Advertisement
E-Paper

আলোচনায় কাজ হল না, স্কুলে তালাই

বৃহস্পতিবারেও খুলল না স্কুলের দরজার তালা। ফলে টানা চার দিন ধরে বন্ধ থাকল পঠনপাঠনও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০০:৪৭
পড়ুয়াদের সঙ্গে জেলা শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের সঙ্গে জেলা শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা আলোচনা করতে এলেন। কিন্তু, তাতেও অচলাবস্থা কাটল না রঘুনাথপুরের মধুতটি হাইস্কুলের। বৃহস্পতিবারেও খুলল না স্কুলের দরজার তালা। ফলে টানা চার দিন ধরে বন্ধ থাকল পঠনপাঠনও।

এ দিনও স্কুলের সামনে খাটানো সামিয়ানার নীচে বসে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাদের বোঝাতে আসেন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (পুরুলিয়া) সত্যজিৎ রায়, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (রঘুনাথপুর) স্বরূপ দে এবং রঘুনাথপুর ১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুবীর কর্মকার। কিন্তু, স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের এক মাত্র বাংলার শিক্ষক কমলাকান্ত হাঁসদার বদলির নির্দেশ রদ না হওয়া পর্যন্ত পড়ুয়ারা স্কুল বন্ধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে বলে আধিকারিকদের জানিয়ে দেয়। যদিও স্কুলের সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে বলে এ দিনও আশা প্রকাশ করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে তিন আধিকারিক স্কুলে গিয়েছিলেন। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

কমলাকান্তবাবু শিক্ষকতার পাশাপাশি বিজেপির অন্যতম জেলা সম্পাদকও বটে। তাই তাঁর বদলির নির্দেশকে ঘিরে রাজনৈতিক রং লেগে গিয়েছে। আদ্রার বাসিন্দা ওই শিক্ষককে ঝাড়গ্রামের জামবনিতে বদলির পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে বলেও কমলাকান্তবাবু অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও তা মানতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে পড়ুয়াদের দাবি, ওই শিক্ষক যেমন ভাল বোঝান তেমনই ছাত্রদরদীও বটে। তা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তিনিই এক মাত্র বাংলার শিক্ষক। তাই ওই শিক্ষককে ধরে রাখতে তারা আন্দোলনে নেমেছে।

সোমবার বদলির নির্দেশ আসার পরেই স্কুলে বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার স্কুলে তালা ঝোলে। বুধবার থেকে সামিয়ানা খাটিয়ে চলছে বিক্ষোভ। প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা এসেও পড়ুয়াদের নরম করতে পারেনি।

কমলাকান্তবাবুর মতোই বিরোধী শিক্ষক সংগঠন মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষাকর্মী সমিতির (এসটিইএ) জেলা কমিটির সদস্য সন্দীপ মণ্ডলকেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত সাঁতুড়ি স্কুল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে বদলি করার নির্দেশ এসেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ওই সংগঠন। এসটিইএ প্রতিবাদ জানিয়ে এ দিন জেলা শিক্ষা দফতর ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিল। সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী কোনও স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে বা অন্যান্য কিছু কারণে শিক্ষকদের বদলি করা হয়। তবে তা বরাবর জেলার মধ্যেই হয়ে থাকে। কিন্তু, এখানে যে রাজনীতি করা হচ্ছে তা স্পষ্ট।’’

জেলা শিক্ষা দফতরের বক্তব্য, সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে এই বদলির নির্দেশ আসায় তাদের পক্ষে এ ক্ষেত্রে কার্যত কিছুই করণীয় নেই। নিয়ম অনুযায়ী সরকারী নির্দেশ স্কুল কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে মানতে হবেই। এই বিষয়টিই এ দিনও মধুতটির পড়ুয়াদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। বরং জেলা শিক্ষা দফতর বদলির নির্দেশ রদ করতে না পারলে প্রয়োজনে সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্তাদের স্কুলে আসার দাবি জানিয়েছে পড়ুয়াদের একাংশ।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেশচন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘‘স্কুলে ঢুকতে না পারায় প্রশাসনিক-সহ অন্যান্য সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে আছে। পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থা কত দিন চলবে, বোঝা যাচ্ছে না।’’ অন্য দিকে, জেলা প্রশাসনও মধুতটি স্কুলের ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্ত। পড়ুয়াদের কথা ভেবে এখনও জোর করে তালা খোলানোর কথা ভাবছে না প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভে বসে থেকে পড়াশোনার ক্ষতি করছে। মনে হয় সচেতন অভিভাবকরাই চাইবেন স্কুল খুলুক।’’

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় এ দিনও বলেন, ‘‘জেলা শিক্ষা দফতর পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।”

Raghunathpur Education Department School District education department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy