সচেতনতার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র।
চোলাইয়ের প্যাকেট ভর্তি ব্যাগ নিয়ে সাইকেলে কিংবা মোটরবাইকে ফেরিওয়ালা পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামে গ্রামে। এ ভাবে চোলাই সহজে হাতে চলে আসায় নেশাড়ুদের সংখ্যা গ্রামে বাড়ছিল। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল ঘরে ঘরে অশান্তি। তাই গ্রামবাসীকে নেশামুক্তির বার্তা দিতে পথে নামলেন গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। ‘করব মোরা নেশা বর্জন, গড়ব সুখের জীবন’ অথবা ‘একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ, একটি পরিবার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ঠ’— এমন নানা স্লোগানে গ্রামের বিভিন্ন পাড়ার বিদ্যুতের খুঁটি বা দেওয়াল ভরিয়ে তুলেছেন তাঁরা। আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামের এই উদ্যোগের প্রশাংসা করছে বিভিন্ন মহল। আড়শার বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন, ‘‘নেশার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে গ্রামের জনগোষ্ঠী যদি এ ভাবে এগিয়ে আসে, তাঁদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়।’’
‘চলো এগিয়ে যাই’ নামে গ্রামেরই একটি সামাজিক সংগঠন বৃক্ষরোপণের বার্তা দেওয়া, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে মানুষজনকে অবগত করার পরে এ বার নেশামুক্তির বার্তা দিতে নেমেছে। ওই সংগঠনের সদস্য প্রসেনজিৎ মাহাতো, বিষ্ণু সিং সর্দারের কথায়, ‘‘শুধু বামুনডিহা গ্রামেই নয়, আশপাশের এলাকা জুড়েই চোলাইয়ের রমরমা বাড়ছে। তাই সবাইকে নেশা থেকে দূরে রাখতে সচেতনতার বড় প্রয়োজন রয়েছে।’’
সংগঠনের সদস্য দেবীলাল মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় চোলাইয়ের এমন বাড়বাড়ন্ত আগে ছিল না। আগে লুকিয়ে চুরিয়ে বিক্রিবাট্টা হত। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, মোটরবাইক বা সাইকেলে ব্যাগ নিয়ে কিছু লোকজন গ্রামে আসাযাওয়া করছেন। দেখলে মনে হবে, সাধারণ ফেরিওয়ালা। কিন্তু ওঁদের ব্যাগের মধ্যে থাকে চোলাইয়ের প্যাকেট। আড়ালে গিয়ে খদ্দেরদের তাঁরা চোলাই বিক্রি করছেন।’’
গ্রামের স্বনির্ভর দলের নেত্রী গীতারানি লায়া ও কুন্তী সিং সর্দারের কথায়, ‘‘চোলাই খেয়ে অনেক বাড়িতে অশান্তির ঘটনা বাড়ছে। আমাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। আমরাও এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছি। সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেওয়ায় নেশার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হচ্ছে।’’
নেশা-মুক্ত গ্রাম গড়ার ডাক দিয়ে জরিমানার ফতোয়া দিয়ে ইতিপূর্বে নজর কেড়েছে আড়শা ব্লকেরই চিতিডি গ্রাম। কোটশিলা থানার উপরবাটরি গ্রামের মহিলা সমিতিও মদ বিক্রি বন্ধ করতে গ্রামে দেওয়াল লিখেছিল। মেলায় মদ বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বামুনডিহা গ্রাম সংলগ্ন কংসাবতী তীরের দশগ্রাম মকর সংক্রান্তির মেলা কমিটিও। নেশা করার প্রবণতা আটকাতে সচেতনা ছড়ানোর উদ্যোগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পুরুলিয়া জেলা আবগারি দফতরের আধিকারিক অসিত শর্মার অবশ্য দাবি, ‘‘চোলাইয়ের বিরুদ্ধে দফতর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ধরপাকড়ও হচ্ছে। বামুনডিহা এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy