E-Paper

শিবপুর: ক্ষতিপূরণ নিয়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ

কৃষকেরা জমির ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে প্রথমে কলকাতা হাই কোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

বাসুদেব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:০২
দাবি ছিল শিল্পের। কিন্তু, বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্প নয়, গড়ে উঠেছে গীতবিতান উপনগরী,

দাবি ছিল শিল্পের। কিন্তু, বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্প নয়, গড়ে উঠেছে গীতবিতান উপনগরী, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্রবাজার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

শিল্পের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন, বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হলেও বোলপুরের শিবপুর মৌজায় গড়ে ওঠেনি শিল্প। শিল্পের জন্য জমি দিয়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও মেলেনি বলে রাজ্য সরকারের অধিগৃহীত সে জমির মালিকদের। শিবপুর সংক্রান্ত মামলায় এ বার সুপ্রিম কোর্ট জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভাকে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের এই নির্দেশে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন শিবপুরের জমিদাতা কৃষকেরা।

বাম আমলে শিবপুর মৌজায় শিল্পের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও শিল্প হয়নি। তার পরিবর্তে ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো গীতবিতান আবাসন,বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্র বাজার এবং আইটি হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ওই জমিতে গীতবিতান আবাসন, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্রবাজারের মতো প্রকল্প গড়ে উঠেছে। জমিদাতা কৃষকেরা প্রথম থেকে দাবি করে এসেছেন, অধিগৃহীত কৃষিজমিতে আবাসন বা অন্য কিছু নয়, করতে হবে শিল্পই। যদিও তা হয়নি। শাসকদলের মদতে এই আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে একাধিকবার।

কৃষকেরা জমির ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে প্রথমে কলকাতা হাই কোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি উঠলে দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে আদালত চাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভাকে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে বলে। এর জন্য রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

মামলাকারীদের আইনজীবী শামিম আহমেদের দাবি, রাজ্য সরকার শিল্পের জন্য স্বল্পমূল্যে জমি নিয়ে ৭৪ গুণ দরে সেই জমি লিজ় দিচ্ছে। রাজ্যে সরকার সেটা কখনওই করতে পারে না। আদালতে মূলত এই অভিযোগই ছিল তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘এই মামলার প্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। আমরা আশাবাদী, সেখানকার মানুষেরা ন্যায় বিচার পাবেন।” বোলপুরের বিধায়ক ও রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ আদালতের রায় নিয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেননি। বলেছেন, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’

তবে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আশার আলো দেখছেন শিবপুরের জমিদাতারা।শেখ সেলিম, চন্দন দে বলছেন,“ যে জমি আমরা শিল্পের জন্য দিয়েছি, ভেবেছিলাম সেখানে শিল্প হবে, কর্মসংস্থান হবে। বাস্তবে তা হয়নি। আমরা জমির উপযুক্ত ক্ষতিপুরণও সে সময় পাইনি। তাই আদালতের এই নির্দেশে আমরা আবার আশার আলো দেখতে শুরু করেছি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আশা করি, সুবিচার মিলবে।’’ আর এক জমিদাতা ইসরাইল মণ্ডলের দাবি, “আমার তিন একর জমি ছিল। ২ একর শিল্পের জন্য দিই। সেই সময় তার প্রকৃত দাম পাইনি। এখন প্লট করে জমি লিজে দেওয়া হচ্ছে। এই জিনিস আমরা কখনও চাইনি। আদালতের রায়ে ভরসা পাচ্ছি।” শিবপুর কৃষক সংগ্রাম মঞ্চের প্রতিনিধি মির্জা জসিমউদ্দীন বলেন, “ওই জমিতে শিল্পই ছিল আমাদের দাবি। তা না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। আমাদের আশা, দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে এবং আদালত কৃষকদের কথা ভেবে তাঁদের পাশে থাকবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bolpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy