Advertisement
E-Paper

তালিকা ঘোষণার আগেই প্রচারে তৃণমূলের নেতা

দল এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। কিন্তু, তার আগেই প্রার্থী হিসাবে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। ঘটনাটি সোনামুখীর। বাঁকুড়ার তিনটি পুরসভার একটিতেও নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। অথচ সোনামুখী পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দোলন দত্তের নামে দেয়াল লিখন হওয়ায় রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:২৯
সোনামুখীর বড় কার্তিকতলায় মঙ্গলবার সকালে এই দেওয়াল লেখা দেখে হইচই পড়ে গিয়েছে। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

সোনামুখীর বড় কার্তিকতলায় মঙ্গলবার সকালে এই দেওয়াল লেখা দেখে হইচই পড়ে গিয়েছে। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

দল এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। কিন্তু, তার আগেই প্রার্থী হিসাবে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন।

ঘটনাটি সোনামুখীর। বাঁকুড়ার তিনটি পুরসভার একটিতেও নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। অথচ সোনামুখী পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দোলন দত্তের নামে দেয়াল লিখন হওয়ায় রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই। এটা দলবিরোধী কাজ বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। পুরভোটের আগে হাতে অস্ত্র পেয়ে বিরোধীরাও কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না।

সোনামুখীতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে। ওই পুরসভায় বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের সুরজিত্‌ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এলাকার বিধায়ক তথা কাউন্সিলর দীপালি সাহার গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুধু বিরোধী দলে কেন, জেলা তৃণমূলেও আলোচনার বিষয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই বিবাদের কথা জেনেই সাংসদ তথা দলের তরফে বাঁকুড়া জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি বাঁকুড়ায় এসে দু’জনকে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দেন। কড়া ভাষায় জানিয়েও যান, বাঁকুড়ায় বিরোধীদের হাতে থাকা একমাত্র পুরসভাটি এ বার যেন দলের ঝুলিতেই আসে। তৃণমূল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই দুই নেতা-নেত্রীর ‘তিক্ত’ সম্পর্কের কথা জেনেই শুভেন্দুবাবু বাঁকুড়ায় আসার আগে তাঁদের দু’জনের কাছেই সোনামুখী পুরসভার জন্য আলাদা করে প্রার্থী তালিকা চেয়েছিলেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। দু’টি তালিকা মিলিয়ে আগামী ১৯ মার্চ জেলার অন্য দু’টি পুরসভা বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের সঙ্গে সোনামুখীরও চূড়ান্ত তালিকা দলীয় ভাবে প্রকাশিত হওয়ার কথা।

কিন্তু, তার আগেই সোনামুখীতে প্রার্থীর নামে দেয়াল লিখন শুরু হয়ে যাওয়ায় দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় রাজনীতিতে তৃণমূল নেতা দোলন দত্ত বিধায়ক দীপালি সাহার অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। সুরজিত্‌ মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের একাংশের ক্ষোভ, “দল আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯ মার্চ তালিকা ঘোষণা করবে। আমরা এখনও জানি-ই না, কে কোথায় প্রার্থী হচ্ছেন। তার আগেই নিজেকে প্রার্থী বলে ঘোষণা করে দেয়াল লিখন নিঃসন্দেহে দল বিরোধী কাজ। বিষয়টি নিয়ে আমরা দলে সরব হব।”

সোনামুখীর বিদায়ী পুরপ্রধান তথা সিপিএম নেতা কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “ওই দলটায় শৃঙ্খলা বলে কিছুই যে নেই, এই ঘটনা তার বড় প্রমাণ। এমন দলকে স্থানীয় মানুষ এ বারও প্রত্যাখ্যান করবেন।” ঘটনা হল, সোনামুখী পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দীপালি ঘনিষ্ঠ দোলনকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে আগেই আভাস পেয়েছিল সিপিএম। দোলন প্রার্থী হচ্ছেন বলে এলাকাতেও খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ওয়ার্ডে গতবারও তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন তিনি। তবে সিপিএম প্রার্থী শুভেন্দু দত্তের কাছে তিনি হেরে যান। দোলনকে প্রার্থী করায় এমনিতেই ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বিক্ষুব্ধ। সব দিক ভেবেচিন্তেই সিপিএম এই ওয়ার্ডে নিজেদের প্রতীক চিহ্নে কোনও প্রার্থী দেয়নি। এই ওয়ার্ডে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী করা হয়েছে সব্যসাচী ঘরকে। এ নিয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শাসক দলের প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলেরই দু’টি গোষ্ঠীর যে দ্বন্দ্ব বাধবে, তা আমরা আগেই টের পেয়েছিলাম। নির্দল প্রার্থী এলাকার তৃণমূল এবং সিপিএম মনোভাবাপন্ন দু’দলের ভোটারেরই আস্থা পাবে। তাই আমরা দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিইনি।”

এখনই প্রচারে নেমে দলবিরোধী কাজ করেছেন বলে মানতে চাননি দোলন দত্ত। তাঁর বরং দাবি, “আমি দলের স্থানীয় নেতা সমীর সাহার (দীপালিদেবীর স্বামী) কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই প্রচারে নেমেছি।” দীপালিদেবীর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। সমীরবাবুকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। এখন কিছু বলতে পারব না।” সুরজিত্‌বাবু বলেন, “বাবা অসুস্থ। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। এখন কোনও মন্তব্য করব না।” যদিও জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য, ছাতনার বিধায়ক শুভাশিস বটব্যালের বক্তব্য, “সোনামুখীর ওই ওয়ার্ডে কোনও বিতর্ক নেই। এলাকার কর্মীদের প্রচারে নামতে বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই এই দেয়াল লিখন হয়ে থাকতে পারে। এতে অন্যায় কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না।”

swapan bandopadhay sonamukhi municipal poll tmc leader dolon dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy