Advertisement
১১ মে ২০২৪
শিশুকন্যার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে বধূকে ধর্ষণের মামলা

এগারো মাসে রায়, দশ বছর জেল

সদর থেকে মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে বধূ ও তাঁর শিশুকন্যাকে গ্রামের এক নির্জন ইটভাটায় নিয়ে গিয়ে উঠেছিল পড়শি এক যুবক। অভিযোগ, সেখানেই শিশুর গলায় ছুরি ধরে জোর করে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে ওই যুবক। এমনকী, ঘটনার পরেও ওই যুবক ব্ল্যাকমেলিং করে ওই বধূকে একাধিক বার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গত জুনের ওই ঘটনায় ১১ মাসের মধ্যেই মামলার রায় দিল সিউড়ি আদালত।

সাজা ঘোষণার পরে সংশোধনাগারের পথে। শনিবার সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সাজা ঘোষণার পরে সংশোধনাগারের পথে। শনিবার সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০১:৪৬
Share: Save:

সদর থেকে মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে বধূ ও তাঁর শিশুকন্যাকে গ্রামের এক নির্জন ইটভাটায় নিয়ে গিয়ে উঠেছিল পড়শি এক যুবক। অভিযোগ, সেখানেই শিশুর গলায় ছুরি ধরে জোর করে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে ওই যুবক। এমনকী, ঘটনার পরেও ওই যুবক ব্ল্যাকমেলিং করে ওই বধূকে একাধিক বার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গত জুনের ওই ঘটনায় ১১ মাসের মধ্যেই মামলার রায় দিল সিউড়ি আদালত। শনিবার অভিযুক্তকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল আদালত।

সরকারি আইনজীবি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘মহম্মদবাজার থানা এলাকার ওই ঘটনায় পুলিশ তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়েছিল। অভিযুক্ত সঞ্জয় দাসকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (২) (এন) ও ৫০৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সিউড়ি আদালতের জেলা ও দায়রা বিচারক গৌতম সেনগুপ্ত ওই যুবককে ৩৭৬ (২) (এন) ধারায় ১০ বছর এবং ৫০৬ ধারায় দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন। অনাদায়ে কারাদণ্ডের মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়বে।’’

সরকারি আইনজীবী জানান, গত বছর মার্চ মাসে মহম্মদবাজার থানা এলাকার একটি গ্রামের বধূ শিশুকন্যাকে ডাক্তার দেখাতে জেলা সদর সিউড়িতে গিয়েছিলেন। ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় তিনি বাসের অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় মোটরবাইকে চেপে পাশের বাড়ির যুবক সঞ্জয় দাস তাঁর সামনে এসে থামেন। কেন দাঁড়িয়ে আছি, জিজ্ঞাসা করাতে ওই বধূ সঞ্জয়কে জানান, বাড়ি ফেরার জন্য তিনি বাসের অপেক্ষা করছেন। পড়শি যুবক বধূকে জানায়, তিনিও গ্রামেই ফিরছেন। বধূকে তখন তিনি মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রণজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওই বধূ যুবকের প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু, সঞ্জয় রাস্তায় জেদ ধরে বসায় তিনি শেষ পর্যন্ত মেয়েকে কোলে নিয়ে মোটরবাইকে চেপে বসেন। গ্রামে ঢোকার কিছু আগে ওই যুবক মোটরবাইক অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে নেন।’’ সঞ্জয় বধূকে জানানয় রাস্তা খারাপ থাকায় অন্য দিক দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অভিযোগ, ওই রাস্তায় কিছুটা গিয়েই একটি নির্জন ইটভাটার কাছে গিয়ে সঞ্জয় মোটরবাইকটি থামায়। বধূকে কুপ্রস্তাব দেয়। নির্যিতাত বধূ এ দিন বলেন, ‘‘আমি রাজি না হওয়ায় মোটরবাইকের ডিকি থেকে সঞ্জয় একটি ছুরি বের করে মেয়ের গলায় ধরে। ওইটুকু শিশুকে খুন করে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। ওই অবস্থায় মেয়েকে বাঁচাতে সঞ্জয়ের অত্যাচার সহ্য করে নিতে বাধ্য হই।’’

গত বছর মার্চ মাসে মহম্মদবাজার থানা এলাকার একটি গ্রামের ঘটনা।

অভিযোগ দায়ের হওয়ার তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দেয় বীরভূম পুলিশ।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (২) (এন) এবং ৫০৬ ধারায় অভিযুক্ত যুবক দোষী সাব্যস্ত।

এ দিকে, ঘটনাটি এখানেই থামেনি। সরকারি আইনজীবী জানান, এর পরেও নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে সঞ্জয় ওই বধূকে কয়েক বার ধর্ষণ করে। ঘটনার কথা জানাজানির ভয়ে থানা তো দূর, এমনকী ওই বধূ পরিবারকেও কিছু জানাতে পারেননি। ওই বধূর আক্ষেপ, ‘‘শ্বশুরবাড়ির লোক জন ভুল বুঝে সে সময় আমাকে বাপের বাড়িও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।’’ সেখানে থাকার সময়েই গত ৫ জুন মহম্মদবাজারে একা দেখতে পেয়ে অভিযুক্ত যুবক ফের ওই বধূকে জোর করে তার মোটরবাইকে তোলার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বধূর চিৎকারে লোক জড়ো হয়ে গেলে সঞ্জয় বাইক নিয়ে চম্পট দেয়। ওই দিনের পরেই প্রথম সাহস করে থানায় যান বধূ। পুলিশকে ঘটনার কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগও করেন। ওই দিনই পুলিশ অভিযুক্ত সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে। এক মাস জেল হাজতে থাকার পরে সে জামিন পায়। তত দিনে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বধূকেও বাড়িতে ফিরিয়ে নেন।

সাজা ঘোষণার পরে এ দিন বধূর স্বামী বলেন, ‘‘সঞ্জয়ই স্ত্রী-র সম্পর্কে আমাদের ভুল বুঝিয়েছিল। স্ত্রীর কোনও দোষ নেই। আমাদের সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে ও সব কিছু সহ্য করেছিল। আমরা সঞ্জয়ের আরও কঠোর শাস্তি চেয়েছিলাম।’’ আদালতের রায়ে খুশি নির্যাতিতা বধূও। তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। কারও সঙ্গে এমন করার আগে অপরাধীরা এ বার থেকে অন্তত দু’বার ভাববে।’’

এ দিকে, সঞ্জয়ের আইনজীবী রাফেউল হকের দাবি, ‘‘আমার মক্কেল বিবাহিত। ওঁর বাড়িতে স্ত্রী ও শিশুসন্তান রয়েছে। ওঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE