Advertisement
E-Paper

তৃণমূলকর্মীকে খুন, যাবজ্জীবন সাজা পুরুলিয়ায়

তৃণমূলের বিজয় মিছিলে হামলার জেরে শাসকদলের এক কর্মীকে খুনের দায়ে এক প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ১২ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। সোমবার এই রায় দেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অমিত চক্রবর্তী। হামলার ঘটনায় মোট পাঁচ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৩
কোর্টে সাজাপ্রাপ্তেরা। —নিজস্ব চিত্র।

কোর্টে সাজাপ্রাপ্তেরা। —নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের বিজয় মিছিলে হামলার জেরে শাসকদলের এক কর্মীকে খুনের দায়ে এক প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ১২ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। সোমবার এই রায় দেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অমিত চক্রবর্তী। হামলার ঘটনায় মোট পাঁচ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়।

একদা সিপিএমের দুর্গ বলে পরিচিত বলরামপুরে ওই সংঘর্ষের ঘটনার রায় শুনতে এ দিন আদালতে উৎসাহী মানুষজন হাজির হয়েছিলেন। মামলার সরকারি আইনজীবী সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১১ সালের ৪ জুন দুপুরে, বলরামপুর থানার রাপকাটা গ্রামে। বিধানসভা নিবার্চনে বিপুল জয়ের পর এলাকার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা বিজয় মিছিল করছিলেন। মিছিলের জন্য পুলিশের অনুমতি ছিল। মিছিলে পুলিশও ছিল। অতর্কিতে লাঠি, টাঙি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা হয় মিছিলে। মিছিল লক্ষ করে তিরও ছোড়া হয়। অরুণ গরাই (৩৭) নামে এক তৃণমূল সমর্থকের গলায় তির বিঁধে যায়। অরুণবাবু-সহ আহত পাঁচ জনকে প্রথমে বলরামপুরের বাঁশগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অরুণবাবুর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হয়ে কলকাতার এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। টানা ১২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে সেখানেই মারা যান অরুণবাবু।

হামলার ঘটনায় সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে সিপিএম। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই হামলায় রাপকাটা গ্রামেরই বাসিন্দা সঞ্জিত গরাই নামে এক যুবকও আহত হয়েছিলেন। তাঁর বাবা নিবারণ গরাই সিপিএমের ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার পরে অভিযুক্তেরা সকলেই গ্রেফতার হন। যদিও পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। ইতিমধ্যে পুলিশ ওই ১২ জনের খুনের মামলা খুনের মামলা রুজু করে। ওই বছরেরই অগস্ট মাসে আদালতে চার্জশিট পেশ করে। মামলার বিচার শুরু হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে।

সরকারি আইনজীবী জানান, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এ দিন বিচারক জিতেন্দ্রনাথ সিং সর্দার, মিলন সিং সর্দার, শুকদেব কুমার, দিবাকর সিং সর্দার, সুধাকর সিং সর্দার, পঞ্চানন সিং সর্দার, পেলারাম সিং সর্দার, মণীন্দ্র সিং সর্দার, অনিল সিং সর্দার, মারু ওরফে রমেশ সিং সর্দার, ভূদেব সিং সর্দার এবং মানিক সিং সর্দারকে সাজা শোনান। একই সঙ্গে প্রত্যেকের দশ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। অনাদায়ে ছয় মাস কারাদণ্ড। ঘটনার সময় জিতেন্দ্রনাথ সিং সর্দার ছিলেন স্থানীয় দাঁড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য। রায় শুনে এজলাসেই ভেঙে পড়েন সাজাপ্রাপ্তেরা।

আদালতে রায় শুনতে হাজির ছিলেন অরুণ গরাইয়ের ছেলে পূর্ণচন্দ্র। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বাবাকে হারিয়েছি। তার পর বড় কষ্টে আমাদের সংসার চলে। ওদের চরম সাজা হওয়া দরকার ছিল।” ঘটনার সময় দাঁড়দা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। এখন সেই পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতে। বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান খগেন গরাই ছিলেন সেদিনের বিজয় মিছিলের নেতৃত্বে। তাঁর বক্তব্য, “সিপিএম পরিকল্পনা করে হামলা চালিয়েছিল। আমি কোনও ভাবে বেঁচে যাই। তবে, দলের এক কর্মীকে হারিয়েছি। আজ রায় শুনে হালকা লাগছে।” বলরামপুরের বাসিন্দা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর মন্তব্য, “এই বিচারে ফের প্রমাণিত হল, সন্ত্রাস শেষ কথা বলে না।”

সিপিএমের বলরামপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক, দঁড়দা পঞ্চায়েত এলাকারই বাসিন্দা গোবর্ধন মাঝি অবশ্য বলেন, “আদালতের রায় নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে, আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছিল। ঘটনার সময় উনি পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন।”

purulia tmc leader murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy