Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাসুদেবের গ্রামে মুনমুনের রোড-শো

তিনি যাঁকে ‘চ্যালেঞ্জার নম্বর ওয়ান’ হিসাবে মনে করেন, সেই বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়ার গ্রামেই এ বার ‘হানা’ দিলেন মুনমুন সেন!গ্রামের নাম বেড়ো। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের এই গ্রামেই বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বাসুদেববাবুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, ছাত্রজীবন। এমনকী শিক্ষকতার প্রথম দিক পর্যন্ত অনেকটা দিন বেড়োতেই কেটেছে বাঁকুড়ার ন’বারের এই সাংসদের। সেই গ্রামেই বাসুবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রীমতী দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেন সোমবার ভোট প্রচারে গিয়ে আক্রমণ শানালেন, গ্রামের উন্নয়ন হয়নি দাবি করে। বাসুদেবাবুর পাল্টা জবাব, “গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে উনি কী জানেন?”

বেড়ো গ্রামে প্রচারে বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: সুজিত মাহাতো

বেড়ো গ্রামে প্রচারে বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: সুজিত মাহাতো

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৯
Share: Save:

তিনি যাঁকে ‘চ্যালেঞ্জার নম্বর ওয়ান’ হিসাবে মনে করেন, সেই বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়ার গ্রামেই এ বার ‘হানা’ দিলেন মুনমুন সেন!

গ্রামের নাম বেড়ো। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের এই গ্রামেই বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বাসুদেববাবুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, ছাত্রজীবন। এমনকী শিক্ষকতার প্রথম দিক পর্যন্ত অনেকটা দিন বেড়োতেই কেটেছে বাঁকুড়ার ন’বারের এই সাংসদের। সেই গ্রামেই বাসুবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রীমতী দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেন সোমবার ভোট প্রচারে গিয়ে আক্রমণ শানালেন, গ্রামের উন্নয়ন হয়নি দাবি করে। বাসুদেবাবুর পাল্টা জবাব, “গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে উনি কী জানেন?”

রবিবার থেকেই রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায় প্রচার শুরু করেছেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী। রবিবার সন্ধ্যায় সাঁতুড়ি ও নিতুড়িয়ায় সভা করার পরে সোমবার রোড-শো করেছেন বাসুদেবাবুর ‘খাসতালুক’ বেড়ো গ্রামে। তারকা প্রার্থীকে দেখতে ভালই ভিড় হয়েছিল। হুড খোলা গাড়িতে চেপে পাশে রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী এবং দলের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে প্রচণ্ড রোদে রোড-শো করেন মুনমুন। রবিবারই বেড়ো গ্রামে সিপিএমের বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র কর্মিসভা করেন। ঠিক তার পরের দিনই হল তৃণমূলের প্রচার।

এ দিন প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রামে রোড-শোয়ের সময় হ্যান্ডমাইক নিয়ে বারবারই তৃণমূল প্রার্থী বলেছেন, “৩০ বছর ধরে আপনারা ভোট দিয়েছেন। কিন্তু, ৩০ বছরেও কিছু উন্নয়ন হয়নি। আপনাদের সমর্থন পেলে গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারবো। ভাল রাস্তা হবে, শিক্ষার উন্নয়ন হবে।” গ্রামের মানুষের কাছে মুনমুন আবেদন করেন, “আপনাদের সমর্থন চাইছি। নির্ভয়ে ভোট দিন। কাউকে ভয় পাবেন না।” হাজার সাতেক লোকের বসবাস বেড়ো গ্রামে। বর্ধিষ্ণু এই গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীর রোড-শো গ্রামে ঢোকার কিছু আগে বিধায়ককে ঘিরে ধরেছিলেন কিছু বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বড় গ্রাম হলেও নলবাহিত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। গরমের শুরুতেই সব নলকূপ শুকিয়ে যায়। তীব্র জলকষ্টে ভোগে গোটা গ্রাম। সিপিএমের দীর্ঘদিনের সাংসদের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগের উত্তরে পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “আমরা সবে তিন বছর হল ক্ষমতায় এসেছি। আর এই গ্রামে যাঁর বাড়ি, তিনি তিরিশ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন।”

মুনমুনকে কাছ থেকে দেখতে পেয়ে খুশি সত্যনারায়ণ দত্ত, অমর রায়, মানস চন্দ্রের মতো গ্রামবাসীরা। রোড-শো যত এগিয়েছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহিলারা ভিড় জমিয়েছেন রাস্তার পাশে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থীর দিকে হাত নাড়ছিলেন কলেজ পড়ুয়া পায়েল চক্রবর্তী। বললেন, “মুনমুন সেনকে আগে সিনেমায় দেখেছি। এ বার সামনে থেকে দেখলাম।”

তবে, এই বিষয়গুলিকে আমল দিতে নারাজ বাসুদেবাবু। এ দিন দুপুরে বাঁকুড়ার শালতোড়ায় প্রচার সেরে দলীয় কর্মীর বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার ফাঁকে ফোনে বলে দিলেন, “এ তো সিনেমার নায়িকাকে দেখার ভিড়! এর সাথে ভোটের যোগাযোগ নেই।” নিজের গ্রাম সম্পর্কে যথেষ্ট স্পর্শকাতর বাসুদেববাবু তৃণমূল প্রার্থীর এ দিনের কটাক্ষের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “বেড়োতে কতটা উন্নয়ন হয়েছে, তার উনি কী জানেন? গ্রামে দু’টি হাইস্কুল হয়েছে, যার মধ্যে একটি মেয়েদের। গ্রামের সব রাস্তা ঢালাই করা হয়েছে। স্টেশন আর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রাম পর্যন্ত পাকা রাস্তা হয়েছে। এর পরেও কী উন্নয়ন হবে?”

জলের সমস্যাও মানতে চাননি এই প্রবীণ সিপিএম নেতা। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, নিজের গ্রামেই ভাল জায়গায় নেই বাসুদেববাবু। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের ফলের পরিসংখ্যান দিয়ে বিধায়ক বলেন, “গ্রামের চার জন পঞ্চায়েত সদস্যর মধ্যে তিন জনই তৃণমূলের। গ্রাম পঞ্চায়েতও আমাদের দখলে। নিজ গ্রামে পরবাসী হচ্ছেন বাসুদেববাবু। সেটা ভোটের ফল বেরোলেই বোঝা যাবে।” সিপিএমের পাল্টা দাবি, গ্রামের উন্নয়ন যাঁর হাত দিয়ে হয়েছে, তাঁকে বিমুখ করবে না বেড়ো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE