Advertisement
E-Paper

রাস্তা ভাঙছে, বন্ধ হচ্ছে পরের পর বাস

সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মিত জেলার বেশ কিছু রাস্তা। পিচ, পাথর উঠে গিয়ে খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। একে একে বন্ধ হয়ে যাছে ওই সব রুটের বাস। তবুও প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, বার বার আবেদন জানানোর পরেও ওই সব রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০১:০৮
লাভপুরের গোপালপুর-সাসপুর ও ময়ূরেশ্বরের বেলিয়া-বহড়া রাস্তার ছবি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

লাভপুরের গোপালপুর-সাসপুর ও ময়ূরেশ্বরের বেলিয়া-বহড়া রাস্তার ছবি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মিত জেলার বেশ কিছু রাস্তা। পিচ, পাথর উঠে গিয়ে খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। একে একে বন্ধ হয়ে যাছে ওই সব রুটের বাস। তবুও প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, বার বার আবেদন জানানোর পরেও ওই সব রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান অবশ্য বলছেন, “রাস্তাগুলির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিচ্ছি। সেতুটির ব্যাপারেও কী করা যায় দেখছি।”

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলা পরিষদের তত্বাবধানে ময়ূরেশ্বরের বহড়া থেকে বেলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি হয়। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যেই পিচ পাথর উঠে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে রাস্তাটি। বর্তমানে খানেখন্দে ভরা রাস্তাটি কার্যত মরন ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মধ্যে জোড়াতালি দেওয়া হলেও, রাস্তাটি সার্বিক সংস্কার হইনি বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। অথচ যোগাযোগের দিক থেকে রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক দিকে সাঁইথিয়া-রামনগর, অন্য দিকে মুর্শিদাবাদের কুখুড়াজল-বড়ঞার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তাটিতে এক সময়ে ১০-১২টি বাস যাতায়ত করত। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে, তিন চারটি বাস ইতি মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু বাসের চলাচলও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে একই কারণে।

লোকপাড়া এলাকার এক বাস মালিক অতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, বাস চালক পপি রায় বলেন, “রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে যন্ত্রাংশ ভেঙে বাস বিকল হয়ে পড়ে। আবার খানাখন্দ এড়িয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কান্দি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছনো যায় না। সে জন্য জরিমানা দিতে হয়। অথচ রাস্তাটি সংস্কারের ব্যাপারে কী বীরভূম কী মুর্শিদাবাদ প্রশাসন, কারও কোনও হেলদোল নেই। অথচ ওই রাস্তাটি দিয়েই বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ দুই জেলার মানুষকেই স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, হাটবাজার-সহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে হয়। তাদের চরম অসুবিধায় পড়তে হয়।” মুর্শিদাবাদের সূর্যবাটির আদিত্য সুধা ঘোষ, বীরভূমের নবগ্রামের সাগর মণ্ডলদের ক্ষোভ, “নানা প্রয়োজনে আমাদের দিনে একাধিকবার ওই রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য গায়ে জ্বর আসে। আথচ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কোনও হেলদোলই নেই।” সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েও সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কল্যাণি দাস দাবি করেন, “সত্যি রাস্তাটির শোচনীয় অবস্থা। আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর অন্যান্য বিষয়ের মতো রাস্তাঘাটের উন্নয়নেও গুরুত্ব দিয়েছি। ওই রাস্তাটি সংস্কারের বিষয়ে ইতিমধ্যেই জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”

একই দুরবস্থা লাভপুরের তরুলিয়া হাট থেকে গোপালপুর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মিত রাস্তাটির। ২০০২ সালে ওই রাস্তাটি অন্য একটি রাস্তার সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রায় সম পরিমাণ টাকায় নির্মিত হয়েছিল জেলা পরিষদের তত্বাবধানে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ওই রাস্তাটিও বেহাল হয়ে পড়েছে। অথচ ওই রাস্তার সঙ্গেই একদিকে সিউড়ি-কাটোয়া, অন্য দিকে সাঁইথিয়া-মারুত রাস্তা সংযোগ রয়েছে। কিন্তু ৬ কিলোমিটার ওই রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য সেই যোগসূত্রও ছিন্ন হতে বসেছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। ওই রুটে অনুমোদিত তিনটি বাসের মধ্যে ইতিমধ্যেই একটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লায়েকপুরের জয়ন্ত মণ্ডল, ভালকুটির প্রভাত মণ্ডল বলেন, “সাইকেল, মোটরবাইক নিয়েও ওই রাস্তায় যাতায়ত করা যায়া না। বাসে যাতায়ত করতে হয় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে। কিন্তু দিন কয়েকের মধ্যেই রাস্তার অবস্থা ফের বেহাল হয়ে পড়ে।”

শুধু রাস্তা বেহাল নয়, ভালাস-গোপালপুরের মাঝে ওই রাস্তায় সেচ খালের ওপর নির্মিত একটি সেতুরও শোচনীয় অবস্থা। যে কোনও সময়ে সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা। সংশ্লিষ্ট লাভপুর পঞ্চায়ত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কাবেরিকা গুঁই বলেন, “রাস্তা এবং সেতু সংস্কারের ব্যাপারে আমরা জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।” পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান বলেন, “সেতুটির ব্যাপারেও কী করা যায় দেখছি।”

damaged road gram sadak yojana prime minister gram sadak yojana mayureswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy