Advertisement
২০ মে ২০২৪

মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতি দখলে নিল তৃণমূল

এলাকার একাধিক পঞ্চায়েত আগেই ‘দখলে’ নিয়েছিল শাসকদল। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল বীরভূমের মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতিও। ২৮ আসনের এই সমিতিতে শুক্রবার অনাস্থা নিয়ে ভোটাভুটি হয়।

জয়ের পরে। মহম্মদবাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জয়ের পরে। মহম্মদবাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৮:৫০
Share: Save:

এলাকার একাধিক পঞ্চায়েত আগেই ‘দখলে’ নিয়েছিল শাসকদল। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল বীরভূমের মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতিও। ২৮ আসনের এই সমিতিতে শুক্রবার অনাস্থা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। ফল বেরোতে দেখা যায়, ১৭-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছে শাসকদল। পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যালঘু হয়ে সিপিএমের অভিযোগ, দলীয় সদস্যদের অপহরণ করে, হুমকি দিয়ে শাসকদলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

গত পঞ্চায়েত ভোটেও বামফ্রন্ট মহম্মদবাজার এলাকায় আধিপত্য ছিল। ১২টি পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির ২৮টি আসনের মধ্যে বামেরা যথাক্রমে আটটি পঞ্চায়েত ও সমিতির ২০টি আসন পায়। শাসকদল জেতে বাকি চারটি পঞ্চায়েত এবং সাতটি সমিতির আসনে। আদিবাসী গাঁওতা সমর্থিত নির্দল একটি আসন পায়। ভোটাভুটির পরে দেখা যাচ্ছে, শাসক তৃণমূল বিরোধী বামেদের ১০টি আসন ভাঙিয়ে ১৭ আসনে পৌঁছেছে। একই ভাবে বামেদের আসন কমে হয়েছে ১০। অর্থাৎ, ২৮ আসনের সমিতিতে সাতটি আসন পেয়েও সমিতি দখলে নিল শাসকদল।

শুধু তাই নয়, ভোটাভুটিতে জয় সম্পর্কেও আগে থেকে নিশ্চিত ছিল শাসকদল। সবুজ আবির নিয়ে প্রচুর সমর্থক আগে থেকেই হাজির ছিলেন। অন্য দিকে, এ দিন সমিতির কার্যালয়েই আসেননি সভাপতি-সহ অন্য বাম সদস্যরা। জয়ের খবর আসতেই তৃণমূলের যুগ্ম সভাপতি তাপস সিংহ, গৌতম মণ্ডল, জেলা কমিটির সদস্য কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবিরে ভরিয়ে দেন সমর্থকেরা। ব্লক সূত্রে জানা যায়, ১২টি পঞ্চায়েত ও সমিতির ২৮টি আসনের মধ্যে ৬টি পঞ্চায়েত এবং সমিতির ১৪টি আসন সাঁইথিয়া এবং বাকিটা রামপুরহাট বিধানসভার অন্তর্গত। বামেদের দখলে থাকা একাধিক পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই দখল নিয়েছে তৃণমূল। বর্তমানে পঞ্চায়েতের শক্তি ৬-৬। গত বুধবার সমিতির প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে শাসকদল। শাসকদলের সাত সদস্য ছাড়াও অনাস্থা পত্রে ৮ বাম সদস্য সই করেন। এ দিন ভোটাভুটির সময় আরও দুই বাম সদস্য

যোগ দেওয়ায় অনাস্থাকারীদের শক্তি বেড়ে ১৭ হয়।

বামফ্রন্ট সূত্রে জানানো হয়েছে, সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে যে দশ জন অনাস্থার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁরা হলেন পুরাতন গ্রামের ফিরদৌসি বেগম, বসিরুল হক (ফব), মহম্মদবাজারের প্রমীলা মাড্ডি, ভুতুড়ার করিউদ্দিন আনসারি, পূর্ণচন্দ্র ভুঁইয়া, দেউচার কৃষ্ণকান্ত সাহা, চড়িচার মল্লিকা ওড়াং,

কাপিষ্ঠার আরতি টুডু, সেকেড্ডার আবদুস সালাম ও ভাঁড়কাটার বিশ্বনাথ কিসকু (ফব)।

অনাস্থায় হারের পরে সমিতির সভাপতি মাধবী বাগদির প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটাকে জয় বলে না। ছিনিয়ে নেওয়া বলে। তাই ওদের উল্লাস মানায় না।’’ সিপিএমের মহম্মদবাজার জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রভাস মাল আবার দলীয় সদস্যদের হুমকি, অপহরণের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কয়েক জন সদস্যকে গত কয়েক দিন ধরে অপহরণ করে রাখা হয়েছিল। এ দিন যে সমস্ত বাম সদস্য অনাস্থার পক্ষে ভোট দিয়েছেন, জানবেন তাঁরাও ভয় ও নানা হুমকির শিকার হয়েছেন।’’ তৃণমূল নেতারা সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। শাসকদলের নেতৃত্বের মত, উন্নয়নের স্বার্থেই সিপিএম ও ফব সদস্যরা অনাস্থায় সমর্থন করেছেন।

ঘটনা হল, সিপিএম নেতা যাঁদের অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন, তাঁরাই পাল্টা দাবি করেছেন যে স্বেচ্ছায় তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। সিপিএমের কৃষ্ণকান্ত সাহা ও ফিরদৌসি বেগমের কথায়, ‘‘অপহরণের প্রশ্নই নেই। এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা অনাস্থার পক্ষে ভোট দিয়েছি।’’

সদর মহকুমাশাসক (সিউড়ি) অরুন্ধতী ভৌমিকের নির্দেশ ছিল অনাস্থার পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটির জন্যে শুক্রবার দুপুর দুটোয় সমিতির বৈঠক কক্ষে ভোটাভুটি হবে। তিনি সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকতেও বলেছিলেন। তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে মহম্মদবাজারের বিডিও তারাশঙ্কর ঘোষ এ দিন উপস্থিত ছিলেন। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘সমিতির সভাপতি-সহ ১১ জন সদস্য এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। অনাস্থাকারিরা ১৭-০ ভোটে জয়ী হয়েছেন।’’ সমিতির সভাপতির পদটি মহিলা সংরক্ষিত। সভাপতি ঠিক করার জন্যে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আপাতত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্বনাথ কিসকু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE