ঋতু পরিবর্তনের সময় এলেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়। টনসিলের ব্যথা যাঁদের ভোগায়, তাঁরা কাহিল হয়ে পড়েন। বড়রা শুধু নয়, ছোটরাও ভোগে টনসিলের সমস্যায়। অনেক শিশু আছে, যাদের মুখ থেকে দুর্গন্ধ যেন কিছুতেই দূর করা যায় না। আবার অনেক সময়ে দেখা যায়, বেশ কিছু শিশুর কথা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সবের কারণও কিন্তু টনসিল হতে পারে। টনসিলের ব্যথা প্রধানত দুই ধরনের। তীব্র বা অ্যাকিউট টনসিলাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস। ব্যথা যেমনই হোক, তা নিরাময়ের উপায় জেনে রাখা ভাল।
কেন হয় টনসিলের ব্যথা?
গলায় ব্যথা বা গলা ফুলে গেলে অনেক সময়েই বলা হয়, টনসিলের কারণে হচ্ছে। টনসিল কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারই একটি অংশ। নাক ও মুখ দিয়ে ঢোকা ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে টনসিল। এতে প্রচুর পরিমাণে শ্বেত রক্তকণিকা থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মুখগহ্বরের ভিতরের টনসিলের অংশকে চার ভাগে ভাগ করা যায়— লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এর মধ্যে কোনও একটির প্রদাহ হলেই তাকে ‘টনসিলাইটিস’ বলা হয়।
আরও পড়ুন:
এই প্রদাহ হয় নানা কারণে। এর নেপথ্যে থাকে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ। সাধারণত ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে টনসিলের ব্যথার কারণ হল ভাইরাস। ভাইরাল টনসিলাইটিসেই বেশি ভোগেন মানুষজন। ব্যাক্টেরিয়াল টনসিলাইটিস হয় স্ট্রেপকোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার কারণে। যে ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাকে বলে ‘স্ট্রেপ থ্রোট’। এই ধরনের টনসিলাইটিসের ব্যথা আরও তীব্র হয়। গলা ব্যথা, গলা বসে যাওয়া, কণ্ঠস্বরের বদল হতে পারে।
টনসিলাইটিসের সংক্রমণ ছোঁয়াচে
ভাইরাল বা ব্যাক্টেরিয়াল টনসিলাইটিস ছোঁয়াচে। চুম্বন, একই থালা থেকে খাবার বা একই পাত্র থেকে তরল খাবার খেলে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। টনসিলে আক্রান্তের হাঁচি বা কাশি, থুতু, লালা থেকেও জীবাণু ছড়াতে পারে। আক্রান্তের হাঁচি বা কাশি থেকে জীবাণু বায়ুবাহিত হয়ে কাছে থাকা সুস্থ ব্যক্তির শরীরেও ঢুকতে পারে। তাই টনসিলাইটিস হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
৫ থেকে ১৫ বছর অবধি টনসিলের ব্যথা বেশি ভোগায়। অনেক সময়ে চিকিৎসকেরা বলেন, টনসিলের পাশাপাশি অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিও কেটে বাদ দিতে। অ্যাকিউট টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অনেক সময়েই।
আরও পড়ুন:
টনসিল ডেকে আনে অন্য রোগও
দীর্ঘ সময় ধরে টনসিলাইটিস থেকে গেলে তার থেকে ফাইব্রোসিস হয়ে যেতে পারে। আবার এর থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যাও দানা বাঁধতে পারে। টনসিলার সেলুলাইটিসও বিপজ্জনক। তাই সময় থাকতে চিকিৎসা প্রয়োজন।
ব্যথা নিরাময় হবে কী উপায়ে?
টনসিল হলে ঠান্ডা জল বা আইসক্রিম খাওয়া একেবারেই চলবে না।
মুখের ভিতর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছোটদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বার ব্রাশ করতেই হবে।
ঈষদুষ্ণ জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করলে ভাল হয়।
আরও পড়ুন:
গলায় তীব্র ব্যথা ও জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ হলে চিকিৎসকেরা অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেন। তবে নিজে থেকে ওষুধ না খাওয়াই ভাল।
রোজ রাতে শোয়ার আগে এক কাপ গরম দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়ে নিন। হলুদ প্রদাহনাশক। গলা ব্যথা দূর করতে এর জুড়ি মেলা ভার। তাই হলুদ মেশানো গরম দুধ যেমন সর্দি-কাশি দূর করে, তেমনই টনসিলের ব্যথা দূর করতেও বিশেষ কার্যকরী।
আধ চামচ গ্রিন টি ও এক চামচ মধু দিয়ে মিনিট দশেক ফুটিয়ে নিন। দিনে বার তিনেক এই চা খান। গ্রিন টি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। এটি জীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। মধুর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ টনসিলে সংক্রমণ ঠেকাতে পারে।