Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রার্থী করেনি শাসকদল, কর্মী-ক্ষোভ রঘুনাথপুরে

দাবি ছিল অন্তত দু’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া হোক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে। কিন্তু শাসকদলের প্রার্থী তালিকায় রঘুনাথপুর পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডের একটিতেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী নেই। আর তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতা-কর্মী-সমর্থকদের একাংশে। সেই ক্ষোভেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হলেন তিন বছর আগে আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর নাজিয়া পারভিনের স্বামী, তৃণমূল কর্মী শেখ মধু।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

দাবি ছিল অন্তত দু’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া হোক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে। কিন্তু শাসকদলের প্রার্থী তালিকায় রঘুনাথপুর পুরসভার ১৩টি ওয়ার্ডের একটিতেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী নেই। আর তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতা-কর্মী-সমর্থকদের একাংশে। সেই ক্ষোভেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হলেন তিন বছর আগে আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর নাজিয়া পারভিনের স্বামী, তৃণমূল কর্মী শেখ মধু। মঙ্গলবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন।

ভোটের হিসাব বলছে, রঘুনাথপুর পুরসভার ১, ২, ৫, ৬, ৭, ৮এই ছ’টি ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের ভোট হার-জিতে নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। শহরের মোট ভোটারের অন্তত ১৫-১৭ শতাংশ সংখ্যালঘু। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কেউ টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভের সুর শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের শাখা সংগঠন সংখ্যালঘু সেলের কর্মীদের গলাতেও। সংগঠনের রঘুনাথপুর শহর কমিটির সভাপতি সফি আলম বলেন, “১৩টি ওয়ার্ডের একটিতেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী না করার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা দলের নেতৃত্বর কাছে ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী করার আবেদন জানিয়েছিলাম। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিছুটা হলেও নির্বাচনে পড়ার আশঙ্কা থাকছেই।”

প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই রবিবার রাতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শেখ মধুে ক নির্দল প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেয় ওই ওয়ার্ডগুলির তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের একাংশ। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মধুকে যে দল টিকিট দিচ্ছে, সে ব্যাপারে এক প্রকার আগে থেকে নিশ্চিত ছিলেন ওই ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থকরা। মধুর নিজের দাবি, “প্রার্থী হিসাবে একমাত্র আমার নামই প্রস্তাব করে ওয়ার্ড কমিটি থেকে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছিল। বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিও আশ্বাস দিয়েছিলেন দলের টিকিট পাওয়ার বিষয়ে। কিন্তু তার পরে যেটা ঘটেছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।”

এই ওয়ার্ডে টিকিট পেয়েছেন বিধায়কের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা মৃত্যু্যঞ্জয় পরামানিক। শেখ মধু শেষ অবধি নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ায় এখানে লড়াইটা মৃত্যুঞ্জয়বাবুর পক্ষে কিছুটা কঠিন হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা। সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে বামফ্রন্ট কিন্তু এই ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে আরএসপি-র শেখ আনোয়ারকে। মৃত্যুঞ্জয় পরামানিক বলছেন, “আমি ৫ নম্বর থেকে দাঁড়াতে চাইনি। নেতৃত্বের নির্দেশে ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছি।” তাঁর দাবি, শেখ মধুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দলেরই একাংশ তাঁকে চাইছিলেন না। যদিও শেখ মধু ওই অভিযোগ মানতে চাননি।

শাসকদলেরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ, কথা দিয়েও রাখেনি দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে মন্ত্রী। এমনকী, গত পাঁচ বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড শহরের সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন করতে ব্যর্থ, এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে। শহরের জিডি ল্যাং হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য, তৃণমূলের শেখ নৌসাদ আলি কিংবা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী শেখ আল মামুনরা বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান দূর অস্ত, শিক্ষার উন্নয়নে শহরে গত পাঁচ বছরে একটি সরকারি মাদ্রাসা পর্যন্ত গড়া হয়নি।”

তবে, শেখ মধুর সঙ্গে দলের মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘু সমর্থক রয়েছে বলে পাল্টা দাবি তৃণমূলের প্রার্থীর অনুগামীদের। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো আবার জানিয়েছেন, রঘুনাথপুর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউই প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় নিয়ম মেনে আবেদন করেননি। তিনি বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী হতে চেয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও কর্মী আবেদন করলে নিশ্চই সেই আবেদন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE