Advertisement
E-Paper

মোটরবাইক ফেরত দিল চোর!

‘চোর না শোনে ধর্মের কাহিনি’।পুরনো এই প্রবাদটাই যেন মিথ্যে হয়ে গেল সিউড়ির সুভাষপল্লির মুখোপাধ্যায় পরিবারের কাছে। বাড়ির সামনে রাখা জামাইয়ের খোওয়া যাওয়া মোইকবাইকটিই ফেরত দিয়ে গিয়েছে চোরে!

তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
এই সেই মোটরবাইক। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।

এই সেই মোটরবাইক। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।

‘চোর না শোনে ধর্মের কাহিনি’।

পুরনো এই প্রবাদটাই যেন মিথ্যে হয়ে গেল সিউড়ির সুভাষপল্লির মুখোপাধ্যায় পরিবারের কাছে। বাড়ির সামনে রাখা জামাইয়ের খোওয়া যাওয়া মোইকবাইকটিই ফেরত দিয়ে গিয়েছে চোরে!

মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনায় অবাক পরিবারের সবাই। এমন কাণ্ডে তাজ্জব পাড়া পড়শিরাও।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষপল্লির বাসিন্দা, সিউড়ির ডাক বিভাগের কর্মী দেবতোষ মুখ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে বনশ্রীর বিয়ে হয়েছে ডাঙালপাড়ার পার্থসারথি হাজরার সঙ্গে। গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট নাগাদ সেখান থেকেই মোটরবাইক চালিয়ে স্ত্রী বনশ্রী এবং চার বছরের কন্যা অনুষ্কাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান পার্থবাবু। দেবতোষবাবুর কথায়, ‘‘মোটরবাইকটা বাড়ির সামনে রাস্তায় হ্যান্ডেল লক করে রাখা ছিল। গল্প করতে করতে সময় পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে ৮টা ২০ নাগাদ একবার বাইরে বেরিয়েছিলাম। মোটরবাইকটাকে দেখেছি। আরও মিনিট কুড়ি পরে ৮টা ৪০ মিনিট নাগাদ ঘরে ফেরার জন্য মেয়ে-জামাই বাড়ির বাইরে পা রাখে।’’ দরজা খুলতেই দেখা যায়— মোটরবাইক উধাও। বহু ছোটাছুটি করেও সেই মোটরবাইকের আর খোঁজ মেলেনি। সে দিন রাতেই সিউড়ির থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পার্থবাবু।

এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ সেই চুরি যাওয়া মোটরবাইকই বাড়ির সামনে ‘হাজির’ হয়। দেবতোষবাবু জানান, পাশের বাড়ি থেকে রেবা বসু তাঁদের ডেকে বলেন— ‘আপনাদের বাড়ির পাঁচিলের পাশে অনেক ক্ষণ ধরে একটা বাইক দাঁড়িয়ে আছে’। রেবাদেবীর ডাক শুনে বাইরে বেরিয়ে দেবতোষবাবুরা দেখেন, কে বা কারা একটা মোটরবাইক রেখে গিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। এ তো জামাইয়ের গাড়ি! পড়শিদের ডাকাডাকি করি। সবাই ভাল করে দেখি। চিনতে ভুল না হয়।’’ নিশ্চিত হতেই জামাইকে ফোন করে খবর দেওয়া হয়। খবর যায় পুলিশেও। সিউড়ির বাসিন্দা পার্থবাবু বর্তমানে বার্নপুরে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি বলেন, “বছর ৮-১০ আগে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া থেকে কালো রঙের ওই মোটরবাইকটা কিনেছিলাম। এত দিনের প্রিয় মোটরবাইকটা চুরি যাওয়ায় মুষড়ে পড়েছিলাম। সেই মোটরবাইক বাড়ির সামনেই মিলেছে, জানতে পেরে অবাক হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যাতেই সিউড়ি যাচ্ছি।”

জানা গিয়েছে, মোটরবাইকের সব কিছুই ঠিক আছে। কেবল মোটরবাইকের এক দিকের ইন্ডিকেটার ল্যাম্প ভাঙা, মূল আলোর কাচে স্ক্রাচের দাগ। আর সামনে-পিছনের নম্বর প্লেট থেকে নম্বরটা উধাও। পুলিশ এসে আপাতত সিউড়ি থানায় মোটরবাইকটি নিয়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে কত মোটরবাইক চুরি যায়। কিন্তু বাড়ির কাছে খোওয়া যাওয়া মোটরবাইক, সেই বাড়িতেই এ ভাবে ফিরে আসতে দেখে হতবাক পাশের বাড়ির সৌভিক পাল, বন্দনা পালেরা। দেবতোষবাবুর স্ত্রী সুচিত্রাদেবী বলছেন, ‘‘সবই ঠাকুরের ইচ্ছা।” জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, সচরাচর এমন কাণ্ড ঘটে না। এ ক্ষেত্রে এলাকারই কোনও অপেশাদার কেউ ওই চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। মোটরবাইকটি বাইরে পাচার করতে সফল হয়নি। ‘‘সম্ভবত পুলিশে অভিযোগ হওয়ায় আরও ভয় পেয়ে চোর ওই মোটরবাইকটি ফেরত দিয়ে গিয়েছে,’’—মত ওই পুলিশ কর্তার।

তবে, সকলেই একমত— চোর পুলিশ এবং শ্বশুরবাড়ি, দু’পক্ষেরই মানরক্ষা করেছে!

Motorbike Stolen Thief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy