Advertisement
E-Paper

ঐক্য-বার্তাই সার তৃণমূলে দ্বন্দ্বের জেরে ফের অনাস্থা পঞ্চায়েতে

যতই ঐক্যের বার্তা দিন না কেন জেলা নেতৃত্ব, বাঁকুড়ায় সেই তৃণমূল বনাম তৃণমূল! এ বার শাসকদলের দ্বন্দ্বের ছবি ধরা পড়ল বিষ্ণুপুরের বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতে। দলের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, অনাস্থা আনার আগে জেলা নেতৃত্বের অনুমতি নিতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
অনাস্থা দিয়ে বেরিয়ে আসছেন তৃণমূলের সদস্যেরা।—নিজস্ব চিত্র।

অনাস্থা দিয়ে বেরিয়ে আসছেন তৃণমূলের সদস্যেরা।—নিজস্ব চিত্র।

যতই ঐক্যের বার্তা দিন না কেন জেলা নেতৃত্ব, বাঁকুড়ায় সেই তৃণমূল বনাম তৃণমূল!

এ বার শাসকদলের দ্বন্দ্বের ছবি ধরা পড়ল বিষ্ণুপুরের বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতে। দলের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, অনাস্থা আনার আগে জেলা নেতৃত্বের অনুমতি নিতে হবে। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার বেলশুলিয়ার ৮ জন তৃণমূল সদস্য দলেরই প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এই অনাস্থার পিছনে আসলে তৃণমূলের বেলশুলিয়া অঞ্চল সভাপতি মান্নান কোটাল এবং সহ-সভাপতি কল্যাণ কাপড়ির দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা। পাশাপাশি এই দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকাশ্যে এনেছে ‘আদি তৃণমূল’ ও ‘নব্য তৃণমূল’-এর লড়াইকেও।

এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনই তৃণমূলের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর প্রধান ও উপপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন যথাক্রমে মান্নান-অনুগামী উমা লোহার ও আবু তাহের মণ্ডল। তাঁদের বিরুদ্ধে গত এক বছর ধরে পঞ্চায়েতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছেন কল্যাণ-অনুগামী পঞ্চায়েত সদস্যেরা।

কল্যাণবাবুর দাবি, “বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ সদস্যই মান্নানের অঙ্গুলিহেলনে চলা প্রধান-উপপ্রধানের আঁতাঁত মেনে নিতে পারছিলেন না। নিজেদের পয়সা লোটা ছাড়া এলাকায় উন্নয়ন কিছুই হচ্ছিল না। তাই ওদের প্রতি অনাস্থা আনতে বাধ্য হলেন তাঁরা।” কল্যাণবাবুর দাবিকে সমর্থন করেছেন অনাস্থার চিঠিতে স্বাক্ষর করা দলের ৮ পঞ্চায়েত সদস্যই। স্বাক্ষরকারীদের পক্ষে পিরু মাঝি, মিঠু কৌলি বলেন, “আমাদের সঙ্গে কথা না বলে উল্টোপাল্টা কাজ হচ্ছিল। সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনাস্থা আনতে বাধ্য হলাম।” অনাস্থা প্রস্তাব আনাকে ঘিরে যাতে কোনও অশান্তি না হয়, সে জন্য পঞ্চায়েত চত্বরে এ দিন ছিল পুলিশি ব্যবস্থাও।

যদিও এই ঘটনাকে ‘দল-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে অঞ্চল সভাপতি মান্নান কোটাল বলেন, “দলের জন্য দশ বছর ঘরছাড়া থাকতে হয়েছে। আর এখন সিপিএম থেকে দলে ঢোকা কিছু লোক আমাদের ভাল কাজকে পণ্ড করে দিতে চাইছে! এই অনাস্থা যে দল-বিরোধী, তা আমি ব্লক সভাপতিকে জানিয়েছি।”

তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানের বক্তব্য, “মিথ্যা কথা বলে কিছু মানুষকে সাময়িক ভুল বোঝানো যায়। কিন্তু, সেটা সত্যি হয়ে যায় না। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কী প্রমাণ আছে, তা আগে ওরা দেখাক।” পঞ্চায়েতে অনাস্থা ডেকে দলের ভাবমূর্তিকেই হেয় করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতি মথুর কাপড়ি বলেন, “দলকে না জানিয়ে দলেরই একাংশ আমাদের প্রধান-উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনল কী করে, বুঝতে পারছি না। এটা অবশ্যই দল-বিরোধী কাজ। আমি জেলা নেতৃত্বকে সব জানাব।”

অথচ গত শুক্রবারই বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে জেলা পরিষদের প্রথম বার্ষিক অধিবেশনে সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীর বার্তা ছিল, যখন তখন পঞ্চায়েতে অনাস্থা না এনে আলোচনার মাধ্যমে জট কাটাতে হবে। বলেছিলেন, “একের পর এক পঞ্চায়েতে অনাস্থার ঘটনা ঘটছে। প্রধানের সঙ্গে কোনও সমস্যা হলে আমাদের জানালে আলোচনার মাধ্যমে আমরাই মিটিয়ে দেব। অনাস্থা এনে জল ঘোলা করার কোনও দরকারই নেই।” তবে কি দলের নেতা-কর্মীরা উচ্চ নেতৃত্বের কথা শুনছেন না? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি তৃণমূল নেতাদের থেকে। বেলশুলিয়ার প্রসঙ্গে “ঘটনাটি জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখব”- বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ।

বিডিও (বিষ্ণুপুর) প্রশান্ত মাহাতো বলেন, “এ দিন প্রধান-উপপ্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থার চিঠিতে ৮ জন সদস্য সই করেছেন। প্রধান-উপপ্রধান সহ ৫ জন অনুপস্থিত ছিলেন। শীঘ্রই নোটিস পাঠানো হচ্ছে যে, ওখানে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন করে প্রধান-উপপ্রধান নির্বাচিত হবেন।”

tmc no confidence panchayat bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy