Advertisement
E-Paper

একটি বন্ধই, ঝাঁপ পড়ছে অন্য কারখানারও

এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর জেরে সপ্তাহ দুয়েক আগে বিক্ষোভ-ভাঙচুর হয়েছিল কারখানায়। নিরাপত্তাজনিত কারণে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের গোবরান্দা গ্রামে জলের পাইপ তৈরির কারখানাটি এখনও বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। এ বার পাশের মঙ্গলদা গ্রামে নিজেদের অন্য কারখানাটিও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল ওই শিল্প সংস্থা।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:৫৫
খুলবে কবে?—নিজস্ব চিত্র।

খুলবে কবে?—নিজস্ব চিত্র।

সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, আজ, সোমবার থেকেই মঙ্গলদার পাইপ তৈরির কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আপাতত কাজ হারাচ্ছেন জনা চল্লিশ কর্মী। তাঁদের বেশিরভাগই স্থানীয় বাসিন্দা। ও দিকে, গোবরান্দা গ্রামের কারখানাটি দ্রুত খোলার দাবিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন কাজ হারানো শতাধিক ঠিকা শ্রমিক। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর জেরে তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতার নেতৃত্বে গোবরান্দার পাইপ তৈরির কারখানায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ। মার খান কারখানার কয়েক জন কর্মী। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁদের কাউকে পুলিশ ধরেনি। তার পরেই নিরাপত্তাজনিত কারণে কারখানাটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি পাশের গ্রামের কারখানাটিও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই সংস্থা। তাদের দাবি, মঙ্গলদা গ্রামের কারখানাটিতে বরাতের সমস্যা থাকায় দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যত শূন্য। আর্থিক ক্ষতির কারণে ওই সিদ্ধান্ত। তবে, বেসরকারি সংস্থাটির কর্ণধার, কলকাতার বাসিন্দা অঞ্জন মজুমদার বলেন, “অনেক দিন ধরেই লোকসানে চলছে মঙ্গলদার কারখানাটি। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এখানকার কিছু কর্মীকে অন্যত্র কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু, সম্প্রতি কিছু বিষয় জানার পরে আশঙ্কা করছি, গোবরান্দার ঘটনার পুনরাবৃত্তি মঙ্গলদাতেও হতে পারে।” যদিও এই কারখানার শ্রমিকদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। জনা তিরিশেক শ্রমিক সকলেই মঙ্গলদা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে নিরঞ্জন বাউরি, গণেশ বাউরিদের ক্ষোভ, “চার বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করছি। পরিবারের ভরণপোষণে এই কারখানাই সম্বল। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই বিনা কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।” শ্রমিকদের আরও অভিযোগ, কারখানা বন্ধ হলেও ছ’জন স্থানীয় শ্রমিককে কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে বহাল রাখা হয়েছে।

পুরুলিয়ায় শিল্পায়নের মুখ হিসাবে রঘুনাথপুরকে তুলে ধরার রাজ্যের উদ্যোগের মাঝেই পরপর দু’টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া শিল্পের পরিবেশের পক্ষে খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয় বলেই মনে করছে জেলা তৃণমূলের একাংশ। বিশেষ করে, যেখানে একটি কারখানা বন্ধ হওয়ার পিছনে ব্লকের শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীদের নাম জড়িয়েছে। গোবরান্দা গ্রামের কারখানার কাজ হারানোর শ্রমিকদের অন্যতম উৎপল বাউরি,অরূপ চক্রবর্তী, কালীপদ বাউরিরা বলেন, “এই কারখানায় কাজ করেই সংসার চলত। কবে কারখানা খুলবে বুঝতে পারছি না। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত কারখানা খোলানোর ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছি।”

কারখানার মালিক অঞ্জনবাবু বলেন, “বিনা কারণে কর্মীরা মার খেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেই কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসন কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে কারখানা খোলা সম্ভব নয়।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, রঘুনাথপুরে এমন পরিস্থিতি নেই যে, নিরাপত্তার অভাবে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। তাঁর কথায়, “শ্রমিক মৃত্যুর জেরে একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রশাসন চেষ্টা করছে। তবে মালিকপক্ষকেও এগিয়ে এসে কারখানা খুলতে উদ্যোগী হতে হবে।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা জানিয়েছেন, গোবরান্দার কারখানাটি খোলার জন্য শ্রম দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আজ, সোমবার কারখানা কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রঘুনাথপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার সবুজবরণ ঢালি। তিনি বলেন, “সোমবারের বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চাইব, ওঁরা ঠিক কী ধরনের নিরাপত্তা চাইছেন।”

raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy