Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে দলের সদস্যদেরই অনাস্থা

শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিল সিমলাপালে। সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন দলেরই কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৪

শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিল সিমলাপালে। সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন দলেরই কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই জঙ্গলমহলের এই ব্লকে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতা দিলীপ পণ্ডা ও যুব তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্রের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনার পিছনেও এই দুই গোষ্ঠীর বিবাদকেই দায়ী করছেন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা।

সিমলাপাল গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে ৮টি তে রয়েছেন তৃণমূলের প্রতীকে লড়াই করা প্রার্থীরা। একটি আসনে আছেন নির্দল হিসেবে জয়ী বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী এবং ৭টি আসন পেয়েছিল সিপিএম। নির্দল প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। প্রধান নির্বাচিত হন তরুলতা লোহার ও উপপ্রধান হয়েছিলেন হাফিজুল মণ্ডল। দু’জনেই তৃণমূলের প্রতীকে জিতেছিলেন। তাঁরা দিলীপবাবুর অনুগামী বলে এলাকায় পরিচিত। এই দু’জনের বিরুদ্ধেই বৃহস্পতিবার সিমলাপাল বিডিও-র কাছে নির্দল সদস্য, পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা-সহ পাঁচজন সিপিএম ও দু’জন তৃণমূল সদস্য অনুন্নয়নের অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন। বিডিও সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের আট সদস্যের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি পেয়েছি। এখনও দিন ঠিক হয়নি।”

এই অনাস্থাকে কেন্দ্র করে ফের দিলীপবাবু ও দিব্যেন্দুবাবুর মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে ব্লকের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় টিকিট নিয়ে চম্পট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে। পরে তিনি সমস্ত টিকিট নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল দিব্যেন্দুবাবুর গোষ্ঠীর মধ্যে। প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েতের আসনেই দিব্যেন্দুবাবুর গোষ্ঠীর লোকেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে লড়াই করেছিলেন। ভোটে জিততে কলাগাছকে প্রতীক করে দলবেঁধে জোরদার প্রচারে নামেন তৃণমুল বিক্ষুব্ধেরা। যদিও ভোটের ফলাফল তৃণমূলের পক্ষেই গিয়েছিল।

তৃণমূল সূত্রের খবর, দিলীপবাবুর পছন্দের প্রার্থীই সিমলাপাল গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান হওয়ায় এত দিন দিব্যেন্দুবাবুর প্রভাব সেই অর্থে ছিল না এই পঞ্চায়েতে। তাই কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যকে নিজের পক্ষে এনে দিব্যেন্দুবাবু নিজের ঘনিষ্ঠা লোকজনদের পঞ্চায়েতের শীর্ষ পদে আনতে চাইছেন বলে দলের একটি সূত্রে খবর। তবে সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এই অনাস্থা প্রস্তাব করায় দিব্যেন্দুবাবুর বিরুদ্ধেই আঙুল তুলছেন দলের একাংশ। যদিও দিব্যেন্দুবাবুর কথায়, “যে পাঁচজন সিপিএম সদস্য অনাস্থা এনেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলে যোগদান করতে চলেছেন। এ বিষয়ে তাঁরা আমাদের লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।” যদিও অনাস্থায় সাক্ষরকারী পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের দীপক সরকার দাবি করেন, “জানি না দিব্যেন্দুবাবু কিসের ভিত্তিতে এই কথা বলছেন। আমরা তৃণমূলে যোগ দেব বলে কোনও সিদ্ধান্তই নিইনি। পঞ্চায়েতে অনুন্নয়নের প্রতিবাদেই অনাস্থা এনেছি।”

দিলীপবাবুর কথায়, “এলাকায় সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে দিব্যেন্দু। তাই সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই সব করাচ্ছেন। ওঁর বিরুদ্ধে দলের জেলা ও রাজ্য নেতাদের আমি জানিয়েছি।” যদিও অনাস্থা প্রস্তাবে তাঁর কোনও হাত রয়েছে বলে মানতে নারাজ দিব্যেন্দুবাবু। তিনি দাবি করেন, “পঞ্চায়েতে অনাস্থার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা পঞ্চায়েত সদস্যদের ব্যাপার। জানি না এই সব অভিযোগ দিলীপবাবু সুস্থ অবস্থায় করছেন না অসুস্থ অবস্থায়!” কেন তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ করলেন দলীয় কর্মীরা তা অবশ্য বুঝে উঠতে পারছেন না এই পঞ্চায়েতের প্রধান তরুলতাদেবী। তিনি বলেন, “সব ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ কেন অনাস্থা আনল বুঝতে পারলাম না। দেখা যাক কি হয়।”

ব্লকস্তরে শাসক দলের এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেলা নেতৃত্ব মোটেই স্বস্তিতে নেই। পাত্রসায়রে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মারপিট প্রায় দিনই লেগে রয়েছে। তার উপরে সম্প্রতি রাইপুরেও গোলমাল দেখা দেয়। তার পরে সিমলাপালে ছড়াল। আবার কোথাও ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করছেন অঞ্চল সভাপতি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জেলায় জেলায় ঘুরে কর্মীদের দ্বন্দ্ব মেটাতে বলছেন। কিন্তু তার পরেও কেন শৃঙ্খলাবদ্ধ হচ্ছে না তৃণমূল? এ দিন দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “আমি কিছু জানি না। এখন খুব ব্যস্ত রয়েছি।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “যে দলের শীর্ষ নেতারাই শৃঙ্খলা পরায়ণ নয়, সেই দলের কর্মীদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করাই যায় না।”

simlapal tmc tmc member no confidence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy