নিম্মমানের কাঁচামাল ব্যবহারের অভিযোগ তুলে একটি রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল মানবাজার ১ ব্লকের ধানাড়া পঞ্চায়েত এলাকায়। দু’সপ্তাহ কাজ চলার পর সোমবার থেকে হরিহরপুর মধ্যশিক্ষা কেন্দ্র থেকে নুনানি গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজ থমকে গিয়েছে। অভিযোগ তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর বাধাতেই ওই কাজ বন্ধ হয়েছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাস্তায় ব্যবহার করা পাথরের মান খারাপ। ব্লক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ওই রাস্তা করার জন্য ৪৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। স্থানীয় এক ঠিকাদার গত ৮ মার্চ থেকে কাজ শুরু করেন। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “রাস্তার কাজে পাথরের মান নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশ আপত্তি জানিয়েছেন। সোমবার আমি ঘটনাস্থলে যাই। বাসিন্দাদের দাবি, তিন গাড়ি নিম্মমানের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদারকে ওই পাথর সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।” তিনি জানান, বাকি পাথর দিয়ে কাজ চালাতে বলা হয়েছে।
তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, বাসিন্দাদের মধ্যে স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা ওই রাস্তা থেকে সমস্ত পাথর তুলে নেওয়ার দাবি জানান। তাঁরা বিডিও কাছে ওই দাবি জানান। তবে বিডিও ওই তিন গাড়ি ছাড়া বাকি পাথর ঠিক রয়েছে বলে তাঁদের জানান। সেই পাথর দিয়ে কাজ করতে হবে বলেও তিনি ওই বাসিন্দাদের জানান। কিন্তু কাজ আর হয়নি।
ঠিকাদার সোমনাথ পুরোহিতের দাবি, “সমস্ত নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে বুঝতে পারছি না।” সোমবারই তিনি বিডিও-কে তিনি লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন, তাঁকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এরপর থেকেই ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “ঘটনার কথা শুনলাম। ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ যাতে আটকে না থাকে, সে জন্য ওই এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আমি কথা বলব।”
যদিও ধানাড়া অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি রবি সহিসের দাবি, “দলীয় সূত্রে জেনেছি ওই ঠিকাদার নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করছিলেন। কাজও ভাল হচ্ছিল না। তিনি ধু্লাবালি দিয়ে কাজ সারছিলেন।” ধানাড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান অঞ্জলি মুর্মু বলেন, “শুনেছি রাস্তার কাজ খারাপ হচ্ছিল। তাই বাসিন্দাদের একাংশ নাকি আপত্তি জানিয়েছেন।” দলের ধানাড়া অঞ্চলের যুব সভাপতি সঞ্জয় বাউরি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারাই রাস্তায় কাজের মান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ওঁরা গুছিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না বলে পাশে থেকে দাবিগুলি প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র।”
মানবাজার ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর দাবি, “রাস্তার কাজ বন্ধে দলের কোনও ভূমিকা নেই। শুনেছি ওই এলাকার বাসিন্দারা পাথরের মান খারাপ বলে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।”
তবে বিডিও দাবি করেছেন, “কিছু লোকের অন্যায় দাবি মেনে ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ করা যায় না। ওই রাস্তায় একটি হাইস্কুল রয়েছে। বর্ষায় ওই রাস্তায় যাতায়াত করা যায় না। বর্ষার আগে রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না হলে ভোগান্তি বাড়বে।” তিনি জানান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিরোধী দলনেতা-সহ সবাই এই কাজ দ্রুত শেষ করতে চান। তিনি নিজেও কাজের মান পরীক্ষা করেছেন। সব নিয়ম মেনেই হচ্ছে বলে বিডিও-র দাবি। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রয়োজন হলে কড়া হাতে ওই রাস্তা সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে।