Advertisement
০৮ মে ২০২৪

রাজবাড়ির পরিখার পাড় কাটছে চোর

শক্রপক্ষের হাত থেকে রাজবাড়ি রক্ষা করার জন্য চারপাশে গভীর পরিখা কাটা হয়েছিল বিষ্ণুপুরে। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এই পরিখা অন্যতম দ্রষ্টব্য। কিন্তু মাটি-চোরদের দাপটে পরিখার পাশের মাটির বাঁধ হারিয়ে যেতে বসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ১৩:৪৫
Share: Save:

মল্লরাজধানী বিষ্ণুপুরের রাজবাড়িকে ঘিরে রাখা পরিখার উঁচু পাড় এখন অনেকটাই সাফ হয়ে গিয়েছে। শহর লাগোয়া এলাকার মোরামও কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অবাধে। দীর্ঘদিন ধরে বিষ্ণুপুরে মাটি ও মোরাম পাচারের দুষ্কৃতী চক্র সক্রিয় হলেও প্রশাসনের এ সব রুখতে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ।

শক্রপক্ষের হাত থেকে রাজবাড়ি রক্ষা করার জন্য চারপাশে গভীর পরিখা কাটা হয়েছিল বিষ্ণুপুরে। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এই পরিখা অন্যতম দ্রষ্টব্য। কিন্তু মাটি-চোরদের দাপটে পরিখার পাশের মাটির বাঁধ হারিয়ে যেতে বসেছে। গুমঘরের পাশ থেরে হুচুকপাড়া-সহ কয়েকটি এলাকায় পরিখার উঁচু পাড় কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। কয়েক মাস আগে বিষ্ণুপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পাথরের রথ ও গড় দরজার মধ্যবর্তী ভোজন টিলার কাছে বাউরি পাড়াতেও মাটি কাটা চলছিল। অল্প সময়ের মধ্যে বেশি মাটি কাটার জন্য মেশিন নামানো হয়েছিল। সেই মাটি ট্রাক্টরে চাপিয়ে পাচার করা হচ্ছিল। ওই জায়গার কাছেই পাথরের গড়দরজা আর লালজিউ মন্দির। পরিকল্পনাহীন মাটি কাটায় ওই সব সৌধও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বসে অনেকের আশঙ্কা। কিন্তু প্রশাসনকে মাটি কাটা ঠেকাতে দেখা যায়নি। হইচই হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রশাসন আসরে নেমে মাটি কাটা ঠেকায়।

বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাটির বাঁধ কেটে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কেউ বাঁধ কাটতে গেলেই আমরা বন্ধ করে দিই।’’ বিষ্ণুপুর মহাকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ ভাবে ভূমির চরিত্র বদল করা যায় না। আর মাটির টিলাগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্বও আছে। কোনও ভাবেই মাটি কাটা বরদাস্ত করা যায় না।’’

পরিখা লাগোয়া বাঁধ কাটা কিন্তু থেমে নেই। প্রশাসনের নজরদারি কমে গেলেই মেশিন ও কোদালের কোপ পড়তে শুরু করছে বাঁধে। স্থানীয়েরাই জানাচ্ছেন, বাঁধের মাটি তুলে নিয়ে গিয়ে শহরের ভিতরে বিভিন্ন ডোবায় ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। পরে সেই বুজিয়ে ফেলা ডোবা জমি হিসেবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সেখানে ঘর-বাড়িও উঠছে। সাফ হয়ে যাওয়া বাঁধের জমিতেও বসতি তৈরি হচ্ছে।

বিষ্ণুপুরের পুরাতত্ত্ববিদ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত-র প্রশ্ন, ‘‘এই মাটি চোরেরা কি কিছুই বাদ দেবে না?’’ তিনি জানান, ওই ভোজনটিলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসীম। বিষ্ণুপুরের আরধ্যা মৃন্ময়ীদেবীর সন্ধিপুজোর সময় হাজার হাজার মানুষ ওই টিলার উপর দাঁড়িয়ে তোপদাগা দেখেন। মেশিন দিয়ে টিলার মাটি কাটলে দু’টি পাথর দরজারই সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক, না হলে বিষ্ণুপুরের ইতিহাসই শেষ হয়ে যাবে।’’ বিষ্ণুপুর রাজদরবার এলাকার বাসিন্দা বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজের অধ্যাপক বাণীব্রত মিত্র-র মন্তব্য, ‘‘সব ঐতিহ্য শেষ করে দেবে এই দুষ্কৃতীরা।’’

বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যারা টিলার মাটি কাটছে, খুবই অন্যায় কাজ করছে। কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। আর যেহেতু পুরাতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে এ সব হচ্ছ, তাই আরও সজাগ হওয়া দরকার।’’

প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধি সবাই মাটি-দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখালেও আদৌ কোনও অপরাধীকে ধরা পড়েছে? সদুত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE