Advertisement
০২ মে ২০২৪
GI Tag for Korial and Garad Saree

জেলার শাড়ির স্বীকৃতিতে খুশি

বিষয়টি জানাজানি হতেই খুশির রেশ বীরভূমে। মুরারইয়ের ওই তাঁতশিল্পীরা বলছেন, কাজের স্বীকৃতি পেলে আনন্দ হবেই।

পাইকর থানার গগনপুর গ্রামে গরদ শাড়ি বুনছেন শিল্পী।

পাইকর থানার গগনপুর গ্রামে গরদ শাড়ি বুনছেন শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:০০
Share: Save:

টাঙ্গাইল, গরদ এবং করিয়াল— বাংলার তিনটি হ্যান্ডলুম শাড়ি ভৌগোলিক স্বীকৃতি (জিআই) তকমা পেয়েছে। সেই খবর জেনে খুশি মুর্শিদাবাদ লাগায়ো বীরভূমের মুরারই ১ ব্লকের পাঁচগেছিয়া, গগনপুর এলাকার তাঁতশিল্পীরা। কারণ, মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত গরদ ও করিয়াল শাড়ি তৈরি করেছেন বীরভূমের এই এলাকার বেশ কিছু তাঁতশিল্পী।

বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডেলে এই সুখবরের অনুভূতি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘‌বাংলার তিনটি হ্যান্ডলুম শাড়ি, নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানের টাঙ্গাইল, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের করিয়াল ও গরদ জিআই পণ্য হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁতশিল্পীদের দক্ষতা এবং পুরস্কৃত হওয়ার খবরে আমি গর্বিত। তাঁদেরকে আমার অভিনন্দন’।

বিষয়টি জানাজানি হতেই খুশির রেশ বীরভূমে। মুরারইয়ের ওই তাঁতশিল্পীরা বলছেন, কাজের স্বীকৃতি পেলে আনন্দ হবেই। তাঁরা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন হ্যান্ডলুম দফতর ও প্রশাসনকে। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের এই শিল্পীদের কাজের জিআই তকমা পাওয়ার লক্ষ্যে গত এক বছর আগে থেকে কাজ করেছে দুই জেলার প্রশাসন। বীরভূমের হ্যান্ডলুম ডেভেলপমেন্ট অফিসার বিকাশ চন্দ্র জানা বলেন, ‘‘ছবি ও ভিডিয়োয় শিল্পীদের কাজের প্রক্রিয়া ও নমুনা পাঠানো হয়েছিল। এলাকার করিয়াল ও গরদ শাড়ি যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতায়। অবশেষে শাড়ি দু’টির ভৌগোলিক স্বীকৃতি ভীষণ আনন্দদায়ক।’’

সিল্কের শাড়ির চাহিদা যথেষ্টই। জানা গিয়েছে, বীরভূমে রেশম সুতো থেকে দু’ধরনের শাড়ি তৈরি হয় মুরারই ১ ব্লকে। মূলত পলসা ও জাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচগেছিয়া, পলসা ও গগনপুর-সহ আশপাশের দু-একটি গ্রামের কিছু তাঁতশিল্পী এই কাজ করেন। প্রায় ৭০ জন তাঁতি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে, দক্ষতায় বেশি এগিয়ে কয়েক জন।

যাঁরা কলকাতায় গিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম গোরাচাঁদ দাস। পলসা গ্রামের বাসিন্দা গোরাচাঁদের কথায়, ‘‘৪০ বছর ধরে একটানা গরদের শাড়ি তৈরি করছি। জিআই তকমা পেয়ে খুবই ভাল লাগছে।’’ তানা ও ভরনা, এই দুই সুতোয় বোনা সাদা সিল্কের শাড়ির উপরে নকশা ফুটিয়ে তুলতে জাকার্ডের কাজও জানেন ওই শিল্পী। ভাল মানের একটা গরদের শাড়ির দাম উঠতে পারে ৯ থেকে ১২ হাজার টাকা। গগনপুর গ্রামের তাঁতশল্পী শরদিন্দু দাস বললেন, ‘‘৩৫ বছর ধরে গরদের শাড়ি বুনছি। পুরস্কৃতও হয়েছি। তবে, এই স্বীকৃতির স্বাদ আলাদা।’’

এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, একই রেশম বা সিল্ক সুতোয় করিয়াল শাড়ি তৈরি হয়। সাদা শরীরের দুই দিকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চির পাড় থাকে। বুনতে কমপক্ষে দিন সাতেক লাগে। খুবই সতর্কতার সঙ্গে বুনতে হয় এই শাড়ি। রেশম বা সিল্কের সুতোর জন্য কখনও নলহাটি, কখনও মালদহ কখনও বা বেঙ্গালুরুর উপর নির্ভর করতে হয়।

পাঁচগেছিয়া থেকে যে দুই কোরিয়াল শিল্পী কলকাতায় গিয়েছিলেন, সেই আবীর কৈথা ও হিরালাল বলিদা বলেন, ‘‘বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে এই কাজ করছি। খুব পরিশ্রম, ধৈর্য, দক্ষতার কাজ। সে কাজ আজ স্বীকৃতি পেয়েছে জেনে গর্বিত মনে হচ্ছে।’’ তাঁদের খেদ, তাঁরা মূলত সমবায় বা মহাজনের হয়ে কাজ করেন। মজুরি খুব কম। তাই এই ধরনের শাড়ি কতদিন তৈরি করতে পারবেন জানেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE