উদ্বোধনের পরে। সোমনাথ মুস্তাফি
বহু বছর পরে নির্মল আনন্দে মেতে উঠল ‘ধাত্রীদেবতা’। লাভপুরে এই বাড়িতেই জন্মেছিলেন রাঢ় অঞ্চল থেকে উঠে আসা বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ১১৭তম জন্মদিবস উপলক্ষে প্রায় নষ্ট হতে বসা ওই বাড়িতে এ কটি প্রদর্শশালা খুলল ‘তারাশঙ্কর উন্নয়ন সমিতি’। পাশাপাশি কিশোর ভাস্কর পল্লব সিংহের সিমেন্টের তৈরি লেখকের একটি আবক্ষ মূর্তির উন্মোচনও করা হল। ছিলেন জেলার সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিডিও মৃণাল বিশ্বাস।
প্রসঙ্গত, একই নামে নামে তারাশঙ্করের একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসও রয়েছে। মধ্য বয়সে কলকাতা চলে যাওয়ার পরে যখন জন্মভূমিতে ফিরতেন, তখন ওই বাড়িতেই থাকতেন। বাড়ির পূর্ব দিকে পুকুরের পাড়ে একটি চেয়ার ও টেবিল রাখা থাকত। সেখানে বসেই তারাশঙ্কর ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘চাঁপা ডাঙার বউ’, ‘গণদেবতা’, ‘না’-এর মতো বহু জনপ্রিয় উপন্যাস, গল্প লিখেছেন বলে কথিত আছে। সম্প্রতি লাভপুর ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে গঠিত ওই কমিটি তারাশঙ্কেরর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিকে সাজানোর কাজ শুরু করেছিল। ‘আমার গানের কথা’ নামক একটি লেখায় তিনি বলেছিলেন, “লাভপুর গ্রামখানি অদ্ভুত গ্রাম। আমার জন্মস্থান, আমার মাতৃভূমি, আমার পিতৃপুরুষের লীলাভূমি বলে অতিরঞ্জিত করছি না। সত্য কথা বলছি। এই গ্রামে জন্মেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি।”
এ দিন লোক সমাগমে জীর্ণ হতে বসা বাড়ির পুরনো চরিত্রটিই যেন ফের বেঁচে উঠেছিল। তারাশঙ্কর নিজে ছবি আঁকতেন। কুটুমকাটামও বানাতেন। ওই বাড়িতেই সেগুলির কয়েকটি রাখা ছিল। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন অবশ্য অনেকগুলিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যতগুলি ঠিকঠাক আছে, এ দিন সেগুলিকে সাফ করে একটি ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়। পাশাপাশি দু’টি ঘরজুড়ে তারাশঙ্করের বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র দেওয়াল জুড়ে সাজানো হয়েছিল। তারাশঙ্কর-সহ বেশ কিছু বিশিষ্ট জনের গুরুত্বপূর্ণ লেখার অংশও টাঙানো হয়েছে ‘ধাত্রীদেবতা’র দেওয়ালে। সাজানোর কাজটি করেছে লাভপুরের বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী।
আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের পরে একটি দীর্ঘ অনুষ্ঠান হয় প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তারা মা-এর ডাঙায় গড়ে ওঠা তারাশঙ্কর স্মৃতি ভবনে। সেখানে আলোচনার পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকটি সংস্থা তারাশঙ্কর বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান করে। অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বিশিষ্ট তারাশঙ্কর গবেষক ময়ূরেশ্বর হাইস্কুলের শিক্ষক আদিত্য মুখোপাধ্যায়কে। হাজির ছিলেন তারাশঙ্করের দুই নাতি অমলশঙ্কর এবং সৌম্যশঙ্করও। কমিটির পক্ষে উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় জানান, তারাশঙ্করের এই ভিটেকে বড় মাপের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই এখন তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy