শতাব্দী ও অনুপমের মনোনয়ন পর্বের শোভাযাত্রায় বিধায়কের পাশে আশিস দে (সবুজ পাঞ্জাবি)। —নিজস্ব চিত্র।
বছরখানেক আগে নার্সিংহোমে বন্দুক উঁচিয়ে তাণ্ডব চালানোয় তিনিই ছিলেন মূল অভিযুক্ত। গোটা ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সিউড়ি শহরে। ওই সময় এলাকার সাংসদের দাবি ছিল অভিযুক্ত নেতা ‘তৃণমূলের কেউ নন’। এক সময় ‘বহিষ্কৃত’ হওয়া নার্সিংহোম-কাণ্ডে জেল খেটে আসা সেই বিতর্কিত নেতা আশিস দে-কেই দেখা গেল বিদায়ী সাংসদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শোভাযাত্রায়। শুক্রবার সিউড়িতে জেলাশাসকের কার্যালয়ে তৃণমূলের বীরভূম ও বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থীর মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার সময় এমন চিত্র ধরা পড়ার পরে জেলার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ওই ঘটনায় কী দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না? শতাব্দী রায়ের জবাব, “এ নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।”
এ দিন কেবল শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়াই নয়, হুড খোলা গাড়িতে শতাব্দী রায় আর অনুপম হাজরার পাশেও দেখা মিলল ওই নেতার। এমনকী, শোভাযাত্রা শুরুর আগের মুহূর্তে নানা দায়দায়িত্ব সামলানোর কাজেও বড় ভূমিকা নিতে দেখা গেল তাঁকেই। নার্সিংহোম-কাণ্ডের সময় নিজের প্রতিক্রিয়ায় এলাকার তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, অনেক আগেই আশিস দে-কে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই তাঁর বাড়বাড়ন্ত। সেই স্বপনবাবুই এ দিন আবার বলেন, “কেউ একটা খারাপ কাজ করলে সারা জীবন তাঁকে নির্বসনে পাঠাতে হবে, তার কী মানে আছে। কেউ যদি নিজেকে শুধরে নিয়ে মানুষের পাশে থাকেন, সেটা আমার রাজনৈতিক জীবনের প্রাপ্তি। এতে খারাপ কিছু নেই।” জেলার রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, এক সময়ের অনুব্রত ঘনিষ্ঠ ওই নেতা বর্তমানে স্বপনবাবুর শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। তাই তাঁর এই উলট-পুরাণ। অন্য দিকে, ফোন করা হলেও এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি অনুব্রতর।
এ দিন অবশ্য জাঁকজমক করে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন-পর্ব সারল জেলা তৃণমূল। দুপুর ১টাতেই সিউড়ি দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুই প্রার্থীই। সিউড়ি এসপি মোড়ে তখন শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ও হুড খোলা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন স্বপনবাবু। পৌনে দুটো নাগাদ দুই প্রার্থীকে নিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা জেলাশাসকের কার্যালয়ের দিকে রওনা দিলেন। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সিউড়ি পুরসভা ও দলীয় কার্যালয়ের মাঝে গাড়ি থেকে নেমে কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছন দুই তৃণমূল প্রার্থী। গত বার মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় শতাব্দীর সঙ্গে তাঁর মা লালিমা রায় ছিলেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনুপমের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা-মা-ও। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের জন্য শতাব্দী মনোনয়ন দাখিল করেন জেলাশাসকের ঘরে। অন্য দিকে, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য অনুপম হাজরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ কর্ণমের কাছে। তিনটের মধ্যেই মনোনয়ন জমা দিয়ে আত্মবিশ্বাসী দুই প্রার্থীই জানালেন, জেতার ব্যাপারে তাঁরা অনেকটাই আশাবাদী।
এ দিকে, মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পরে বিকেলেই শতাব্দীর প্রচারে সিউড়ি ২ ব্লকের কোন্দুয়া পঞ্চায়েতের গোবরা গ্রামের জনসভায় যোগ দিতে দেখা গেল অনুব্রত এবং জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে। ভিড়ে ঠাসা সভায় শতাব্দীর আগেই পৌঁছেছিলেন অনুব্রত। শতাব্দীর সঙ্গে বহু চর্চিত ‘মতান্তর’ মিটেছে, এমন একটা বার্তা গত মাসে তিলপাড়ায় প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকেই দেওয়ার চেষ্টা করেছিল জেলা তৃণমূল। সেই সভায় একমঞ্চে পাশাপাশি দেখা মিলেছিল শতাব্দী, অনুব্রত এবং স্বপনবাবুকে। এই জেলা থেকে লোকসভার দু’টি আসনই ছিনিয়ে নিতে মরিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে তাই ফের প্রকাশ্যে একজোট হতে দেখা গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy