(বাঁ দিকে) কাজল শেখ। বীরভূমে তৃণমূলের কার্যালয়ে মদ্যপানের অভিযোগ (মাঝে)। অনুব্রত মণ্ডল (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বীরভূমের ময়ূরেশ্বর-২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রমোদ রায়ের বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয়ে বসে মদ্যপানের অভিযোগ উঠল। মদ্যপানের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে (আনন্দবাজার অনলাইন তার সত্যতা যাচাই করেনি)। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি নতুন ঘটনা নয়। বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। অন্য দিকে, বীরভূমে বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার কটাক্ষ, পার্টি অফিসে বসে মদ্যপানই আসলে ‘তৃণমূলের সংস্কৃতি’।
ভিডিয়োটি তৃণমূল কার্যালয়ে বসেই তুলেছেন এক ব্যক্তি। সূত্রের খবর, যিনি ভিডিয়ো তুলেছেন, তিনিও দলীয় কর্মী। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, টেবিল ঘিরে বসে রয়েছেন কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ময়ূরেশ্বর-২ নং ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রমোদ রায়। টেবিলের উপর রয়েছে কিছু প্লাস্টিকের গ্লাস, যাতে মদ রয়েছে বলে অভিযোগ। কিছু প্লাস্টিকের জলের বোতলও রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এটি এক দিনের ঘটনা নয়, বরং প্রায়ই এমন পরিস্থিতি দেখা যায়।
আনন্দবাজার অনলাইনকে কাজল জানিয়েছেন যে, গত দু’বছর জেলায় কিছু না হলেও ইদানীং ‘অসামাজিক কাজ’ হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, প্রায় দু’বছর জেলে থাকার পরে গত সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেয়েছেন বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। নাম না করে কি তাঁর দিকেই ইঙ্গিত করছেন দলের অন্দরে ‘কেষ্ট-বিরোধী’ বলে পরিচিত কাজল? তৃণমূলের অন্দরে দুই নেতার সেই ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ কি আরও এক বার প্রকাশ্যে নিয়ে এল তাঁর মন্তব্য?
কাজল বলেছেন, ‘‘দু’বছর বীরভূম জেলায় কোনও অসামাজিক কাজ হয়নি। ২০২৩-এ পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। এক জন মানুষেরও প্রাণ যায়নি। ২০২৪-এ লোকসভা ভোট হয়েছে। কোনও হানাহানি হয়নি। কিন্তু ইদানীং কিছু অসামাজিক কাজ হচ্ছে। কেন হচ্ছে, তা বলতে পারব না।’’
কাজল কারও নাম না করলেও ইঙ্গিত কোন দিকে, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। কাজল-ঘনিষ্ঠ কলকাতার এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘বীরভূমের কয়েকটা ব্লকে এখনও কেষ্টর লোকেরা যা ইচ্ছা তা-ই করতে চাইছে। তার মধ্যে ময়ূরেশ্বর অন্যতম। কিন্তু খুব অল্প দিনেই সে সব বন্ধ হয়ে যাবে।’’
এমনিতে, বীরভূমের রাজনীতিতে কেষ্ট এবং কাজল, এই দুই নেতার ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে কম জল্পনা চলে না। কেষ্টর জামিনের খবর প্রকাশিত হতে বীরভূমে দলীয় কার্যালয় সাজানো হয়েছিল তাঁর ছবিতে। প্রকাশ্যে সেই কাজের সমালোচনা করেছিলেন কাজল। বীরভূমে অনুব্রত ফিরলে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই তালিকায় ছিলেন না কাজল। পরে দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রতের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁদের ঘনিষ্ঠেরা দাবি করেছিলেন, সেই বৈঠকে কোনও ‘রাজনৈতিক’ কথা হয়নি। বিজয়া সম্মিলনী থেকে দুই নেতাকে একই মঞ্চে দেখা যায়নি। দলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁরা একসঙ্গে থাকেননি। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন উদ্যাপনেও ভিন্ন মঞ্চে ছিলেন জেলার তৃণমূল সভাপতি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি। দু’জনেই নেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন। যদিও তাঁরা দলীয় কর্মীদের বার বার বার্তা দিয়েছেন যে, বীরভূম তৃণমূলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। শেষে গত ১৩ জানুয়ারি জয়দেব-কেঁদুলির মেলায় দুই নেতাকে একই মঞ্চে দেখা যায়। কেষ্টর পা ছুঁয়ে প্রণামও করেন কাজল। কিছু ক্ষণ কথাবার্তাও বলেন তাঁরা। অনেকেই দুই নেতার সেই সৌজন্য বিনিময়কে ‘ইঙ্গিতবহ’ বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু সেই রেশ কাটতে না কাটতেই তৃণমূল কার্যালয়ে মদ্যপানের অভিযোগ নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন কাজল।
বিরোধী বিজেপি এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, শাসকদলের নেতারা এখন দলীয় কার্যালয়কে ‘পার্টি’ করার জায়গায় পরিণত করেছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব বলেন, ‘‘তৃণমূলের এটাই কালচার। মানুষের উপকার তাঁরা কী করবেন? নিজেরা উপকার নিতেই ব্যস্ত। প্রত্যেক পার্টি অফিসে দুষ্কৃতীদের ঠাঁই হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy