Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামে ফেরাতে শিবির

সম্প্রতি গোঁসাইডাঙা গ্রামের দুই প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছিল ওই গ্রামে। অরুণ মাল ও মালা মাল নামে এক দম্পতির মৃত শিশুকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য ওই দুই প্রৌঢ়াকে নিগ্রহ শুরু করেন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। ওই দুই প্রৌঢ়া অরুণের মা ও পিসি। তাঁদের মারধরও করা হয়।

বোঝানো: গোঁসাইডাঙার মালপাড়ায়।-নিজস্ব চিত্র।

বোঝানো: গোঁসাইডাঙার মালপাড়ায়।-নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

ডাইনি অপবাদে ঘরছাড়া দুই প্রৌঢ়াকে গ্রামে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার গোঁসাইডাঙা গ্রামে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে আড়রা পঞ্চায়েত। উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুর মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়, বি়ডিও (রঘুনাথপুর ১) পূর্বিতা চট্টোপাধ্যায়, ব্লকের সিডিপিও অরুণাভ মাইতি প্রমুখ। গ্রামের মাল পাড়ার ওই শিবিরে ঘণ্টাখানেক ধরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন মহকুমাশাসক। কুসংস্কার নিয়ে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু প্রশাসনের চেষ্টায় কাজ কতটা হয়েছে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

সম্প্রতি গোঁসাইডাঙা গ্রামের দুই প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছিল ওই গ্রামে। অরুণ মাল ও মালা মাল নামে এক দম্পতির মৃত শিশুকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য ওই দুই প্রৌঢ়াকে নিগ্রহ শুরু করেন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। ওই দুই প্রৌঢ়া অরুণের মা ও পিসি। তাঁদের মারধরও করা হয়। ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের একটি ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রামের সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুই প্রৌঢ়াকে রাখা হয়েছে পড়শি জেলার একটি হোমে।

ডাইনি অপবাদে দুই মহিলাকে গ্রামের বাইরে থাকতে হওয়ায় প্রশাসন এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত অস্বস্তিতে পড়ে। এই শিবিরের দৌলতে ঘটনার ন’দিন পরে গ্রামে প্রশাসনের কর্তারা গেলেন। আড়রা পঞ্চায়েতের প্রধান মধুসূদন দাস বলেন, ‘‘এক দিনের কথাতেই সমস্ত কুসংস্কার নির্মূল করা সম্ভব নয়। আমরা শুরুটা করলাম। পরে আরও বেশি গ্রামবাসীর কাছে যাওয়া হবে।’’

এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ মাল পাড়ার মাঠে শিবির শুরু হয়। পাড়ার জনা তিরিশ মহিলা ও জনা কুড়ি পুরুষ সেখানে গিয়েছিলেন। তবে ঘটনার পরে পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে অনেক পুরুষই গ্রামছাড়া। মৃত শিশুর বাবা অরুণকে কাছে ডেকে, পাশে বসিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বোঝান মহকুমাশাসক। কুসংস্কারের ফলে গ্রামের বাসিন্দারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সে কথা বোঝানো হয়। দেবময়বাবু জানান, তাঁরা চাইছেন, দুই প্রৌঢ়াকে গ্রামে ফেরানোর ব্যাপারে গ্রামবাসীই উদ্যোগী হয়ে প্রশাসনকে জানাক। তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতেও যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’’ বাসিন্দাদের আরও কাছে পৌঁছনোর জন্য গ্রামে একটি স্বাস্থ্য শিবিরও করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু শিবিরে কাজ কতটা হল, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। শিবিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মহকুমাশাসকের কাছে আর্জি জানান, যাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হোক। গ্রামের বাসিন্দা জ্যোৎস্না মাল, রুমা মাল, বিকাশ মালরা বলেন, ‘‘যা ঘটেছে সেটা হওয়া উচিত ছিল না। আমরা চাই গ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।” তবে দুই প্রৌঢ়াকে গ্রামে ফেরানোর ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি তাঁরা। কিছু বলতে চাননি অরুণবাবুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Training Hag Training Camp ডাইনি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE