Advertisement
E-Paper

বল কে খবর দিল, হুমকির সঙ্গে বেদম মার

(আনন্দবাজারের চিত্রসাংবাদিক)সিমেন্টের ফলকে লেখা, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে বাঁধ (পুকুর) সংস্কারে একশো দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় দু’লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের লায়েকডি গ্রামের ওই পুকুরের পাড়ে বুধবার রাতে গিয়ে দেখি, বেমালুম যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা চলছে। অথচ, এই প্রকল্পে তো মানুষ দিয়ে মাটি কাটানোর কথা! পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়ক থেকে ৪০ ফুট দূরে ওই পুকুরের পাড়ে খড় জ্বালিয়ে জনা দশেক লোক রাত সাড়ে ১০টায় বসেছিল। মুখচেনা, তৃণমূলের কর্মী। আমাকেও তারা বিলক্ষণ চেনে।

প্রদীপ মাহাতো

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৯
মার খাওয়ার পরে।

মার খাওয়ার পরে।

সিমেন্টের ফলকে লেখা, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে বাঁধ (পুকুর) সংস্কারে একশো দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় দু’লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের লায়েকডি গ্রামের ওই পুকুরের পাড়ে বুধবার রাতে গিয়ে দেখি, বেমালুম যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা চলছে। অথচ, এই প্রকল্পে তো মানুষ দিয়ে মাটি কাটানোর কথা!

পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়ক থেকে ৪০ ফুট দূরে ওই পুকুরের পাড়ে খড় জ্বালিয়ে জনা দশেক লোক রাত সাড়ে ১০টায় বসেছিল। মুখচেনা, তৃণমূলের কর্মী। আমাকেও তারা বিলক্ষণ চেনে। দু’পা এগোতেই বলে উঠল, “একশো দিনের কাজ চলছে। ছবি তুলবে?” ঘাড় নাড়তেই উড়ে এল টিপ্পনী, “তোমাদের কাগজ তো রাজ্যের ভাল কিছু দেখতে পাচ্ছে না। ছবি বেরোবে তো?’’ ওদের মুখে মদের গন্ধ।

কথা না বাড়িয়ে সবে ছবি তুলতে শুরু করেছি, তেড়ে এল জনাচারেক। বলল, ‘‘ছবি তুলতে হবে না। বুঝে গিয়েছি, উল্টো খবর করবি। দে ক্যামেরাটা।” এক হ্যাঁচকায় ক্যামেরাটা কাড়ল। বড় স্টিলের টর্চ দিয়ে সপাটে এক জন বাড়ি মারল আমার গালে। বুঝলাম, কেটে গিয়েছে জায়গাটা। টাল সামলানোর আগেই বুকে, মাথায়, পেটে ঘুষি আর লাঠির বাড়ি।

পা মচকে মাটিতে পড়ে গেলাম। গলার মাফলারটা ধরে এক জন টেনে তুলল। এলোপাথাড়ি লাথি মারতে মারতে ফের মাটিতে ফেলে দিল অন্যেরা। গালি-গালাজের বৃষ্টির সঙ্গে হুমকি, “বল, কে তোকে খবর দিয়েছে? তাকে কুচিকুচি করে কাটব। আর তোকেও এখানে মেরে মাটিতে পুঁতে দেব।”

‘সোর্স’ বলিনি। বললাম, ‘অজানা নম্বর থেকে ফোন ছিল’। বিশ্বাস করেনি ওরা। আমার চুলের মুঠি ধরে, মোবাইলের স্ক্রিনে কল-লিস্ট খুলে সামনে ধরে বলতে লাগল, “কোন নম্বর? এটা-এটা-এটা?” ঘোরের মধ্যে অপরিচিত একটা নম্বর দেখাই। সেই নম্বরে ডায়াল করে খুব একচোট গালাগালি করল ওরা। তার পরে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিল।

ডান গাল থেকে তখন রক্ত ঝরছে। ডান চোখ ফুলে ঢোল। চোখটা ধোওয়ার জন্য জল চাইতে ফের একপ্রস্ত নোংরা গালি। উপায় না দেখে পকেট থেকে ওষুধের পাতা বার করে দেখাই। বলি, ‘বাড়িতে আমার মেয়ে অসুস্থ। ওর জন্য ওষুধ নিয়ে যাচ্ছি। দরকারে ক্যামেরা, মোবাইল রেখে দাও। আমায় যেতে দাও’। তখন মারধর থামে। এক জন মুখে সামান্য জল ঢেলে দেয়।

পুলিশের কাছ থেকে পরে শুনেছি, এই সব যখন চলছে তখন জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড় করানো আমার মোটরবাইকটা টহলদার পুলিশের নজরে আসে। পরিচিত দু’-এক জন পুলিশকর্মী মোটরবাইকটা চিনতে পেরে আমার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন। তাঁদের গলা পেয়েই পালায় ওরা। বলছিল, ‘‘পুলিশ জেনে গিয়েছে।”

ওরা চলে যেতে হাতড়ে হাতড়ে পেলাম মোবাইল। ক্যামেরাটা। পুলিশই নিয়ে গেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গালে ব্যান্ডেজ পড়ল।

ওই পুকুর থেকে বড়জোর দেড়শো মিটার দূরে লক্ষণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের শেফালি মাহাতো অবাক করলেন। জানালেন, ওখানে নাকি ১০০ দিনের কাজই হচ্ছে না! তা হলে ফলকে যে লেখা রয়েছে? আমতা-আমতা করলেন প্রধান। জবাব দিলেন না। যাঁর নামে পুকুর, তাঁর পরিবারও পুকুরের মাটি কাটা নিয়ে কথা বলতে চায়নি। যদিও হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত জানিয়েছেন, একশো দিনের প্রকল্পেই ওই পুকুরে কাজ হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। পঞ্চায়েতের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী থেকে পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমারবৃহস্পতিবার যাঁর-যাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে আশ্বাস দিয়েছেন, আমার ওপরে যারা হামলা করেছে, তাদের ধরা হবে।

কাঁধে-পিঠে-পেটে ব্যথা। যন্ত্রণায় চোখটাও বুজে আসছে। কিন্তু চোখ বুজলেও স্বস্তি কই? বুধবারের রাতটা ফের চোখের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে!

pradip mahato beaten up
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy