Advertisement
E-Paper

আশায় ফোন করে যাচ্ছেন পরিজনেরা

দুর্যোগের মধ্যে দুর্গম কোনও জায়গায় তাঁরা হয়তো আটকে রয়েছেন। এমনই বিশ্বাস থেকে মঙ্গলবার এলাকার মন্দিরে ও দেবস্থানে পুজো দিলেন দুই ঠিকা শ্রমিক শুভঙ্কর তন্তুবায় ও অশ্বিনী তন্তুবায়ের পরিজনেরা।

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৬
জেলাশাসক ও সভাধিপতির কাছে পরিজনেরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

জেলাশাসক ও সভাধিপতির কাছে পরিজনেরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

উত্তরাখণ্ডের চামোলীতে ঋষিগঙ্গা নদীর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিখোঁজ পুরুলিয়ার দুই ঠিকা শ্রমিকের খবর পাওয়ার আশায় বুক রয়েছে পুরুলিয়ার আড়শার বাগানডি। রবিবার সকালের পর থেকে তাঁদের ফোন বন্ধ থাকলেও লাগাতার সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের পরিজনেরা। তাঁদের আশা, হয়তো হয়তো মোবাইল ফোনের ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে, নয়তো জল ঢুকে ফোন বিকল হয়ে পড়েছে। কিংবা দুর্যোগের মধ্যে দুর্গম কোনও জায়গায় তাঁরা হয়তো আটকে রয়েছেন। এমনই বিশ্বাস থেকে মঙ্গলবার এলাকার মন্দিরে ও দেবস্থানে পুজো দিলেন দুই ঠিকা শ্রমিক শুভঙ্কর তন্তুবায় ও অশ্বিনী তন্তুবায়ের পরিজনেরা। তাঁদের আশা, যে কোনও সময়ে আসতে পারে তাঁদের ফোন।

এ দিন সন্ধ্যায় নিখোঁজ শুভঙ্করের বাবা ভজহরি তন্তুবায়, দাদা রবীন্দ্র তন্তুবায় ও অশ্বিনীর দাদা লক্ষ্মী তন্তুবায় এবং পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল কুমার পুরুলিয়ায় এসে জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা খোঁজখবর রাখছেন বলে আশ্বাস দেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিসের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সেখান থেকেও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দু’টি পরিবারের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’’

মঙ্গলবার বারবার ভাই শুভঙ্করের নম্বরে ফোন করেন তাঁর দাদা রবীন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনও বার বার ভাইয়ের নম্বরে ফোন করে গিয়েছি। ‘সুইচ অফ’ বলছে। হাল ছাড়ছি না। আশা করি, আমাদের সবার প্রার্থনায় ভাইয়েরা সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবে।’’ নিখোঁজ অশ্বিনীর ফোন কখন আসে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরও পরিবার।

তবুও এ দিন পর্যন্ত কোনও খবর না আসায় উদ্বেগে রয়েছেন তাঁরা। উপরগুগুই শিবমন্দিরে পুজো দেন শুভঙ্করের বাবা ভজহরিবাবু ও অশ্বিনীর দাদা সহদেব তন্তুবায়। শুভঙ্করের দাদা রবীন্দ্রবাবু ও অশ্বিনীর স্ত্রী অনিতা পুজো দেন কেন্দুয়াডি বড়থানে (গ্রাম থান)।

ভজহরিবাবু বলেন, ‘‘ছেলেগুলো কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে, জানি না। খুব চিন্তা হচ্ছে। ওদের মঙ্গল কামনায় পুজো দিলাম।’’ রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘সুড়ঙ্গ থেকে বা জলকাদার মধ্যে থেকে এখনও কাউকে কাউকে উদ্ধার করা হচ্ছে। সে ভাবেই যদি ভাই ও তাঁর সঙ্গী অশ্বিনী যদি উদ্ধার হয়, সে জন্য মানত করেছি।’’ রবীন্দ্রবাবু জানান, রবিবার সকালে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ফোনের টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। ভাইকে রিচার্জ করে দিতে বলেছিলাম। সেই আমার সঙ্গে শেষ কথা।’’

অশ্বিনীর দাদা সহদেবও মনে করছেন তাঁর ভাইও ফিরে আসবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইয়ের খোঁজ পাওয়া যাবে, এই প্রার্থনা জানিয়েই পুজো দিয়েছি।’’ অশ্বিনীর স্ত্রী ও এক বছরের শিশুসন্তান রয়েছে। বিপর্যয়ের খবর পাওয়ার পর থেকেই অশ্বিনীর নম্বরে টানা ফোনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী অনিতা। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ আমার সঙ্গে ওর শেষ কথা হয়েছিল। জানিয়েছিল, কাজে বেরোচ্ছে। দুপুরে খাবার সময় ফোন করবে বলে জানিয়েছিল। সে ফোন আর এল না। পরে এক পরিচিত ফোন করে জানান, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ তাঁর আশা, ‘‘আমার মন বলছে কোথাও আটকে রয়েছে। ঠিক ফিরে আসবে।’’

ওই পরিবারগুলির সঙ্গে এ দিন পুজো দিতে গিয়েছিলেন আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল কুমার ও জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সুশান্ত মাহাতো। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা দু’টি পরিবারের সঙ্গেই রয়েছি। প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলছি।’’

missing Migrant Workers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy