Advertisement
০৩ মে ২০২৪

তথ্য ফাঁসের আশঙ্কায় কর্মীকে মার রাইপুরে

দিন কয়েক আগে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের পুনরায় মাপজোক করতে যাওয়া আধিকারিকদের রাত পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল রাইপুর ব্লক অফিস চত্বরে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার ওই ব্লকের দুন্দার গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে নির্বাহী সহায়ককে মারধরের অভিযোগ উঠল ফের তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাইপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০০:১২
Share: Save:

দিন কয়েক আগে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের পুনরায় মাপজোক করতে যাওয়া আধিকারিকদের রাত পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল রাইপুর ব্লক অফিস চত্বরে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার ওই ব্লকের দুন্দার গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে নির্বাহী সহায়ককে মারধরের অভিযোগ উঠল ফের তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করা এক ব্যক্তিকে ১০০ দিনের প্রকল্পে এলাকার একটি কাজের ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার কথা ঠিল ওই কর্মীর। তার আগেই তাঁকে মারধর করা হয়। বুধবার দুপুরে দুন্দার পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক বিপ্রদাস মণ্ডলকে পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ভিতরে এবং বাইরে কলার ধরে কিল চড় ঘুষি মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রহৃত ওই আধিকারিক সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে স্থানীয় দুই তৃণমূল কর্মী ক্ষুদিরাম পাত্র ও সুব্রত পাত্রের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল পরিচালিত দুন্দার পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে দলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর অনুগামীরা। ১০০ দিন কাজের একটি প্রকল্পে চিরুগোড়া থেকে কালাপাথর পর্যন্ত রাস্তা মেরামতির কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ওই কাজ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিরোধও তৈরি হয়েছে। কাজ না করে টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে জগবন্ধুবাবুর বিরোধী শিবিরের অভিযোগ। এরই মধ্যে ওই কাজের ব্যাপারে তথ্য জানতে চেয়ে স্থানীয় সৃষ্টিধর মাহাতো নামে এক যুবক পঞ্চায়েতে আবেদন জানিয়েছেন। এ দিন তাঁকে ওই তথ্য দেওয়ার সময়েই পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ককে তৃণমূল নেতা জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠীর লোকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ।

বিপ্রদাসবাবু জানান, সৃষ্টিধর মাহাতো নামে এক যুবক ১০০ দিন প্রকল্পে একটি কাজের তথ্য জানতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। এ দিন সেই তথ্য দেওয়া হবে বলে সৃষ্টিধরবাবুকে পঞ্চায়েতে আসতে বলা হয়েছিল। তার আগেই ঘটনাটি ঘটে। তাঁর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আমি কাজ করছিলাম। হঠাৎ জগবন্ধু মাহাতোর ছেলে দেবাশিস মাহাতো ও তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ মাহাতোর উপস্থিতিতে ক্ষুদিরাম পাত্র ও সুব্রত পাত্র আমার কলার ধরে টানাটানি শুরু করে। সকলের সামনেই কার্যালয়ের ভিতরে যথেচ্ছ কিল চড় ঘুষি মারে। পরে ফের কার্যালয়ের বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে আমাকে আর এক প্রস্থ মারধর করে ওরা।”

খবর পেয়ে রাইপুর থানা থেকে পুলিশ যায়। ততক্ষণে অভিযুক্তরা অবশ্য পালিয়ে গিয়েছে। ১০০ দিন কাজের ওই প্রকল্পের তথ্য যিনি জানতে চেয়েছিলেন সেই সৃষ্টিধর মাহাতোর অভিযোগ, “ওই কাজে দুর্নীতি হয়েছে বলে সন্দেহ করেই সব তথ্য জানতে চেয়েছিলাম। আমি যাতে ওই তথ্য না পাই, সে জন্যই এ দিন পরিকল্পনা করে নির্বাহী সহায়ককে মারধর করা হয়েছে। আমিও এ দিন ওই গোলমালের জন্য তথ্য পেলাম না।”

এ দিন চেষ্টা করেও অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি। পঞ্চায়েতে আসেননি প্রধান শিখা মণ্ডল। পরে তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। যাঁর অনুগামীরা ওই মারধরের ঘটনায় যুক্ত বলে অভিযুক্ত সেই জগবন্ধুবাবু অবশ্য এই রকম ঘটনা ঘটেছে বলে মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন, “দুন্দার পঞ্চায়েতের কাজে কোনও দুর্নীতি হয়নি। আর নির্বাহী সহায়ককে মারধর করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার ছেলে ওই সময়ে পঞ্চায়েতে হাজির ছিল কি না তাও জানি না।” জগবন্ধুবাবু অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও রাইপুর ব্লকের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতো অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, “কোনও কাজ নিয়ে দুর্নীতি হয়ে থাকলে তা জানার অধিকার সবার আছে। আসলে দুন্দার পঞ্চায়েতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে দুর্নীতি ঢাকা দেওয়ার জন্যই এ দিন নির্বাহী সহায়ককে মারধর করা হয়েছে। এটা করিয়েছেন জগবন্ধুর ছেলেই।”

রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে নির্বাহী সহায়কের আচার ব্যবহার নিয়ে ওই পঞ্চায়েতের কর্মী থেকে প্রধান সকলেই অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি দেখছি।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাঁদের খোঁজা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

information leak attack on block staff raipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE