Advertisement
E-Paper

প্রকল্প অনেক, মিলছে না জলই

গরম পড়তেই জলস্তর নেমে গিয়েছে। জল উঠছে না অগভীর নলকূপে। এলাকার কুয়ো, পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পাইপলাইনের মাধ্যমেও পরিস্রুত পানীয় জল মিলছে না। যদিও বা কোথাও জল মিলছে, তাও পানের অযোগ্য। পাইলাইনের মাধ্যমে জল না মেলার জন্য এলাকাবাসী নজরদারির অভাবকেই দায়ী করেছেন। চিত্র ১: দুপুর দেড়টা। রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের খড়িডাঙা গ্রাম। চড়া রোদে এলাকার মোড়ে দাঁড়িয়ে জনা পঞ্চাশেক মহিলা।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০০:৪৩
এখনও রং হচ্ছে কুরুমগ্রামের জলাধারে। ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

এখনও রং হচ্ছে কুরুমগ্রামের জলাধারে। ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

গরম পড়তেই জলস্তর নেমে গিয়েছে। জল উঠছে না অগভীর নলকূপে। এলাকার কুয়ো, পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পাইপলাইনের মাধ্যমেও পরিস্রুত পানীয় জল মিলছে না। যদিও বা কোথাও জল মিলছে, তাও পানের অযোগ্য। পাইলাইনের মাধ্যমে জল না মেলার জন্য এলাকাবাসী নজরদারির অভাবকেই দায়ী করেছেন।

চিত্র ১: দুপুর দেড়টা। রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের খড়িডাঙা গ্রাম। চড়া রোদে এলাকার মোড়ে দাঁড়িয়ে জনা পঞ্চাশেক মহিলা। কয়েকজন কচিকাঁচা তাঁদের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। কয়েক জন দুধ বিক্রেতা সাইকেলে করে রামপুরহাট বাজারে দুধ বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে মোড়ের মাথায় ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন। একটু দূরে অগভীর নলকূপের জলে স্নান করতে দেখা গেল কয়েক জনকে। কেন এমন অবস্থা? গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, জল সমস্যার কথা। কিন্তু গ্রামে ‘নারায়ণপুর’ পানীয় জল প্রকল্পে পাইপলাইন দীর্ঘ চার বছর আগে পৌঁছেছে। তবুও কেন এখনও পরিস্রুত পানীয় জল মিলছে না? গ্রামের বাসিন্দা রতন মাহাতো বললেন, “গ্রামের দু’মাথায় দুটো ট্যাপ কল বসানো হলেও একদিনও জল পেলাম না। মাস দু’য়েক আগে এলাকার বিধায়ক সাব সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে দিয়েছেন। তাও বিদ্যুতের সমস্যায় চালু হয়নি। অথচ এলাকায় পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে, নলকূপ থেকে জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ার জন্য জল পাওয়া যাচ্ছে না।”

নারায়ণপুর পঞ্চায়েতেরই বালিয়া মৃত্যুঞ্জয়পুর গ্রামে সম্প্রতি ভুগর্ভস্থ জলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে। সে জন্য ওই গ্রামে নারায়ণপুর জল প্রকল্পের মাধ্যমে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই গ্রামেও সব জায়গায় ট্যাপের জল এলাকাবাসী পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা আহাসান আলি বলেন, “রামপুরহাটে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে বিডিও, বিধায়ক সবস্তরে জানিয়েও প্রকল্পের বাস্তব রূপায়ণ এখনও করা যায়নি।”

চিত্র ২: খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর জেলায় এসে নলহাটি ১ ব্লকের ‘কুরুমগ্রাম’ জল প্রকল্পের উদ্বোধন করলেও এখনও ওই প্রকল্প বাস্তবরূপ পায়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দিন পনেরো ওখান পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছিল। অথচ এখনও রিজার্ভার রং করা হচ্ছে। কবে পূর্ণমাত্রায় জলপ্রকল্পের সুবিধা পাবেন তাই নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকাবাসী। আবার বছর পনেরো আগে চালু হওয়া মুরারই থানার ‘আমডোল’ জলপ্রকল্প থেকেও মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। স্থানীয় শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা আব্দুল ওয়াদুদ (মণ্টু প্রধান) দাবি করেন, “আমি যখন প্রধান ছিলাম তখন চিকিৎসক মোতাহার হোসেনের সহযোগিতায় এলাকার ভীমপুর, হরিশপুর, কলহপুর-সহ এলাকার প্রায় ৯টি গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমডোল জল প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছিল, সেই প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দেখভালের অভাবে বেশ কিছুদিন ধরে পাইপ লাইনের জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি যে জল দেওয়া হচ্ছে তা পানের অযোগ্য বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।”

চিত্র ৩: প্রায় চল্লিশ বছর আগে চালু হওয়া ‘রাজগ্রাম’ জল প্রকল্প নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ এলাকাবাসীর। এলাকার বাসিন্দা দিলীপ সরকার, আনোয়ার হোসেন বলেন, “জন্মলগ্ন থেকে রাজগ্রাম জলপ্রকল্প থেকে এলাকাবাসী সুষ্ঠুভাবে জল সরবরাহ পাননি। কারণ, রাজগ্রাম রিজার্ভারে সম্পূর্ণ ভাবে কোনও দিন জল ভর্তি হয়নি।” ওই একই থানার ‘চাতরা’ জল প্রকল্প থেকেও ঠিক মতো পরিষেবা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। মাড়গ্রাম জল প্রকল্পেও সব এলাকায় জল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। মাড়গ্রাম এলাকায় বেআইনি ভাবে জলের সংযোগ করে নেওয়ার জন্য সমস্ত জায়গায় পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের জেলা মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকার অর্ধেন্দু দত্ত। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় অবৈধ সংযোগ আছে জানি। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।”

চিত্র ৪: শুধু মাত্র এই সব জলপ্রকল্পগুলির অবস্থা যে বেহাল তা নয়। ময়ূরেশ্বের থানার মল্লারপুর এলাকায় বাহিনামোড়, মল্লারপুর বাজার এলাকায় পনেরো বছর আগে প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হলেও তার বাস্তবায়িত হয়নি। একই অবস্থা মহম্মদবাজার ব্লকের হাটগাছা, নলহাটি ১ ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর জলপ্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সব কটি ক্ষেত্রেই পাইপ লাইনের মেরামত বাবদ খরচ করা হলেও উপযুক্ত দেখভালের অভাবে তা কার্যকর হচ্ছে না এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের পাইপ লাইন মেরামতির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ঠিকাদার দাবি করেছেন, “সরকার ৪৫০ টাকা পাইপ লাইনের একটা ফুটো মেরামতির জন্য দেয়। কিন্তু খরচ হয় ১০০০-১২০০ টাকা। সেই পুরনো আমলের মূল্য দিলে কী করে পাইপ লাইন মেরামতি হবে। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের জেলা মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক অর্ধেন্দু দত্ত বলেন, “আমার কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সেই জায়গায় যাতে উপযুক্ত পরিষেবা তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায়, তার চেষ্টা সব সময় করি।” যেখানে যেখানে অভিযোগ রয়েছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

water project apurba chattapadhyay rampurhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy