Advertisement
১৮ জুন ২০২৪

মাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ, ধৃত ছেলে

মদ খেয়ে প্রায়ই অশান্তি বাঁধত মায়ের সঙ্গে ছেলের। সেই অশান্তির জেরেই শনিবার রাতে ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া সদর থানার কদমাঘাটি এলাকার ঘটনা। বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

মদ খেয়ে প্রায়ই অশান্তি বাঁধত মায়ের সঙ্গে ছেলের। সেই অশান্তির জেরেই শনিবার রাতে ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া সদর থানার কদমাঘাটি এলাকার ঘটনা। বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার করা হয় তাঁর অভিযুক্ত লালমোহন বাউরিকে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আশা বাউরি (৭২) কদমাঘাটির বাউরিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ছোট ছেলে লালমোহন বাউরির সঙ্গে থাকতেন। আশাদেবীর বড়ছেলে কালীপদ বাউরি ওই এলাকায় থাকলেও মা ও ভাইয়ের থেকে আলাদা থাকেন।

নিহতের পরিবার ও পড়শি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে লালমোহনের বিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ তার অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বাপের বাড়ি ফিরে যান স্ত্রী। এ দিকে লালমোহন কোনও কাজ করত না। আশাদেবী বার্ধক্যভাতা পেতেন। সেই টাকাতেই সংসার ও ছেলের মদ খাওয়ার খরচ যোগাতে হতো তাঁকে। এ দিকে প্রতিদিন রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে মাকে পেটানো অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল লালমোহনের। পড়শিরা জানাচ্ছেন, তাঁরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন বহুবার। কিন্তু লালমোহন কারও কথা শুনত না। মাঝে আশাদেবী ওন্দার সাহাপুরে নিজের মেয়ের বাড়িতে কিছু দিন চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও গিয়ে অশান্তি করে তাঁকে ফের কদমাঘাটিতে ফিরিয়ে আনে লালমোহন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার রাতে প্রথমে মদ্যপ অবস্থায় কদমাঘাটি এলাকায় এক ব্যক্তির দোকানে ঢুকে ঝামেলা পাকায় লালমোহন। সেই দোকানের লোকজনের হাতে মার খায় সে। এরপরেই বাড়ি ফিরে এসে মায়ের সঙ্গে অশান্তি ও মারধর শুরু করে। পড়শিরা বাড়িতে এসে প্রতিবাদ জানালে লালমোহন তাঁদের চলে যেতে বলে।

লালমোহনের পিসতুতো ভাই কদমাঘাটিরই বাসিন্দা বামাপদ বাউরি জানান, রাত ১টার পরে তাঁর বাড়িতে দরজার সামনে এসে হাঁকডাক শুরু করে লালমোহন। প্রথমে বামাপদবাবু মদ্যপ ভাইয়ের ডাকাডাকিতে সাড়া দেননি। কিন্তু পরে দরজা খুলতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, “লালমোহন বলে মা মারা গিয়েছে। কী করে মারা গেল জানতে চাইলে নিজেই খুন করেছে বলে জানায়। সে নেশার ঘোরে ভুলভাল বকছে ভেবে আমি তাকে ধমক দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলি।” লালমোহন চলে যেতেই তিনি কালীপদবাবুকে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। কাছেই থাকলেও কালীপদবাবুও ঘটনাটি জানতেন না। এরপরে ওই রাতেই গ্রামের লোকজনদের জাগিয়ে লালমোহনের বাড়িতে যান বামাপদবাবু। বাড়িতে গিয়ে দেখেন আশাদেবীর দেহ চাদর, ত্রিপল ঢাকা দিয়ে বাড়ির ভিতরে দেওয়ালের ধারে ফেলে রাখা হয়েছে।

গ্রামবাসীর দাবি, লালমোহন ওই রাতে তাঁদের কাছে নিয়েই মাকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। কিছু গ্রামবাসী রেগে গিয়ে লালমোহনকে মারধরও করেন। অন্যেরা তাঁদের থামিয়ে লালমোহনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন।

রবিবার সকালে পুলিশ গিয়ে মৃতার দেহের চাদর ও ত্রিপল সরায়। পুলিশ জানাচ্ছে, বৃদ্ধার দেহের বিভিন্ন জায়গায় ধারাল অস্ত্রের কোপ রয়েছে। কালীপদবাবু ভাইয়ের বিরুদ্ধে তাঁর মাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। কালীপদবাবু এখন দাবি করছেন, “মাকে কতবার বলেছিলাম ভাইয়ের কাছে না থেকে আমার কাছে অথবা বোনেদের কাছে থাকতে। কিন্তু মা ছোটছেলেকে খুব ভালবাসত। সেই ভালবাসাই শেষে কাল হয়ে দাঁড়াল।”

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, লালমোহনের বিরুদ্ধে স্ত্রীর উপর নির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগ আগেও দায়ের হয়েছে থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, যে অস্ত্র দিয়ে মাকে কোপ মেরে খুন করেছে লালমোহন, তা উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ।

কয়েক সপ্তাহ আগেই বাঁকুড়া শহরের পাঁচবাগার যুবক বিশ্বনাথ কুম্ভকার তাঁর বৃদ্ধা মা মণি কুম্ভকারকে খুন করে বাড়ির আঙিনায় পুঁতে দিয়েছিল। ঘটনার নৃশংসতা নাড়িয়ে দিয়েছিল অনেককেই। কদমাঘাটির ঘটনাটিতেও অনেকেই পাঁচবাগার ঘটনার ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন। বয়স্কদের এই নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে বলে অনেকে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura Woman Stabbed to death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE