নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের এই ফাঁকা জায়গা থেকে মোটরবাইক-সহ পড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র ।
নির্মীয়মাণ উড়ালপুল থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল দুই মোটরবাইক আরোহীর। বুধবার রাতে ধানবাদ-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কে, পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাষ রোডের অদূরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত আনন্দ মাহাতো (৩৫) ও স্বপন মাহাতো (৩৫) পুরুলিয়া মফস্সল থানার রানিবাঁধ গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পরে আহতদের উদ্ধার করে জয়পুর থানার পুলিশ পুরুলিয়া মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। ওই অংশে রাস্তা ঠিকমতো বন্ধ রাখা হলে দুর্ঘটনা ঘটত না বলে দাবি করে নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গা ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়েরা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন, “কারও গাফিলতিতে এই ঘটনা কি না, তা খোঁজ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে জাতীয় সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলব।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই অংশে জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ চলছে। পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাষ রোডের অদূরে বাইপাস হয়ে ঝাড়খণ্ডমুখী রাস্তায় রয়েছে নির্মীয়মাণ উড়ালপুলটি। উড়ালপুলের মাঝের অংশে চলছে স্তম্ভ তৈরির কাজ। ঘটনার সময়ে উড়ালপুলের দু’প্রান্তের মধ্যবর্তী ওই নির্মীয়মাণ স্তম্ভের ফাঁকা জায়গা থেকে ওই দুই বাইক আরোহী পড়ে যান বলে প্রাথমিক ভাবে জেনেছে পুলিশ।
কী ভাবে তবে এই ঘটনা, ধন্দে এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, মৃতেরা এলাকারই বাসিন্দা। ওই অংশে কাজ চলছে জানার পরেও কেন ওই রাস্তায় তাঁরা গেলেন, মিলছে না উত্তর। পথ ভুলে না কি কেউ তাঁদের ওই পথে যেতে বাধ্য করেছিল, চর্চা চলছে এলাকায়। পুলিশ সূত্রে যদিও জানা যাচ্ছে, ওই যুবকদের বাইক অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছিল। তা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
ঘটনার জন্য রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থার দিকেও আঙুল উঠছে। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, উড়ালপুলের মুখে কাজ চলার নির্দেশক বোর্ড রাখা রয়েছে। ব্যারিকেড থাকলেও তা এমন ভাবে দেওয়া যে, কেউ হেঁটে বা মোটরবাইক নিয়ে অনায়াসে যেতে পারে। রানিবাঁধ গ্রামেরই এক বাসিন্দা বিষ্ণুচরণ মাহাতো বলেন, “যদি রাস্তাটি ঠিকমতো বন্ধ করে রাখা হত, ছেলে দু’টো ওই পথে ঢুকতেই পারত না আর এই পরিণতিও হত না।”
পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য স্বপনের অকালমৃত্যুতে অথৈ জলে তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী-সহ দুই সন্তান। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করা স্বপনের স্ত্রী সুনীতা বলেন, “ওঁরা দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের জনমডি গিয়েছিলেন গরু কেনার জন্য। রাতে দুর্ঘটনার খবর পাই। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। ওই পথে দিয়ে তাঁরা কেন গেলেন, তা-ও জানি না।” একই পরিস্থিতি আনন্দের পরিবারেও। পরিবারে রয়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। আনন্দের স্ত্রী প্রভাতী বলেন, “স্বামীর উপার্জনেই সংসার চলত। এখন কী হবে, জানি না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচই বা কী ভাবে জোগাড় করব, জানা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy