তৃণমূলের পাশে নেই কুড়মিরা। — ফাইল চিত্র।
কুড়মি সম্প্রদায়কে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি নিয়ে রাজ্য তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি— এই অভিযোগে আগেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে আদিবাসী কুড়মি সমাজের। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়াল তারা। সোমবার আদিবাসী কুড়মি সমাজ পুরুলিয়ায় ঘোষণা করল, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সংগঠনের নেতৃস্থানীয় কেউই পঞ্চায়েত ভোটে যোগ দেবে না।
এ দিন সংগঠনের মূল মানতা অজিত মাহাতো বলেন, রেল ঠেকা (রেল অবরোধ, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২) এবং ও ডহর ছেঁকা (পথ অবরোধ, ৫ এপ্রিল, ২০২২) আন্দোলনের পরে রাজ্য সরকার আমাদের দাবির স্বপক্ষে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রক্ষা করেনি। তার প্রেক্ষিতেই আদিবাসী কুড়মি সমাজ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমত, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী কুড়মি সমাজ রাজ্যের শাসকদলের বিরোধিতা করবে। দ্বিতীয়ত, কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষও অবলম্বন করবে না। তৃতীয়ত, তাদের সংগঠনের কোনও নেতা সরাসরি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন না। এমনকি কোনও রাজনৈতিক দলের সভা, মিছিলেও যাবেন না। তবে নিজেদের সাংগঠনিক বৈঠকে বা সভায় এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা সরব হবেন। চতুর্থত, কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনও ব্যক্তির দেওয়ালে বিনা অনুমতিতে রাজনৈতিক দলের প্রচারও করতে দেওয়া হবে না। সরাসরি কোনও দলের নাম না বললেও আদিবাসী কুড়মি সমাজের এই সিদ্ধান্ত আসলে তাদের তৃণমূলের থেকে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা, এমনই দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা ওই আন্দোলনের বিরোধিতাও করিনি। ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই কেন্দ্রের কাছে তাঁদের দাবির সমর্থনে চিঠি লিখেছিলেন।’’ পয়লা বৈশাখ পুঞ্চায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে দেওয়াল দখলের পাশাপাশি দলীয় প্রতীক আঁকার কাজ শুরু করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনেরও নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে। আমাদের দলেও কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্বভার সামলান। অজিতবাবু নিজস্ব সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা থেকে ও কথা বলতেই পারেন। তবে সে জন্য কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বিসর্জন দেবেন, একথা কতটা যুক্তিযুক্ত?’’
অ-আদিবাসীদের জনজাতি তালিকাভুক্ত করা যাবে না বলে সম্প্রতি সরব হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতি’-সহ আদিবাসীদের বেশ কিছু সংগঠন। সে প্রসঙ্গে এ দিন আজিত বলেন, ‘‘আমরা এর বিরোধিতা করছি। কুড়মি সম্প্রদায়কে অ-আদিবাসী বলে যে দাবি করা হচ্ছে, যা সত্যি নয়। আমরা প্রকৃত তথ্য দিয়ে এর পাল্টা প্রচারে নামব। তবে কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দিয়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সৌভ্রাতৃত্বমূলক সহাবস্থানই বজায় রাখবে কুড়মি জনগোষ্ঠী।’’ অজিতের দাবি, ‘‘আমরা এতদিন নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এ বার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘তৃণমূল জাতপাতের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। সবাই সমান। কোনও জনগোষ্ঠী কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবে বা করবে না, এই সংস্কৃতি বাংলায় ছিল না। আজও নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের মতে, ‘‘ওঁদের দাবির সমর্থনে আমাদের অবস্থান কী হবে, তা রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করবেন। এই আন্দোলনের মূল মানতা অজিতবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, কোনও জনগোষ্ঠীর কোনও ব্যক্তি সম্পর্কে কি এ ভাবে ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে? দেওয়াল লিখতে হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হয়। কুড়মি সম্প্রদায়ের কোনও নেতা বা কর্মী, যিনি আমাদের প্রার্থী হবেন, তিনি দলের কোনও সমর্থকের দেওয়ালে লিখতে পারবেন না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy