Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিজ্ঞপ্তি জারি, প্রার্থী নিয়ে জট সব দলেই

পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির ২৪ ঘণ্টা পরেও জেলায় প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করতে পারল না কোনও দল! এক দিকে, শাসকদল জেরবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে। উল্টো দিকে, বামেদেরও সংগঠন আর আগের মতো মজবুত নয়। আবার যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে নাকানিচোবানি খাচ্ছে জেলার রাজনীতিতে টিমটিম করতে থাকা কংগ্রেসও। অন্য দিকে, লোকসভা ভোটের ফলে সাড়া জাগালেও দুর্বল সংগঠন নিয়ে চিন্তায় বিজেপিও।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির ২৪ ঘণ্টা পরেও জেলায় প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করতে পারল না কোনও দল!

এক দিকে, শাসকদল জেরবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে। উল্টো দিকে, বামেদেরও সংগঠন আর আগের মতো মজবুত নয়। আবার যোগ্য প্রার্থী খুঁজতে নাকানিচোবানি খাচ্ছে জেলার রাজনীতিতে টিমটিম করতে থাকা কংগ্রেসও। অন্য দিকে, লোকসভা ভোটের ফলে সাড়া জাগালেও দুর্বল সংগঠন নিয়ে চিন্তায় বিজেপিও। বাকি দলগুলির মতো তারাও আজ পর্যন্ত প্রার্থীতালিকা ঠিক করে উঠতে পারেনি। সব মিলিয়ে এ বারের পুরভোটে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল! যার নিট ফল দেওয়াল লিখন শুরু হলেও সেখানে প্রার্থীদের নামেরই দেখা মিলছে না।

বুধবারই পুরসভা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বীরভূমের চারটি পুরসভায় নির্বাচন হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। বুধবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়নপর্ব। চলবে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত। ২৬ মার্চ মনোনয়নপত্র খতিয়ে দেখা হবে। ২৮ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এরপরই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে। অবশ্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলই দোলাচলে। ভোটের দিন ঘোষণার পরেও বুধবার দিনভর কোনও দলই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। তবে, বামফ্রন্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে চারটি পুরসভায় শরিক দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতার একটি তালিকা দিয়েছে। জেলা নির্বাচন দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শৈবাল নন্দী জানান, এখনও কেউ-ই মনোনয়ন তোলেননি। এই পরিস্থিতিতে সব দলই জানিয়েছে, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই তা চূড়ান্ত হবে।

জেলার সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাট এই চারটি পুরসভার ৭৩টি ওয়ার্ডে নির্বাচন রয়েছে। এর মধ্যে গত ভোটের ফলের হিসেবে বোলপুর ও সাঁইথিয়াই বিরোধীদের (কংগ্রেস) দখলে ছিল। বাকি সব ক’টি পুরসভাই ছিল তৃণমূলের। যদিও কাউন্সিলরদের দলবদলের সূত্রে শাসকদল ওই দুই পুরসভাও ছিনিয়ে নিয়েছিল। ফলে এই চারটি পুরসভা দখলে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের কাছে। যদিও প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শাসকদলের ক্ষমতায় থাকা ওই চারটি পুরসভায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। কোথাও আবার সাংগঠনিক পদে থাকা নেতাদের প্রার্থী করা নিয়ে দলের অন্দরেই মত পার্থক্য বেড়ে গিয়েছে। উল্টো দিকে, বামফ্রন্টের কাছে চ্যালেঞ্জ, নির্বাচনে ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করা। ছ’টি পুরসভাতেই সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই দেওয়া। জেলার রাজনীতিতে তাদের দল যে এখনও অপ্রাসঙ্গিক, তা প্রমাণ করাই কংগ্রেসের কাছে চ্যালেঞ্জ। অন্য দিকে, গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তিনটি পুরসভাতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ফল ধরে রেখে জেলার ইতিহাসে প্রথম বোর্ড গড়াই লক্ষ্য বিজেপি-র।

এ দিকে, রাজনৈতিক দলগুলি প্রার্থী তালিকা না প্রকাশ করলেও বেশ কিছু এলাকায় আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল লিখন। কোথাও প্রার্থীর নামেই দেওয়াল লিখন হচ্ছে। কোথাও আবার নেতা নিজেই নিজেকে প্রার্থী হিসেবে দাবি করে মিছিলও বের করেছেন। যার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য শাসক দলের নেতাদের নাম জড়িয়েছে। কোথাও আবার প্রার্থীর নাম বাদ রেখে দলের নাম আর প্রতীক আঁকা হচ্ছে।

এমনিতেই লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে বোলপুরের ২০টির মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে বিজেপি এবং বাম ও কংগ্রেস একটি করে ওয়ার্ডে এগিয়েছিল। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জর্জরিত শাসকদলের সমস্যা বাড়িয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থীতালিকা ঘোষণার আগেই কেউ কেউ নিজের নামে দেওয়াল লিখনও শুরু করেছেন। এ দিকে, দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের দলে টেনে শাসকদলকে বেগ দেওয়ার চেষ্টা করছে গত ভোটে ৮টি ওয়ার্ড জেতা কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পুরনো জোটসঙ্গী এসইউসি-র সঙ্গে বোলপুরে জোট করেছে বামফ্রন্ট। ইতিমধ্যেই অর্ধেক আসনে পিছিয়ে থাকা তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিরোধীদের এই সমস্ত সক্রিয়তাও।

সিউড়িতে জলপ্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে রয়েছে তৃণমূল। যার ফল দেখা গিয়েছে গত লোকসভা ভোটেই। ১৯টির মধ্যে ১৩টিতেই শাসকদল বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে পড়েছে। আবার দলেরই পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলেছেন দলেরই বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। সিউড়ির বিধায়কের অনুগামীরা এ বারের ভোটে অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে আসবেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই বামফ্রন্ট তাদের প্রার্থী তালিকাও তৈরি করেছে বলে খবর। এ দিকে, এগিয়ে থাকলেও পুরভোটে বিজেপি তাদের পক্ষে ঠিক কতটা ভোট টানতে পারবে, দলের দুর্বল সংগঠন সেই সংশয় বাড়িয়েছে। তৃণমূল আর বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়ে, ঠিক কতটা কী করতে পারবে কংগ্রেস, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও।

দলীয় সূত্রের খবর, জেলায় শাসকদলের সব থেকে করুণ অবস্থা সাঁইথিয়া এবং রামপুরহাটে। লোকসভা ভোটের ফলে সাঁইথিয়ায় ১৬টির মধ্যে ১৪টিতে এবং রামপুরহাটে ১৮টির মধ্যে ১৫টিতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের সমস্যার শেষ এখানেই নয়। দুই শহরে ইতিমধ্যেই কম বেশি গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রার্থীতালিকা ঘোষণার আগেই নেতা-কর্মীরা নাম দিয়ে দেওয়াল লিখন, মিছিলও করতে শুরু করেছেন। টিকিট পাওয়া নিয়ে সাঁইথিয়ায় শাসকদলের তিনটি গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল শুরু হয়েছে। বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত, দলের প্রাক্তন শহর সভাপতি মানস সিংহ এবং ভোটে জেতা একমাত্র তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু রায় প্রত্যেকেই বেশি করে নিজেদের অনুগামীদের টিকিট চেয়ে দলীয় নেতৃত্বের কাছে তদ্বির করেছেন। শেষ হাসি যিনিই হাসুন, বাকিদের কাছে তা যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে দলের নিচুতলার কর্মীদেরই আশঙ্কা। তাতে শাসকদলের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না! উল্টো দিকে, রামপুরহাটে মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ নেতাকে প্রার্থী করা নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটির বৈঠকে দলীয় কর্মীরা তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেবেন না বলে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। দলের পুরনো কর্মীদের ক্ষোভ বাড়িয়েছে, গত ভোটে বিরোধী কয়েক জন প্রার্থীর দলীয় প্রার্থীতালিকায় নাম থাকার সম্ভাবনাও।

জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি জোর কদমে শুরু হয়েছে। শীঘ্রই বামফ্রন্টের এখন বিজ্ঞপ্তি জারির পর জট কাটিয়ে, প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে কবে থেকে পুরোদস্তুর প্রচারে নামে রাজনৈতিক দলগুলো, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

municipal election purulia birbhum bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE