Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সিজানো উৎসব দুই জেলায়

পাঁচ টাকার লটারি কিনে ২৫ কেজি মাছ

প্রথম পুরস্কার ২৫ কেজি মাছ, সঙ্গে দু’কেজি সরষের তেল। দ্বিতীয় পুরস্কার ১৫ কেজি মাছ, সঙ্গে এক কেজি তেল। তৃতীয় পুরস্কার ১০ কেজি মাছ, সঙ্গে পাঁচশো গ্রাম তেল। পাঁচ টাকার লটারির টিকিট কিনে সিজানো পরবের আগের দিন সন্ধ্যায় ভাগ্যবান কয়েকজন হাতে মাছ ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরলেন। আর অনেকে সকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশি মাছ কিনতে রীতিমতো এই শীতেও গলদঘর্ম হলেন।

(ডান দিক থেকে) লটারির প্রথম পুরস্কার জিতে মাছ হাতেই সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরলেন মিঠুন সোনা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদ চত্বরে কম দামে বিক্রি হল দেশি মাছ। সেখানেও ভালই ভিড় ছিল। —নিজস্ব চিত্র

(ডান দিক থেকে) লটারির প্রথম পুরস্কার জিতে মাছ হাতেই সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরলেন মিঠুন সোনা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদ চত্বরে কম দামে বিক্রি হল দেশি মাছ। সেখানেও ভালই ভিড় ছিল। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

প্রথম পুরস্কার ২৫ কেজি মাছ, সঙ্গে দু’কেজি সরষের তেল। দ্বিতীয় পুরস্কার ১৫ কেজি মাছ, সঙ্গে এক কেজি তেল। তৃতীয় পুরস্কার ১০ কেজি মাছ, সঙ্গে পাঁচশো গ্রাম তেল। পাঁচ টাকার লটারির টিকিট কিনে সিজানো পরবের আগের দিন সন্ধ্যায় ভাগ্যবান কয়েকজন হাতে মাছ ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরলেন। আর অনেকে সকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশি মাছ কিনতে রীতিমতো এই শীতেও গলদঘর্ম হলেন।

রবিবার পুরুলিয়া শহরে সিজানো পরবের মাছ কেনার এমনই ছবি দেখা গেল। এই জেলার অধিকাংশ এলাকায় আজ সোমবার সিজানো পরব পালন করছেন বাসিন্দারা। যদিও বাঁকুড়া জেলার অনেক এলাকায় রবিবারই সিজানো পরব বা ষষ্ঠীর পুজো হয়েছে। তাই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন বাজারে শনিবার মাছ কেনার ধূম পড়ে গিয়েছিল।

সিজানো অর্থে ভেজানো ভাতা বা পান্তা ভাতের সঙ্গে মাছের নানা পদ খাওয়া রাঢ়বাংলার দস্তুর। সরস্বতী পুজোর পরের দিন দুই জেলার ঘরের ঘরে পান্তা আর মাছ খাওয়া হয়। মাছ আবশ্যিক হওয়ায় তাই চাহিদাও তুঙ্গে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়া শহরের পোকাবাঁধ পাড়া শিবপুজো কমিটি মাছের লটারি আয়োজন করে আসছে। এ দিন বিকেলে সেখানে লটারিতে মাছ নিতে কয়েকশো মানুষ ভিড় করেছিলেন। প্রথম পুরস্কার পান পোকাবাঁধেরই বাসিন্দা মিঠুন সোনা। তাঁর নাম ঘোষণা হয়েছে শুনে লাফিয়ে ওঠেন ফেরিওয়ালা মিঠুন। ব্যাগ নিয়ে তিনি মাছ নিতে দৌড়ে যান। মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একমুখ হেসে মিঠুন বলেন, “বাড়িতে আমি ও স্ত্রী রয়েছে। কয়েক কিলো মাছ বাড়ির জন্য রেখে বাকিটা বন্ধুদের দেব। কিছুটা আবার বাজারে বিক্রি করে দেব ভাবছি।”

লটারি দেখতে আসা দর্শকদেরও খালি হাতে ফেরাননি আয়োজকরা। দর্শকদের জন্যও বিনামূল্যে টিকিট ছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ভাগ্যবানকেও লটারি করে মাছ বিলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে টিঙ্কু হালদার, রোজি পারভিন জানান, মাছের লটারি দেখতে এসে আস্ত মাছ পেয়ে যাব ভাবতে পারেননি। আয়োজক কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বছর দশেক আগে নিছক মজা করেই খেলাটা শুরু করেছিলাম। তারপর প্রতি বছরে খেলাটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এখন সরস্বতী পুজোর অনেক আগে থেকেই লোকজন লটারি হচ্ছে কি না খোঁজ নিতে শুরু করেন।”

এ দিকে, কম দামে দেশি মাছ বিক্রির আয়োজন করেছিল পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। তারা ঠিক করেছিল, সামগ্রিক উন্নয়ন অঞ্চল পর্ষদ থেকে মাছ কিনে দেশি মাছ মানুষজনকে পৌঁছে দেওয়া হবে। বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল সকাল সাতটা থেকে জেলা পরিষদ চত্বরেই। কিন্তু আগে গেলে ভালো মাছ পাওয়া যাবে এই আশায় মানুষজন ভিড় করেছিলেন ঢের আগে। তাই সকাল থেকেই মাছ কিনতে আসা মানুষের ভিড়ে ঠাসা হয়ে যায় জেলা পরিষদ চত্বর। কিন্তু নানা কারণে মাছ আসতে খানিকটা দেরি হয়ে যায়। থলে হাতে ধৈর্যের পরীক্ষা দেন বাসিন্দারা। মাছ আসতেই তাঁদের মধ্যে হুলস্থূল পড়ে যায়। ১০০ টাকা কেজি দরে ২৫ কুইন্ট্যাল মাছ বিক্রি করা হয়। মাছ বিলির সূচনায় ছিলেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সিএডিসির পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যাল। জেলা সভাধিপতি বলেন, “সামনের বার আরও বড় মাছ খাওয়ানোর চেষ্টা করব।” রঘুনাথপুরেও একই রকমের একটি কাউন্টার খোলা হয়েছিল।

পুরুলিয়ার বড়হাট সহ রঘুনাথপুর, ঝালদা, জয়পুর, বলরামপুর, কাশীপুর, আদ্রা, মানবাজার-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বাজার ছিল সরগরম। সবর্ত্রই মাছের বাজারে থিকথিকে ভিড়। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার শুধু পুরুলিয়া শহরের জন্যই অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে পাঁচ ট্রাক মাছ এসেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sijano fest fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE