Advertisement
E-Paper

প্রিয়াঙ্কার মৃত্যুতে তিন ছাত্রীর শাস্তি

ভিনরাজ্যে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ছাত্রীনিবাসে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েই আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন পুরুলিয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের উল্লাস পাটিল মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মেয়ের মৃত্যুর পরে এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর বাবা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়। এত দিন পরে কলেজের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির তদন্তের রিপোর্টে সেই অভিযোগই প্রতিষ্ঠিত হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৭
প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

ভিনরাজ্যে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ছাত্রীনিবাসে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েই আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন পুরুলিয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের উল্লাস পাটিল মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মেয়ের মৃত্যুর পরে এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর বাবা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়। এত দিন পরে কলেজের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির তদন্তের রিপোর্টে সেই অভিযোগই প্রতিষ্ঠিত হল।

সম্প্রতি নয়নবাবুর কাছে সেই রিপোর্ট এসেছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে, কমিটি অভিযুক্ত তিন ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা জয়প্রকাশ কাবরা, প্রিয়া দিলীপরাও পাওয়ার ও স্নেহেল রমেশ মহাজনকে ছাত্রীনিবাস থেকে দু’টার্মের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। এবং প্রত্যেকের এক লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। কলেজের ডিন যাঁর তত্ত্বাবধানে এই কমিটি কাজ করেছে সেই এন এস আরভিকর ফোনে আনন্দবাজারকে বলেছেন, “কলেজের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি র‌্যাগিংয়ের অভিযোগের তদন্ত করেছে। তার ভিত্তিতে প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়ের তিন রুমমেটকে দুই টার্মের (এক বছর) জন্য ছাত্রীনিবাস থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেকের এক লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।”

তবে এই নির্দেশে সন্তুষ্ট নয় মৃত ছাত্রীর পরিবার। নয়নবাবু বলেন, “কলেজের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির এই রিপোর্টে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এই তদন্তে যাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে সেই বয়ান চেয়ে পাঠিয়েছি। আগে দেখি পড়ুয়া-সহ বিভিন্ন বিভাগের প্রফেসর ও কর্মীরা কী জানিয়েছেন। তবে ওর উপরে যে র‌্যাগিং হয়েছিল তা তো কমিটির তদন্তেই পরিষ্কার। মামলাও চলছে। এই রিপোর্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ আদালতেও জমা দেবে।” জলগাঁওয়ের একটি মহিলা সংগঠন মহিলা সুরক্ষা সমিতির এক মুখপাত্র নিবেদিতা তাঠে বলেন, “এই রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার যে প্রিয়াঙ্কা ছাত্রীনিবাসে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।” তবে এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত ২৪ মে জলগাঁওয়ের ছাত্রী নিবাস থেকে মাঝরাতে পুরুলিয়ায় নয়নবাবুর কাছে খবর আসে যে প্রিয়াঙ্কা আত্মহত্যা করেছেন। নিজের ঘরেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে। মেয়ের মৃত্যু-সংবাদ পেয়ে জলগাঁওয়ে গিয়ে মেয়ের শেষকৃত্য করেন তিনি। তবে ফেরার আগে প্রিয়াঙ্কার তিন রুমমেটের বিরুদ্ধে স্থানীয় নাসিরাবাদ থানার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। নয়নবাবুর কথায়, “ছাত্রীনিবাসের যে ঘর থেকে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল সেই ঘরেই প্রিয়াঙ্কার লেখা একটি ‘সুইসাইড নোট’ও মেলে। সেই নোটে মেয়ে ওর তিন রুমমেটকেই মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গিয়েছিল।” এই ঘটনার পর প্রকৃত ঘটনার তদন্তের দাবিতে সরব হয় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসেসিয়েশনও।

বুধবার নয়নবাবু জানান, ওই ঘটনার পরে কলেজের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি পৃথক ভাবে একটি তদন্ত করে। সেই রিপোর্টের প্রতিলিপি কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার কাছে পাঠিয়েছেন। কলেজের ডিনের তত্ত্বাবধানেই এই কমিটি কাজ করে। এই ঘটনায় কমিটি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ছাত্র ও ছাত্রীনিবাসের রেক্টর, গ্রন্থাগারিক, ক্যান্টিন ইনচার্জ ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছে। পাশাপাশি কলেজের বিভিন্ন বর্ষের পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেছে কমিটি। তারমধ্যে এক ছাত্র স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কমিটির কাছে কিছু তথ্য দিয়েছেম বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে এই কমিটি অভিযুক্ত তিন ছাত্রী অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কার তিন রুমমেটের সঙ্গেও কথা বলে। তদন্তের রিপোর্টে র‌্যাগিং এর অভিযোগ আংশিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

নয়নবাবু বলেন, “প্রিয়াঙ্কার সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিল, ‘দে ফোর্সড মি মেন্টালি টু টেক দিস ষ্টেপ’। ওই তিন রুমমেটের নাম প্রিয়া, প্রিয়াঙ্কা ও স্নেহাল। ওদের নাম দিয়ে শেষে লিখেছিল, ইউ ডেস্ট্রয়েড মাই কেরিয়ার, মাই পেরেন্টস ড্রিম।” ওরাই তাঁকে ওই আত্মহত্যার পথ বেধে নিতে বাধ্য করে। ওদের জন্যই প্রিয়াঙ্কার কেরিয়ার, বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছারখার হয়ে গেল।”

priyanka mukhopadhyay ragging medical student purulia suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy