Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যুত্‌ পৌঁছয়নি, হাতে এল বিল

গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে আবেদন করে আসছেন বাসিন্দারা। কিন্তু ফল হয়নি। গ্রামে আসেনি বিদ্যুত্‌। অথচ বিদ্যুত্‌ ব্যবহারের বিল গ্রামের কিছু বাসিন্দাকে পাঠিয়েছে রাজ্য বিদ্যুত্‌ বণ্টন সংস্থা।

ট্রান্সফর্মার বসলেও এখনও সংযোগ মেলেনি।—নিজস্ব চিত্র।

ট্রান্সফর্মার বসলেও এখনও সংযোগ মেলেনি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৬
Share: Save:

গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে আবেদন করে আসছেন বাসিন্দারা। কিন্তু ফল হয়নি। গ্রামে আসেনি বিদ্যুত্‌। অথচ বিদ্যুত্‌ ব্যবহারের বিল গ্রামের কিছু বাসিন্দাকে পাঠিয়েছে রাজ্য বিদ্যুত্‌ বণ্টন সংস্থা।

ঘটনাটি রঘুনাথপুর ২ ব্লকের কালীপুরডাঙ্গা গ্রামের। বুধবার গ্রামের ন’জন বাসিন্দাকে ওই বিল দিয়ে যান বিদ্যুত্‌ দফতরের এক কর্মী। আর বিল হাতে পেয়ে আক্ষরিক অর্থেই হতচকিত গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার সকালেই দলবেঁধে ওই বাসিন্দারা চেলিয়ামায় বিদ্যুত্‌ বণ্টন সংস্থার দফতরে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবাশিস মাজির কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি জানানো হয়েছে বিডিও (রঘুনাথপুর ২) উত্‌পলকুমার ঘোষকেও। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন দু’জনেই।

স্থানীয় ও বিদ্যুত্‌ বণ্টন দফতর সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম কালীপুরডাঙ্গায় রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনায় বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে গ্রামের গোটা কুড়ি পরিবারকে বিদ্যুত্‌ দেওয়ার লক্ষ্যে পোঁতা হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। তার টাঙানোর কাজও শেষ। বাড়িগুলিতে মিটার লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বিদ্যুত্‌ দফতরের কর্মীরা। মার্চ মাস নাগাদ গ্রামের প্রান্তে ট্রান্সফর্মারও বসানো হয়েছে। কিন্তু সেটি চার্জ না করায় গ্রামের কোনও বাড়িতেই এখনও বিদ্যুত্‌ সংযোগ হয়নি।

গ্রামে দ্রুত বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার দাবিতে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে একাধিক বার দাবি জানিয়েছে গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু, ফল হয়নি। এক কিলোমিটার দূরে ধানাড়া গ্রামে বিদ্যুত্‌ থাকলেও রাতের বেলায় অন্ধকার ডুবে থাকে কালীপুরডাঙ্গা। আর এরই মাঝে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের বিদ্যুত্‌ ব্যবহারের বিল হাতে পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছেন ওই গ্রামবাসীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দফতরের এক কর্মী গ্রাম এসে লক্ষ্মীদাস টুডু, দুখু হাঁসদা, সনাতন টুডু, বাবুলাল হেমব্রম, ছোটকা সরেন, শুকুরমনি হেমব্রম, লক্ষ্মী হেমব্রম, মঙ্গলি হেমব্রম ও টিকুলি মুর্মুর বাড়িতে বিদ্যুতের বিল দিয়ে যান। ন্যূনতম ১৭০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮৭ টাকা পর্যন্ত বিল এসেছে।

লক্ষ্মীদাস টুডু, সনাতন টুডুদের ক্ষোভ, “ট্রান্সফর্মার বসার পরে সাত মাস ধরে বিভিন্ন মহলে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আসছি। কিন্তু কেউই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তারই মাঝে বিদ্যুতের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাকে তামাশা ছাড়া আর কী বলা যায়!” এ দিন বিদ্যুত বণ্টন দফতরে গিয়ে বিলের নকল-সহ অভিযোগপত্র জমা করেছেন ওই নয় জন বাসিন্দা। এবং এই বিলের টাকা তাঁদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, এ দিনই ওই বাসিন্দারা বিদ্যত্‌ বণ্টন দফতরের আধিকারিক এবং বিডিওকে গ্রামে দ্রুত বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ফের আর্জিন জানিয়েছেন।

বিডিও উত্‌পলবাবু বলেন, “কালীপুরডাঙ্গায় এখনও বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেয়নি বিদ্যুত্‌ দফতর। তা সত্ত্বেও কিছু বাসিন্দাকে বিদ্যুতের বিল দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ব্লকের বিদ্যুত্‌ বণ্টন দফতরের আধিকারিককে দেখতে বলা হয়েছে।” চেলিয়ামা গ্রুপ সাপ্লাই দফতরের এসএস দেবাশিস মাজি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, বিল তৈরি করার কম্পিউটারের ডাটাবেসে সমস্যার জন্যই ভুলবশত ওই গ্রামের কিছু বাসিন্দার নামে বিল তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।” কালীপুরডাঙ্গা গ্রামে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন দেবাশিসবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

no electricity bill raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE