প্রশাসনিক জরিমানা বা পুলিশি নজরদারির পরেও ট্রাক-ডাম্পারে নির্ধারিত মাত্রার বেশি বালির পরিবহণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এমন অভিযোগ শুধু ভুক্তভোগীদের নয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও প্রায় এ নিয়ে তোপ দাগেন। বালি কারবারের লোভনীয় ভাগ বা ‘বখরাই’ কি কঠিন পদক্ষেপের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, চর্চা থামে না।
বালি ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, মূলত ছ’চাকা, ১২ চাকা ও ১৬ চাকার ডাম্পার বা ট্রাকে বালি পরিবহণ করা হয়। ১৬ চাকার ডাম্পারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৬ থেকে সাড়ে ৪৭ টন বালি পরিবহণের নিয়ম। নদীঘাট থেকে গাড়িতে বালি তোলার পরে ওজন করিয়ে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট পোর্টালে ‘আপলোড’ করলে বালি পরিবহণের অনলাইন চালান মেলে।
তা হলে ‘ওভারলোডিং’ হচ্ছে কী ভাবে? সূত্রের দাবি, ঘাট থেকে বালি তুলে একটা বড় অংশ আলাদা করে রাখেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। গাড়ি ওজন করার পরে তাতে সেই বালি চাপানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর কথায়, “ডাম্পার ওজন করানোর পরে আরও অন্তত ১০০-২০০ সিএফটি বালি চাপানো হয়। ওই বাড়তি বালির মূল্য চার থেকে আট হাজার টাকা।” যদিও অভিযোগ মানেনি প্রশাসন।
বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, বাড়তি ওই বালির টাকার বিভিন্ন ভাগ হয়। তা পায় পুলিশ, পরিবহণ দফতর থেকে শাসক দলের লোকজন। অনেক ক্ষেত্রে ঘাটের পরিধি অনুযায়ী সম্ভাব্য লভ্যাংশের আনুপাতিক হারেও ‘বখরা’ ধার্য হয়। তবে বালি ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি, স্থানীয় ‘মোড়লদের’ সামলাতে ও বিভিন্ন ক্লাবের চাঁদার জুলুমেই বছরে লক্ষাধিক টাকা বেরিয়ে যায়। এর পরে এলাকায় মন্দির, চাতাল, রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার বায়না তো রয়েছেই।
ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখার দাবি, “বালি ব্যবসায়ীদের থেকে কয়েকশো কোটি টাকার ‘বখরা’ তৃণমূল, পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে যায়। সরাসরি কালীঘাটে যাচ্ছে মূল প্রণামী।” তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাঁকুড়ার দলীয় সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “বালিঘাট লিজ় দেওয়া থেকে শুরু করে বালি উত্তোলন, সবই নির্দিষ্ট দফতরের কড়া নজরদারি ও শর্তসাপেক্ষে হয়। পুলিশ-প্রশাসন সব সময়ে নজরদারি চালায়।” তাঁর সংযোজন, নির্মাণশিল্প চাঙ্গা হওয়ায় গ্রামীণ মানুষজন কাজ পাচ্ছেন। অথচ বিরোধীরা কেবল ‘বখরা’ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ-প্রশাসনও। জেলা পুলিশের দাবি, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বালির ‘ওভারলোডিং’, অবৈধ ভাবে বালি তোলার মতো নানা অভিযোগে বিষ্ণুপুর মহকুমায় ২৬টি মামলায় ৩৩ জন গ্রেফতার হয়েছে।
বিষ্ণুপুর অঞ্চল পরিবহণ দফতরের দাবি, সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বালির ‘ওভারলোডিং’ দরুন জরিমানা ও রাজস্ব খাতে আদায় হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। যা গত তিনটি অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুপ্রকাশ দাস বলেন, “বালি পরিবহণ নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না, তা নজর রাখে মূলত আরটিও। আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয় পুলিশ সামলায়। ডাম্পারের চালান বৈধ কি না, তার উপরে কড়া নজরদারি চলে। কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত মামলা রুজু করে তদন্ত হয়।” (শেষ)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)