E-Paper

ত্রিনয়ন আঁকছে তনুজা, সম্প্রীতির আলো কীর্ণাহারে

পুজোর আয়োজক মরসুমি ক্লাব। ক্লাবের শ’দুয়েক সদস্য। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পুজোয় শামিল হওয়া মানে নিছক চাঁদা দিয়ে দেওয়া নয়। বরং, পুজোর জন্য মাঠে নেমে পড়েন তাঁরা।

দেবাশিস পাল

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:২৬
মণ্ডপসজ্জার কাজে ব্যস্ত তনুজা খাতুন। কীর্ণাহার পশ্চিমপট্টি সর্বজনীন দুর্গোৎসবে।

মণ্ডপসজ্জার কাজে ব্যস্ত তনুজা খাতুন। কীর্ণাহার পশ্চিমপট্টি সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। ছবি: কল্যাণ আচার্য।

বেতের কুলো, চালুনি। সে সবের উপরে তুলি দিয়ে নিখুঁত ভাবে দুর্গার ত্রিনয়ন আঁকছে মেয়ে। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী তনুজা খাতুন। পাশে দাঁড়িয়ে তদারক করছেন তার বাবা আনিসার রহমান। এ ছবি বীরভূমের কীর্ণাহার পশ্চিমপট্টি সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপসজ্জার। দেশ জোড়া অসহিষ্ণুতার আবহে এ পুজো সম্প্রীতির আলো ছড়ায়।

পুজোর আয়োজক মরসুমি ক্লাব। ক্লাবের শ’দুয়েক সদস্য। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পুজোয় শামিল হওয়া মানে নিছক চাঁদা দিয়ে দেওয়া নয়। বরং, পুজোর জন্য মাঠে নেমে পড়েন তাঁরা। আনিসারের মতো অনেকে পুজোর সমস্ত কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন।

মণ্ডপের পাশেই আনিসারের বাড়ি। পুজো কমিটির সহকারী সভাপতিও তিনি। পুজোর ক’দিন পাড়ার সবাই একত্রে খাওয়াদাওয়া করেন। মণ্ডপসজ্জার পাশাপাশি, খাওয়ার আয়োজনের দায়িত্বও আনিসারের। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন আনিসারের স্ত্রী খুশবু খাতুন। মেয়ে তনুজা আঁকার হাত ভাল বলে মণ্ডপসজ্জা থেকে আলপনা— নানা দায়িত্ব সামলায় সে। আনিসার বলেন, ‘‘নিজের ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা রেখেই প্রতি বছর এ উৎসবে শামিল হই।’’

পশ্চিমপাড়ারই বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক মানোয়ার রহমান, ব্যবসায়ী আলি আফজাল। তাঁদের কথায়, ‘‘এই পুজো পাড়ার সব থেকে বড় উৎসব। সাধ্য মতো পাশে থাকি। এ ভাবেই চলে আসছে।’’ পুজোর আয়োজক সুমন্ত ঘোষ, অনিমেষ পাল, অয়ন চৌধুরীরা বলেন, ‘‘সামাজিক কাজকর্ম থেকে সব উৎসবে বছরভর আমরা এক সঙ্গেই থাকি। দুর্গোৎসবেও ব্যতিক্রমহবে কেন!’’

ইদেও সবাই মিলে উদ্‌যাপন করেন। পুজো কমিটি ও ক্লাবের সম্পাদক সৌমেন চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরাও সংখ্যালঘুদের নানা উৎসবে যোগ দেন। দু’দিক থেকেই তাঁরা ‘উৎসব সবার’— এ নীতি মেনে চলেন। তিনি বলেন, ‘‘সবাই শামিল না হলে কোনও উৎসবই সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে না। আমরা সব উৎসবকে সর্বজনীন করে তুলেছি।’’ কীর্ণাহারের নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ ইমরান, বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের রথীপুর বরোদা বাণীপিঠের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘এটাই বাংলার সংস্কৃতি। এটাই হওয়া উচিত। উৎসব কখনও আমাদের-ওদের হতে পারে না। আমার অনেক অমুসলিম বন্ধু এবং পরিচিত ইদ-সহ অন্য উৎসবে শামিল হন। এ ভাবেই সামনে এগোতে হবে।’’

ত্রিনয়ন আঁকায় ব্যস্ত তনুজা বলে, ‘‘পাড়ার পুজো। ছোটবেলা থেকেই সবার সঙ্গে আনন্দ করি। আলপনাও আঁকি। এ বছর মণ্ডপের ছবি আঁকার কাজ করতে খুব ভাল লাগছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2025 Birbhum kirnahar Communal harmony

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy