Advertisement
১৯ মে ২০২৪

আলিমকে দেখতে ভিড় তৃণমূলের

শাসকদলের নেতা বলেই দু’বছর ধরে বীরভূমের পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি বলে অভিযোগ ছিল। নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় শেষমেশ তিনি গ্রেফতার হলেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাশে থাকার ‘বার্তা’ দিতে পুলিশ অফিসার খুনে ধৃত সেই নেতার সঙ্গে দেখা করতে ভিড় জমালেন তৃণমূলের নেতারা !

ধৃতকে হাজির করানো হচ্ছে দুবরাজপুর আদালতে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

ধৃতকে হাজির করানো হচ্ছে দুবরাজপুর আদালতে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৮
Share: Save:

শাসকদলের নেতা বলেই দু’বছর ধরে বীরভূমের পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি বলে অভিযোগ ছিল। নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় শেষমেশ তিনি গ্রেফতার হলেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাশে থাকার ‘বার্তা’ দিতে পুলিশ অফিসার খুনে ধৃত সেই নেতার সঙ্গে দেখা করতে ভিড় জমালেন তৃণমূলের নেতারা!

যা দেখে বিরোধীদের দাবি, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির ওই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এতটাই প্রভাবশালী যে তাকে দেখতে তৃণমূলের নেতাদের ছুটে আসতে হয়। তাঁর ওই ‘প্রভাবে’র কারণেই পুলিশ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার টিকি কোনও দিন খুঁজে পায়নি। খোদ বিভাগের অফিসার খুনে অভিযুক্তকে ধরতেই যদি পুলিশ এমন ‘নিরপেক্ষতা’র পরিচয় দেয়, তা হলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীর ক্ষেত্রে কী হবে— প্রশ্ন তুলছেন জেলার বিরোধী নেতারা। শাসকদলের নেতা বলে তাকে এত দিন ধরা হয়নি, এমন অভিযোগ যদিও মানতে নারাজ জেলা পুলিশ। উল্টো দিকে, অভিযুক্ত আলিমকে ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং পুলিশই তাঁদের নেতাকে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ ফাঁসিয়েছে— এমন অভিযোগ তুলছে শাসকদল তৃণমূল।

গত ২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের আউলিয়া গোপালপুর গ্রামে পুকুর সংস্কার করাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএমের সংঘর্ষ শুরু হযেছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পোঁছে ওই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন দুবরাজপুর থানার এসআই অমিত চক্রবর্তী। ৫৫ দিনে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে মৃত্যু হয় অমিতের। সেই মামলায় ৫০ জন সিপিএমের তৃণমূল নেতা-কর্মীর সঙ্গে অভিযুক্ত ছিলেন আলিমও। মাত্র ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হলেও অভিযুক্ত সিংহভাগ শাসকদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অমিতের স্ত্রী পুতুল সরকার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করলে দীর্ঘ ২০ মাস পরে ধরা পড়ে আলিম।

ঘটনা হল, দীর্ঘ দু’বছর পুলিশের খাতায় ফেরার থাকার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে সোমবার নিজের গ্রাম সালুঞ্চি থেকেই ধরা পড়ে আলিম। তার এক সপ্তাহ আগেই ওই নেতাকে ধরার ব্যাপারে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুতুলদেবী। আলিম যতই পুলিশ খুনে অভিযুক্ত হন, শাসকদলের লোক হওয়ায় তার জন্য যে ‘ভিন্ন’ ভাবনা— তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল গত জানুয়ারিতেই। যখন সরকারি আইনজীবী আদালতে আবেদন করে অমিত খুনে অভিুক্ত আলিম-সহ ৫০ জনের মধ্যে ৩৬ জনের নামই তুলে নিতে চেয়েছিলেন। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বিধানসভা ভোটের আগে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে মুখরক্ষা করতেই এমন আবেদন জানাতে পিপি-কে বাধ্য করেছিল শাসকদল। প্রবল সমালোচনার মুখে পরে পিছিয়ে আসেন পিপি। তখন অস্বস্তিতে পড়লেও শাসকদল দলের নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

সোমবারও তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলা মিত্র একই সুরে দাবি করেছিলেন, আলিম সে দিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। আর এ দিন ধৃতকে দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানো হলে অভিযুক্ত নেতার সঙ্গে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাত করতে আদালতে ছুটে আসেন দুবরাজপুর পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে, উপপুরপ্রাধন মির্জা সৌকত আলি-সহ একাধিক কাউন্সিলর। বিরোধীদের দাবি, ‘‘ভোট বৈতরণী পার করার জন্যই তৃণমূলের নেতারা আজ আদালতে ছুটেছেন। কারণ নেতারা আলিমের পাশে নেই, এই বিষয় স্পষ্ট হলে এলাকার ভোটবাক্সে প্রভাব পড়তে পারে— এমন আশঙ্কা রয়েছে শাসকদলের মনে।’’ যদিও বিরোধীদের বক্তব্য নিয়ে এ দিন সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি পীযূষবাবুরা। তবে এক নেতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আলিম অভিযুক্ত ঠিকই। কিন্তু দোষ এখনও প্রমাণ হয়নি। তাই সাক্ষাতে দোষ কোথায়?’’

এ দিনই ধৃত আলিমের জামিনের আবেদন নাকচ করেছে দুবরাজপুর আদালত। সরকারি আইনজীবী মণিলাল দে জানান, ধৃতের বিরুদ্ধে সিউড়ির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে বিচারাধীন মামলা রয়েছে। পাশাপাশি এ দিন ধৃতের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার (‘প্রোক্লেমশন অ্যাটাচমেন্ট’) অভিযোগও এনেছে পুলিশ। প্রথম মামলায় ধৃতকে আজ, বুধবার সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হবে। অপর মামলায় আগামী ১১ এপ্রিল ধৃতকে দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচরক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murder Alim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE