Advertisement
E-Paper

টিএমসিপি নেতার উপর হামলা ইন্দাসে

বিকেলে ‘যুযুধান’ দুই নেতাকে মুখোমুখী বসিয়ে এক হয়ে দলের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলা নেতা। রাতে বাড়ি ফেরার পথে এক নেতার উপর হামলা হল। আর অভিযোগ উঠল তাঁর ‘বিরুদ্ধ’ সেই নেতার লোকেদের উপর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০১:১৮

বিকেলে ‘যুযুধান’ দুই নেতাকে মুখোমুখী বসিয়ে এক হয়ে দলের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলা নেতা। রাতে বাড়ি ফেরার পথে এক নেতার উপর হামলা হল। আর অভিযোগ উঠল তাঁর ‘বিরুদ্ধ’ সেই নেতার লোকেদের উপর।

বৃহস্পতিবার রাতে ইন্দাস স্টেশনের কাছে জেলা টিএমসিপি নেতা শেখ হামিদের উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। মারধরের অভিযোগ উঠেছে তাঁর সঙ্গে থাকা করিশুন্ডার পঞ্চায়েত প্রধান বিদ্যুৎ রুইদাসকেও। তবে তাঁর আঘাত গুরুতর নয়। হামিদের চোট গুরুতর। তাঁকে প্রথমে ইন্দাস ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, পরে বর্ধমানের একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে শুক্রবার সকালে তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। হামিদ ঘনিষ্ঠরা মারধরের পিছনে দলের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। যদিও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে ঘটনার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটের নেতৃত্বে তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল থানায় ওসি-র কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও হামলাকারীদের ধরতে পারেনি। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “অভিযোগ জানাতে বলেছি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ধরা হবে।’’

“মুখঢাকা লোকগুলো লাঠি, রড নিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে।
আমার সাংগঠনিক শক্তি দিন দিন বাড়ছে বলেই ভয় পেয়ে রবিউল হোসেন ছক কষে
লোক লাগিয়ে আমার উপর হামলা চালিয়েছে।”
—শেখ হামিদ। জেলা টিএমসিপি নেতা।

ইন্দাসের শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ হামিদ টিএমসিপির অন্যতম জেলা নেতা। স্থানীয় রাজনীতিতে একসময় ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন হামিদ। সম্প্রতি রবিউলের সঙ্গে সেই ‘মধুর সম্পর্কে’ চিড় ধরেছে। দলসূত্রে খবর, রবিউলকে কোণঠাসা করতে উঠে পড়ে লেগেছেন হামিদ। কিছুদিন আগে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বুল্টি রুইদাসের সঙ্গেও গণ্ডগোল হয়েছে হামিদের। হামিদের অনুগামীরা বুল্টির ঘনিষ্ঠ সুশান্ত মাঝির মোটরবাইক ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে বুল্টি খোদ জেলা সভাধিপতির কাছে হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের রাজ্য নেতৃত্ব পুলিশের কাছ থেকেও হামিদের কাজকর্ম নিয়ে আপত্তিকর রিপোর্ট পেয়েছেন। এ ব্যাপারে দলের জেলা নেতৃত্ব ইন্দাস ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে সবাইকে একসঙ্গে চলার নির্দেশ দেন। সে জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁকুড়ায় জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী রবিউল হোসেন, শেখ হামিদ, বুল্টি রুইদাসকে ডেকে পাঠান। সভাধিপতির সামনেই হামিদ ও রবিউল হোসেন একসঙ্গে দলের হয়ে কাজ করার আশ্বাস দেন।

একসঙ্গেই তাঁরা বাঁকুড়া থেকে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন। ইন্দাস স্টেশনে হামিদ এবং করিশুন্ডার পঞ্চায়েত প্রধান বিদ্যুৎ রুইদাস নামেন। রবিউল নামেন পরের স্টেশন শাকরুলে। টেলিফোনে এ দিন হামিদ দাবি করেন, “স্টেশন থেকে কিছুটা এগোতেই ৮–১০ জন মুখঢাকা লোক লাঠি, রড নিয়ে আমাকে ঘিরে ধরে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে। প্রতিরোধ করার আগেই ওরা পালায়। ওদের কয়েকজনকে আমি চিনতে পেরেছি।” হামিদের অভিযোগ, “এলাকায় আমার সাংগঠনিক শক্তি দিন দিন বাড়ছে বলেই ভয় পেয়ে রবিউল হোসেন ছক কষে লোক লাগিয়ে আমার উপর হামলা করিয়েছে।’’

হামিদ ঘনিষ্ঠ বিধায়ক গুরুপদ মেটে অবশ্য ঘটনাটিকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে প্রকাশ্যে মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। পুলিশকে বলেছি হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’’ রবিউল অবশ্য দাবি করেন, “হামিদের বিরুদ্ধে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব অনেক অভিযোগ পেয়েছেন। আমি কোনওদিনই হামিদকে হিংসা করিনি। আমিও চাই, হামিদের হামলাকারীদের পুলিশ খুঁজে ব্যবস্থা নিক।’’ জেলা সভাধিপতিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হামিদের উপরে হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সংগঠনের তরফে আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।”

বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ব্লকে সম্প্রতি শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়ে পড়েছে। রাইপুর, খাতড়া, ইঁদপুর, ছাতনা, তালড্যাংরা থেকে সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাস – সর্বত্র। গত কয়েক মাসের মধ্যে পাত্রসায়র, সোনামুখী, ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির দখলদারি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কাজিয়া প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। এমনকী পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষরা আক্রান্ত হয়েছেন। মহিলা কর্মাধ্যক্ষের শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বিরোধ মিটিয়ে দলের সব গোষ্ঠীকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিলেও নিচুতলার কয়েকজন সেই বার্তা মানছেন না। টিএমসিপি নেতা হামিদের উপরে হামলায় দলের মধ্যে গোষ্ঠী বিরোধ নতুন করে আরও বাড়াবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

trinamool tmc police kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy