Advertisement
E-Paper

ছাতনার তরুণ কৃষি বিজ্ঞানীর অপমৃত্যু

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত ছিলেন সৌরভ। এই নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতেন। চিকিৎসাও চলছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১০
সৌরভ হালদার। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ হালদার। নিজস্ব চিত্র

ভাড়া বাড়ির ঘরে ঝুলন্ত দেহ মিলল এক তরুণ কৃষি বিজ্ঞানীর। বুধবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরের মডেল স্কুলপাড়ায় মৃত সৌরভ হালদার (৩২) বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের জুনিয়র সায়েন্টিস্ট পদে কর্মরত ছিলেন। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাড়গ্রাম ক্যাম্পাসে রয়েছে ওই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। সৌরভের বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা থানার পলসড়া গ্রামে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত ছিলেন সৌরভ। এই নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতেন। চিকিৎসাও চলছিল।

কল্যাণীর ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরের পর বছর ছ’য়েক আগে তিনি ঝাড়গ্রাম কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে জুনিয়র সায়েন্টিস্ট পদে যোগ দেন। সম্বন্ধ করে বছর দেড়েক আগে বিয়ে হয় তাঁর। স্ত্রীর সঙ্গে ঝাড়গ্রামে ভাড়া বাড়িতেথাকতেন সৌরভ।

সহকর্মীরা জানান, কয়েকদিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে মেদিনীপুরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন সৌরভ। স্ত্রী বাবার বাড়িতে থেকে যান। সৌরভ বুধবার ফিরে কাজে যোগ দেন। তবে সন্ধ্যার পর পরিবারের লোকজন আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সৌরভের মোবাইল ক্রমাগত বেজেই যায়। পরিবারের তরফে বাড়িওয়ালাকে ফোন করা হলে তিনি গিয়ে দেখেন দরজা ভেজানো। দরজা ঠেলতেই দেখা যায়, সিলিং থেকে দড়ির ফাঁসে ঝুলছেন সৌরভ। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম পুলিশ মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।

জানা গিয়েছে, বুধবার ঝাড়গ্রাম কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে পর বেরিয়ে যান সৌরভ। তারপর ভাড়া বাড়িতেই ফিরেছিলেন। পরে ফের একবার বেরিয়ে আবার বাড়িতে ঢোকেন।

কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট অসীম মাইতি বলেন, ‘‘বুধবার বিকেল তিনটে নাগাদ কেন্দ্রে সৌরভের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা হয়। তখন অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। নিজের কাজটা ও মন দিয়ে করত। তবে শারীরিক সমস্যার জন্য মাঝে মধ্যে মন খারাপ করত।’’

সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, সৌরভের পেটের সমস্যা ছিল দীর্ঘদিনের। অসুস্থতার নিয়ে মাঝে মধ্যে আক্ষেপও করতেন। সৌরভের দাদা কলকাতা পুলিশের কর্মী সৌমাল্য হালদারও মানলেন, ‘‘শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ভাই কিছুটা উদ্বেগে থাকত। চিকিৎসা চলছিল। অসুস্থ হলে বিচলিত হয়ে পড়ত। ওকে ভরসা দিতাম। এমন পরিণতি যে হবে কেউই ভাবতে পারিনি।’’

এ দিন ময়নাতদন্তের পরে দেহ পলসড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সৌরভের মৃত্যু সংবাদে শোকে মুহ্যমান তাঁর স্ত্রী সায়ন্তিনী। বাঁকুড়ার বাড়িতে ঘনঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন সৌরভের বাবা ও মা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম হল পরিপাক নালির একটি ক্রিয়ামূলক ব্যাধি। এই রোগের মূল উপসর্গ পেটে ব্যথা ও মলত্যাগের সামঞ্জস্যের পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে গুরুতর মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক তথা ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রণবরঞ্জন মজুমদার বলছেন, ‘‘জ্যোতি বসুও এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন। তবে পরিবারের তরফেও রোগীকে মানসিক ভরসা জোগাতে হবে।’’

Chhatna Scientist unnatural death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy