Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ভেঙে গিয়েছে শ্রবণ যন্ত্র, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পড়ুয়ার

বাবার সামান্য রোজগারে সংসারটাই ঠিক ভাবে চলে না। কিন্তু বাড়ির আংশিক প্রতিবন্ধী মেধাবী ছেলেটির একটি শ্রবণ যন্ত্র দরকার। পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে তখন খুদেটিকে ওই যন্ত্র কিনে দিয়েছিল ব্লক প্রশাসন। কিন্তু বছর তিনেক আগে পাওয়া ওই যন্ত্রই বিকল হয়ে ঘোর বিপাকে পড়েছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্র গোপাল দাস।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৯
Share: Save:

বাবার সামান্য রোজগারে সংসারটাই ঠিক ভাবে চলে না। কিন্তু বাড়ির আংশিক প্রতিবন্ধী মেধাবী ছেলেটির একটি শ্রবণ যন্ত্র দরকার। পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে তখন খুদেটিকে ওই যন্ত্র কিনে দিয়েছিল ব্লক প্রশাসন। কিন্তু বছর তিনেক আগে পাওয়া ওই যন্ত্রই বিকল হয়ে ঘোর বিপাকে পড়েছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্র গোপাল দাস। অভিযোগ, এ বার আর বহু আবেদন করেও প্রশাসনের সাড়া মেলেনি। শেষমেশ তাই নিজের জন্য শ্রবণ যন্ত্র চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চিঠি পাঠাল লোকপাড়া হাইস্কুলের ওই ছাত্র।

ছোটবেলা থেকে দু’টি কানেই শুনতে অসুবিধা হতো ময়ূরেশ্বর থানার তেরাতরী গ্রামের চন্দন দাসের ছেলের। এতদিন মা গৌরীদেবী ছেলেকে কাছে বসিয়ে পড়াশোনায় সাহায্য করায় খুব একটা সমস্যা হয়নি। কিন্তু প্রাথমিকের গণ্ডি ছাড়ানোর পর সেই সাহায্য আর করতে পারেন না তিনি। এর ফলে ছেলের পঠনপাঠন নিয়ে চিন্তায় পড়েন বাবা চন্দন দাস। কারণ কানে শুনতে না পাওয়ায় ক্লাসে কিংবা প্রাইভেট টিউটরের কাছে শুধু শুধু বসে থাকতে হত ছেলেকে। এর ফলে ক্রমাগত পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছিল সে। চিকিত্‌সকেরা জানিয়েছিলেন, কানে শোনার একটি যন্ত্র হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু ওই যন্ত্র কেনার সার্মথ্য কোথায় হতদরিদ্র চন্দন দাসের! কেন না এক চিলতে কাদাছিটের চালা ঘরে স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে বাস বিপিএলভুক্ত চন্দনবাবুর। বর্ধমানের এক তেলকলের সামান্য বেতনে তাঁকে ৪ সদস্যের সংসার-সহ দুই ছেলের পড়াশোনা কার্যত জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হয়। তাই ছেলের কানে শোনার যন্ত্র কেনার চিন্তায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর মাথায়। তখন শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে প্রশাসনের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেন। সে প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। চন্দনবাবুর আবেদনে সাড়া দিয়ে কানে শোনার যন্ত্র কেনার জন্য অনুদান মঞ্জুর করেন সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের তত্‌কালীন বিডিও বাবুলাল মাহাতো।

তখনকার মতো দুঃচিন্তা মুক্ত হন চন্দনবাবু। কিন্তু ফের তাঁকে একই দুঃচিন্তায় পড়তে হয়েছে। মাস খানেক স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় কান থেকে খুলে পড়ে গিয়ে যন্ত্রটি সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফের কিনতে হবে যন্ত্র। আবার আকাশ ভেঙে পড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডল এবং বিডিও-র কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন চন্দনবাবু। তিনি বলেন, “সবাই ‘দেখব-দেখছি’ বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু আমি কাউকে বোঝাতে পারছি না। অন্য ৫টা অনুদানের মতো কানে শোনার যন্ত্রের জন্য অনির্দ্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করা এক নয়। সোমবার থেকেই স্কুল খুলেছে। ছেলেকে শুধু শুধু বসে থাকতে হবে।”

বাবা-মা’য়ের এহেন দুঃচিন্তা দেখে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডাকে চিঠি পাঠিয়েছে গোপাল। চিঠিতে সে লিখেছে, ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, প্রণাম নেবেন। আমি দু’কানে শুনতে পাই না। তাই স্কুলের পড়া করতে পারি না। ডাক্তাররা বলেছেন কানে শোনার যন্ত্র কিনলে আমি শুনতে পাব। পড়াশোনাও করতে পারব। কিন্তু আমার বাবা খুব গরিব। ওই যন্ত্র কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। অনেক জায়গায় সাহায্য চেয়েও পাননি। সেই জন্য বাবা-মা সব সময় দুঃচিন্তায় থাকেন। শুনেছি ছাত্র-যুবকদের প্রতি সংবেদনশীল। তাই শুধু আমার জন্যই নয়, আমার বাবা-মা’য়ের দুঃচিন্তা দূর করতে কানে শোনার একটি যন্ত্রের ব্যবস্থা করে বাধিত করবেন।’

ওই ছাত্রের দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে লোকপাড়া হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রভাকর মণ্ডল বলেন, “কানে শোনার যন্ত্র কিনে দেওয়ার সামর্থ্য স্কুলের নেই। তাই বিডিও-র কাছে সুপারিশ জানানো হয়েছে।” বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “ওই স্কুল ছাত্রের বিষয়ে আবেদন পেয়েছি। পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে কী করা যায় দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE