাদের নজর কেড়েছিল। এখন তিনি আরও পরিণত। জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত।’’ যদিও বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহের কটাক্ষ, “স্বামীর উপর হওয়া অবিচারের বিরুদ্ধে এক স্ত্রীর লড়াইকে ১৯-এ মানুষ মর্যাদা দিয়েছিলেন। এখন নিজের সুবিধা বুঝে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। ফলে ফারাক অনেকটাই। মানুষও মেনে নেবেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy