ঐরাবত: দুব জমিয়েছে স্কুল পড়ুয়া খুদেরা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
কেউ গায়ক, কেউ নাট্যকার, কেউবা কবি। সাংবাদিক থেকে গিটারিস্টও আছেন। কফিহাউসের আড্ডার গানটা অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু, সবার যাওয়া হয়ে উঠেনি সেই কফিহাউস। তাই মনে মনে আক্ষেপ একটা ছিল। সেটা ঘুচিয়ে দিয়েছে চয়নিকা।
শুরুতে অবশ্য আর পাঁচটা দোকানের মতো বই বিক্রিই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু, এক ভ্যানচালকই বদলে দিয়েছে সাইঁথিয়ার ওই বই বিপণির চরিত্র। এখন সেখানে গড়ে উঠেছে বই ঠেক। এলাকার শিল্পী, সাহিত্যিক থেকে পাঠকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘এই ঠেকটিই এখন মফঃস্বলের কফিহাউস হয়ে উঠেছে।’’ ঠেক থেকেই নিজের নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে পারস্পরিক আলোচনায় মেতে উঠেছেন তাঁরা।
২০০৬ সালে পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর বরুণ ভাণ্ডারীর উদ্যোগে বই বিক্রির লক্ষ্যে গড়ে ওঠে ওই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, বছরখানেকের মধ্যে এক ভ্যানচালক ওই প্রতিষ্ঠানের চরিত্রটাই বদলে দেন। সে কথা আজও ওই বই ঠেকে উপস্থিত মানুষজনের মুখে মুখে ফেরে।
কি সেই গল্প?
২০০৭ সালে ওই দোকানে আসেন অরুণ সাহা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি ৩০ টাকার বিনিময়ে একটি ‘শরৎ গল্প সমগ্র’ কিনে চুপিসারে লুঙ্গির ফাঁকে লুকিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। বরুণবাবুর কেমন সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে চেপে ধরে ওই রকমের আচরণের কারণ জানাতে চান। তখন অরুণবাবু জানান, তিনি পেশায় ভ্যানচালক। গল্পের বই পড়ার খুব নেশা। যখন ভাড়া থাকে না, ভ্যানের উপরে বসেই বই পড়েন।
এ সব শুনে চমকে যান বরুণবাবু। তিনি ভাবেন, বইয়ের দোকানেই যদি একটা ঠেক করা যায়, তা হলে অরুণবাবুদের মতো মানুষেরা পড়ার সুযোগ পেতে পারেন। শিল্পী, সাহিত্যিকরাও মত বিনিময়ের সুযোগ পেতে পারেন।
সেই পরিকল্পনা মতো গড়ে ওঠে ঠেক। অরুণবাবুদের মতো লোকেরা বই দেখা এবং পড়ার জন্য এখন সেখানে ভিড় জমান। শিল্পী, সাহিত্যিকদের নিয়মিত আড্ডাও বসে। বিভিন্ন সময়ে আড্ডা দিতে দেখা গিয়েছে সুরঞ্জন রায়, অসীম অধিকারী, নাসিম-এ-আলম, অতনু বর্মণ, উজ্বল মুখোপাধ্যায়, সুব্রত ঘটক, পঙ্কজকুমার মণ্ডলের মতো শিল্পী, সাহিত্যিকদের। পা রেখেছেন নিমাই ভট্টাচার্য, অমর মিত্র, বিনোদ ঘোষাল, রণজিৎ দাস, পিনাকী ঠাকুরের মতো ব্যক্তিরাও। পাশাপাশি অরুণবাবুর মতো হাজির থেকেছেন প্রসাদ সূত্রধর, সুবোধ ঘটক, অর্পিতা ঘোষদের মতো পাঠকেরাও। সকলেই একসুরে জানিয়েছেন, এখানে এলেই যেন কফি হাউসের আমেজে মন ভরে যায়।
শুধু তাই নয়। প্রতিবছর সেরা পাঠক সম্মান, যুব সাহিত্য সম্মান, নাট্য সম্মান, মেধা অন্বেষণ, পত্রিকা প্রকাশ সহ নানা সাংস্কৃতিক কাজে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে ওই সংস্থা। আলাদা করে বীরভূমকে চেনানোর জন্য জেলার রচনা সম্ভার নিয়ে করা হয়েছে ‘আমার বীরভূম’ নামে সংরক্ষিত জায়গাও।
প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বরুণ ভাণ্ডারী বলেন, ‘‘লেখক-পাঠকের সরাসরি মেলবন্ধনের পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy