Advertisement
E-Paper

পুজোর বাজারে নতুন বালুচরী, স্বর্ণচরী

এ বার পুজোয় বাজারে এল বিষ্ণুপুরের স্বর্ণচরী-বালুচরী ‘দ্রৌপদী’, মধুমালতী। সাবেকি বালুচরী শাড়ি থেকে বাঙালি রমণীরা মুখ ফেরাতে শুরু করায় কয়েক বছর আগে বৈচিত্র্য আনতে বিষ্ণুপুরের তাঁতেই তৈরি হয়েছিল স্বর্ণচরী। সেই স্বর্ণচরী শাড়িতেও নতুনত্ব আনছেন কিছু শিল্পী। তাঁদেরই একজন বিষ্ণুপুরের তরুণ তাঁতশিল্পী অমিত লক্ষ্মণ।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৩
নিজের তাঁতশালে শাড়ি তৈরি করছেন অমিত লক্ষ্মণ। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজের তাঁতশালে শাড়ি তৈরি করছেন অমিত লক্ষ্মণ। ছবি: শুভ্র মিত্র

এ বার পুজোয় বাজারে এল বিষ্ণুপুরের স্বর্ণচরী-বালুচরী ‘দ্রৌপদী’, মধুমালতী।

সাবেকি বালুচরী শাড়ি থেকে বাঙালি রমণীরা মুখ ফেরাতে শুরু করায় কয়েক বছর আগে বৈচিত্র্য আনতে বিষ্ণুপুরের তাঁতেই তৈরি হয়েছিল স্বর্ণচরী। সেই স্বর্ণচরী শাড়িতেও নতুনত্ব আনছেন কিছু শিল্পী। তাঁদেরই একজন বিষ্ণুপুরের তরুণ তাঁতশিল্পী অমিত লক্ষ্মণ। আসন্ন পুজোর কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি তাঁর হাতে বোনা দ্রৌপদী স্বর্ণচরী এল বাজারে।

বিষ্ণুপুর শহরের গড়গড়ান এলাকায় থাকেন অমিত। নিজের তাঁতঘরে তাঁর নতুন সৃষ্টিকে মেলে ধরে জানান, ওড়িশার একটি টিভি চ্যানেলে মহাভারতে দ্রৌপদীর পরা একটি শাড়ি দেখে তাঁর মনে ধরে যায়। ওই শাড়ির গায়ে অনেকগুলি লম্বা চেন, পাড়ও বেশ ঝকঝকে। তখনই ওই রকমের শাড়ি তৈরির বিষয়টি তাঁর মাথায় ঢোকে। নিজের হাতে তৈরি দৌপদী শাড়িটি দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন, “পিওর সিল্কের সঙ্গে এই শাড়িতেও রেখেছি জরির সুতোর কাজ। আর দেখুন, শাড়ির ভিতরে গা জুড়ে রেখেছি আটটি চেন। যা একেবারে নতুন। আর নতুনত্ব হচ্ছে পাড়ে থাকছে ছুটন্ত হরিণের নকশা।”

চলতি স্বর্ণচরীর থেকে আর কিসে আলাদা এই শাড়ি? শিল্পীর জবাব, “কালার কম্বিনেশনে।” তিনি জানান, কালো রঙের উপর ১৫-২০ রকমের রঙের কম্বিনেশন রাখা হয়েছে। ফলে সহজেই নজর কাড়বে ক্রেতাদের। এর জন্য নকশা ও কার্ড কাটিংয়ে খরচ হয়েছে বেশি। এক একটি শাড়ি বুনতে সময়ও লাগছে এক সপ্তাহের বেশি। দামও সে কারণে অনেকটাই বেশি পড়ছে আগের স্বর্ণচরীর থেকে।’’

রানি ও তুঁতো রঙের সঙ্গে খেলার সঙ্গে আঁচলের বাড়তি আকর্ষণ নবাব ও নর্তকীর নকশা। তামাকের হুঁকোয় টান দিতে দিতে নাচ দেখছেন নবাব। বিষ্ণুপুরের মন্দিরের টেরাকোটা প্যানেলের মতো নৃত্যশিল্পীর মুখে বাঁশিও দেখা যাচ্ছে। অমিত বলেন, ‘‘নকশা শিল্পী চন্দন দে-কে বলা হয়েছিল বিষ্ণুপুরের মন্দিরের টেরাকোটা চিত্রের আদল যেন এই শাড়ির কাজে থাকে। সেটা তিনি রেখেছেন।’’

অমিতের বাবা সুরেন্দ্রনাথ লক্ষ্ণণ রাজ্য সরকারের পুরস্কৃত বালুচরী শিল্পী। ছেলের এই নতুন চিন্তা-ভাবনায় তিনি খুশি। বলেন, “বাজার ধরতে গেলে সেকেলে ভাবনায় পড়ে থাকলে চলবে না। নতুনত্ব চাই। বড় ছেলে অমিত সে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় আমি খুশি।” অমিতের তাঁতঘরে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরের এক পর্যটক-ক্রেতা। তিনি বলেন, “বিষ্ণুপুরে এসেছি আর বাড়ির জন্য এখানকার বিখ্যাত বালুচরী-স্বর্ণচরী নেব না। তা হয় না। বিভিন্ন তাঁতঘরে শাড়ি দেখতে দেখতে এখানে এসে চোখে পড়ল এই নতুন শাড়িটিও। আমার তো বেশ অন্য রকম মনে হচ্ছে। তবে দাম একটু বেশিই।’’ অমিত জানান, এই শাড়ি করতে বেশ পরিশ্রম হচ্ছে। কয়েকদিন খেটে চারটি শাড়ি তৈরি হয়েছে। তিনি এই শাড়ি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। বাইরের দোকানে তারও বেশি।

মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে বিলুপ্ত হয়ে পড়া এই শাড়ি পঞ্চাশের দশকে অক্ষয় পাটরাঙ্গার হাত ধরে বিষ্ণুপুরে আসে। তারপর বালুচরী ভেঙ্গে স্বর্ণচরী এনেছিলেন গুরুদাস লক্ষণ। তারও পরে অমিতাভ পাল একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। চারণকবি বৈদ্যনাথের বিখ্যাত কবিতা ‘রূপশালি মেয়ে’র চালচিত্র বালুচরীতে ফুটিয়ে তুলে হইচই ফেলেছেন তাঁর ‘রূপশালি বালুচরী’ শাড়ি বাজারে নামিয়ে।

এ বার পুজোতে অমিতাভ পাল তাঁর তাঁতশাল থেকে নামিয়েছেন ‘মধুমালতী’ বালুচরী শাড়ি। যার সারা গায়ে ফুল ও লতা-পাতা। পাড়ের গায়ে তিনটি রঙে আদিবাসী গ্রামের লোকনৃত্যর ছবি। শাড়িটির অন্যতম বিশেষত্ব পিরামিড আকৃতির কিছু কাজ। সব মিলিয়ে এই শাড়ির গায়ে ব্যবহার হয়েছে ন’টি রং। অমিতাভ বলেন, “নকশার কাজ বেশি থাকায় দামও পড়ছে সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা।” তিনি জানান, তাঁর দু’টি তাঁত থেকে ইতিমধ্যেই ৪৬টি শাড়ি বিক্রি হয়ে পুজোর বাজারে সমাদর পেয়েছে। হাতে মাত্র আর কয়েকদিন সময়। সে কারণে রাতেও কাজ হচ্ছে তাঁর তাঁতে। এক একটি তাঁত থেকে পাঁচদিনে বের হচ্ছে একটি করে শাড়ি। যার ঝলমলে রূপে মজছেন বালুচরী প্রিয় রমণীরা।

শিল্পীরা নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে অবিরত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিখ্যাত শাড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। তারই নতুন উদাহরণ— দ্রৌপদী স্বর্ণচরী আর মধুমালতী বালুচরী।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy